ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে অংশগ্রহণ
নির্বাচনের আগে মার্জনা পাবেন বিএনপির বহিষ্কৃতরা
প্রকাশ: সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩, ২:৪১ এএম  (ভিজিট : ২১৫)
শর্ত মেনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাদের। ইতিমধ্যে বহিষ্কৃতরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্ষমার আবেদন করেছেন।

বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে তারা ভুল বুঝে ক্ষমা চাইলে তা বিবেচনা করা হবে। শর্তসাপেক্ষে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু এখনই নয়। কারণ এখনই বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করলে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ভাঙতে আশকারা পাবেন অন্যরা। বাকি সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে অনেকেই উৎসাহী হবেন। অন্যদিকে বহিষ্কারের খড়গ মাথায় নিয়েও বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোটের মাঠে আছেন দুই ডজন কাউন্সিলর প্রার্থী।

গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ১২টি সাধারণ ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা। সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কেয়া শারমিন নামের একজন বিএনপির বহিষ্কৃত নেত্রী জয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন ইতিমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে ক্ষমার আবেদন জানিয়েছেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে গাজীপুর সিটির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ফয়সাল আহমাদ সরকার, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে শাহীন আলম, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ছবদের হাসান, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মো. মাহবুবুর রশীদ খান শিপু, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে মো. মজিবুর রহমান, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে মো. হান্নান মিয়া হান্নু, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে হাসান আজমল ভূঁইয়া, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে মো. আনোয়ার হোসেন, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে এম কে নজরুল ইসলাম বিকি, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে সুলতান উদ্দিন আহমেদ, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে মো. সফি উদ্দিন এবং ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে মো. আবুল হাশেম কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। 

দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে যাওয়ায় তারাসহ ২৯ জন নেতাকে ভোটের ১০ দিন আগে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। দল থেকে এমন কঠিন শাস্তি পাওয়ার পরও তারা দমে যাননি। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারা ভোটের মাঠে থেকে যান। অর্ধেকের মতো জয়ীও হয়েছেন। বিএনপি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তখন সাধারণ ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ৭ জন। আর সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত একজন কাউন্সিলর বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার তাদের ফল আরও ভালো। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। এমন পরিস্থিতিতে দলের সহায়তা ছাড়াই এবার ১১ জনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়াকে ‘খুবই ভালো’ ফল মনে করছেন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও গাজীপুর সদর থানা বিএনপির সভাপতি হাসান আজমল ভূঁইয়া সময়ের আলোকে বলেন, বহিষ্কারাদেশ পাওয়ার পর নির্বাচন থেকে আমি নিজেকে সরিয়ে নিই। তবুও জনগণ আমাকে জয়ী করেছে। আমি ইতিমধ্যে ক্ষমা চেয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছি। আশা করি, আমাকে দল ফিরিয়ে নেবে। 

সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কেয়া শারমিন সময়ের আলোকে বলেন, আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে এটা আমি ফেসবুকে দেখেছি। কিন্তু আজও কোনো চিঠি পাইনি। এই বহিষ্কার সাংগঠনিকভাবে হয়নি বলেও মনে করেন তিনি। 

তবে জানান, দলের জয়ী কাউন্সিলররা একসঙ্গে বসে কেন্দ্রের কাছে তৃণমূলের বাস্তবতা তুলে ধরে আবেদন করবেন। গাজীপুর সদর থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হান্নান মিয়া হান্নু ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। এবারও তিনি জিতেছেন। 

হান্নু বলেন, দল আমাদের ছাড়লেও আমরা দলকে ছাড়তে পারব না। সেই ছোটকাল থেকে বিএনপি করেছি। কত মামলা-হামলা। তবুও রাজপথ থেকে দমে যাইনি। মানুষ ভালোবেসে সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে আমাকে কাউন্সিলর করেছে। ভুল স্বীকার করে চিঠি দেব। দলের কাছে অনুরোধ যাতে আমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়। একজন কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। আশা করি, দল আমাদের কাজে লাগাবে। কারণ আমরা জয়ী। আমাদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষ আছে। এটা দলের একটা কৌশলও হতে পারে। আর কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ সময়ের আলোকে বলেন, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন কিংবা নিচ্ছেন, তাদের দল বহিষ্কার করেছে। তাদের বিষয়ে দল নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। জয়ী কাউন্সিলরদের এখনই ফিরিয়ে নেওয়া হবে না। 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নীতিনির্ধারক জানান, ভুল স্বীকার করলে তাদের মার্জনা করা হবে। তবে এখন নয়। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে হয়তো নতুন সিদ্ধান্ত আসবে।

অন্যদিকে গাজীপুরে দলের এমন কঠিন সিদ্ধান্তের দৃষ্টান্তও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ১৭ নেতানেত্রীর প্রার্থী হওয়াকে ঠেকাতে পারেনি। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়া এই নেতানেত্রীদের মধ্যে ৭ জন বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। অন্যরা ওয়ার্ড বিএনপির পদধারীসহ দলটির সাবেক নেতৃবৃন্দ। এই প্রার্থীদের মধ্যে দুজন বর্তমানে কাউন্সিলর হিসেবে আছেন আর অধিকাংশই নিজ নিজ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। কাউন্সিলর প্রার্থী ও বরিশাল মহানগর বিএনপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান টিপু বলেন, তৃণমূলে আমরা কাউন্সিলর না থাকলে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের সহযোগিতা পায় না। তারা সরকারের কোনো দফতরে যেতে পারে না। তাদের কথা বলার জায়গা থাকে না। ফলে তাদের জন্যই আমাকে নির্বাচন করতে হবে।

এ ছাড়া দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১২ নেতাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের কেউই এখন পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে যাননি। উল্টো বহিষ্কৃত হওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।


আরও সংবাদ   বিষয়:  বিএনপি   বহিষ্কৃত  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close