প্রকাশ: সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩, ৪:৩৬ এএম (ভিজিট : ৩১৩)
চিত্রা নদীর তীরবর্তী দো-আঁশ মাটির সহজলভ্যতা এবং পরিবহনের সুবিধার্থে ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় মৃৎশিল্প গড়ে উঠলেও বর্তমানে তার কদর হারাতে বসেছে। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাল সম্প্রদায়ের ৪০ থেকে ৫০টি পরিবার এখনও তাদের পূর্বপুরুষের এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করছে। শিবনগরের দীপালি পাল, নিশ্চন্তপুরের জীবন পাল, অনুপম পুরের সৌরভদের মতো অনেকেই এখনও কোনোমতে তাদের এই পেশা চালিয়ে যাচ্ছে।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এবং মেলাগুলোতে এই ধরনের সামগ্রীর চাহিদা ছিল ব্যাপক। মেলা থেকে মাটির খেলনা কেনেনি এমন মানুষ পাওয়া কষ্ট। ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা মূল্যের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তবে নিম্নমানের প্লাস্টিক, মেলামাইন আর সিলভারের ব্যবহার মারাত্মক আকারে বেড়ে যাওয়াই এই শিল্প আজ প্রায় ধ্বংসের পথে। মায়ের পাশে বসে শখের বশে মাটি দিয়ে বানানো পাখি, ফল, খেলনা হাঁড়ি-পাতিল দিয়েই হাতেখড়ি হয় দীপালি পালের। তিনি বলেন, বাবার এ ব্যাবসা মন্দ ছিল না। মা-বাবাকে দেখেছি একসঙ্গেই মাটির এই তৈজসপত্র বানাতে।
পারিবারিকভাবে দীপালির বিয়ে হয় সুদীপ পালের সঙ্গে। শ্বশুরালয়েও সেই একই কাজ করছেন কালীগঞ্জের গ্রাম শিবনগরে। রীতিমতো তারা এখন বানাচ্ছেন ফুলের টব, ফুলদানি, মাটির কলস, হাঁড়ি-পাতিলসহ নানা রকমের খেলনা। কালীগঞ্জের শিবনগর, নিশ্চন্তপুর, অনুপমপুর এই এলাকাগুলোতে পাল বংশের লোকের বসবাস ছিল বেশি।
মৃৎশিল্পের তৈজসপত্র বিক্রেতা হাসিবুল হাসান পিকলু জানান, মৃৎশিল্পের তৈরি ব্যবহার্য পণ্যের এখন আর তেমন চাহিদা বাজারে নেই। শৌখিনতার বশে কেউ যদি কিছু ক্রয় করে সেদিন সেটাই তার শুধু বিক্রি। তার সংগ্রহে দেখা যায় দোকানে ৫০টিরও বেশি মাটির পণ্য দৃশ্যমান। এগুলো সংগ্রহ করেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।
বর্তমানে এই পেশায় নিয়োজিত কর্মীরাই শেষ প্রজন্ম, যদি না তারা তাদের পূর্বপুরুষের জ্ঞানের সঙ্গে নতুন জ্ঞানের সন্নিবেশ ঘটান, বাজারজাতকরণের নতুন আইডিয়াতে যদি নজর না দেন, তা হলে এই পেশা হারিয়ে যেতে বেশিদিন লাগবে না। কেননা তাদের সন্তানাদি কেউ আর এই পেশায় কাজ করতে আগ্রহী নয়। সরকারি সহায়তাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব মৃতপ্রায় লোকজ এই মৃৎশিল্পকে।