ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা সোমবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৯ আশ্বিন ১৪৩০
ই-পেপার সোমবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin-Mohammad-City-(Online).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/SA-Live-Update.jpg
যাচাই কার্ডেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি
এমএকে জিলানী
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩, ৭:৩৭ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 1019

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) বা জাতীয়তা যাচাইপত্র দিয়ে প্রত্যাববাসন শুরুর প্রস্তুতি চলছে। এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করছে চীন এবং জাতিসংঘ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এনভিসির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নেওয়া মিয়ানমারের একটা ফাঁদ। গত ৪০-৫০ বছর ধরে মিয়ানমার এমন ফাঁদ পেতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে খেলছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রত্যাবাসন টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন তারা।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘ ঢাকা কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম) এবং মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত একজন কূটনীতিক সময়ের আলোকে বলেন, বৈঠকে প্রত্যাবাসন শুরু নিয়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নেতিবাচক কিছু বলা হয়নি। বলা হয়েছে, প্রত্যাবাসন সফল করতে দুই পক্ষ একসঙ্গে কাজ করবে এবং জাতিসংঘ এই ইস্যুতে সহযোগিতা করবে। মিয়ানমারে যাওয়ার পর রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ইস্যুতে নেপিডোর জাতিসংঘ সেল দেখভাল করবে।

ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, চীন এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করছে। চীন চাচ্ছে এখনই প্রত্যাবাসন শুরু করতে। অতিসম্প্রতি ঢাকায় সফররত চীনের ভাইস মিনিস্টার ও প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করতে পরামর্শ দিয়েছেন। 

এদিকে পাইলট প্রত্যাবাসন শুরু করতে প্রথম ব্যাচের ১১৭৬ জন রোহিঙ্গা সদস্যের মধ্যে প্রতিদিন ৩০০ জন করে প্রত্যাবাসন শুরু করতে সম্মত হয় মিয়ানমার। প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা গড়তে গত ৫ মে একটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল কক্সবাজার থেকে রাখাইন সফরে নিয়ে যাওয়া হয়। সরেজমিন রাখাইন সফর শেষে ফিরে এসে রোহিঙ্গারা তাদের অধিকার বিষয়ে যেসব অস্পষ্টতা উল্লেখ করেছেন তা এরই মধ্যে মিয়ানমারকে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর গত ২৫ মে মিয়ানমার থেকে ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে একাধিক রোহিঙ্গা প্রতিনিধি জানান, তাদের নাগরিকত্ব না দিলে তারা ফিরবে না। বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রথমে এনভিসি কার্ড দেওয়া হবে, তারপর নাগরিকত্ব সনদ দেওয়া হবে। 

ওই বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মাইনুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সবাইকে জানিয়েই এই প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। কাজেই এতে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো চাপ নেই।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এনভিসি কার্ডের মাধ্যমে যারা মিয়ানমার যেতে চায় তাদের নিয়ে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি চলছে, যা শুরু হতে মধ্য জুন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ঢাকা চায়, রোহিঙ্গারা দ্রুত তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাক। এ ক্ষেত্রে এনভিসির মাধ্যমে ফিরতে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহ করছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের শিবির থেকে নেওয়ার পর নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক সব বিষয় দেখার দায়িত্ব মিয়ানমারের এবং রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক। তাই এ প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছায় যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমার যেতে রাজি হবে তারাই যাবে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে পাইলট প্রকল্প কবে নাগাদ শুরু হতে পারে- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, তা আমরা বলতে পারব না। এর আগে মিয়ানমার দুইবার তারিখ নির্ধারণ করেছে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে কিন্তু তা কোনো কাজে আসেনি। মিয়ানমারের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব আছে, না হলে এতদিন শুরু হয়ে যেত। প্রত্যাবাসন ইস্যুতে চীন কী আশা দিয়েছে- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক ভালো। তাই আমাদের পক্ষ হয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে চীন, আলাপ করছে। তারা বোঝে আমরা রোহিঙ্গাদের বেশি দিন রাখতে পারব না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে চীনের কাছ থেকে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা পাওয়া যায়নি।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারে এখনও অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়নি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, অনেকেই অনেক কিছু বলে। তারা নিয়ে যাক। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, যারা রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল দিত, তারা টাকা-পয়সা কমিয়ে দিয়েছে। অনেকে অনেক বেশি কমিয়ে দিয়েছে। আগে যুক্তরাজ্য ১২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিত কিন্তু এ বছরে তারা মাত্র ৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। প্রতি বছর রোহিঙ্গাদের পেছনে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করতে হচ্ছে আমাদের। এ ছাড়াও অবকাঠামো বানাতে হয়েছে তাদের জন্য।

মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক সময়ের আলোকে বলেন, এনভিসি কার্ডের মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হলে তা টেকসই হবে না। যারা যাবে তারা কিছু দিন পর আবার ফিরে আসবে। এনভিসি প্রক্রিয়া মিয়ানমারের ৪০-৫০ বছরের একটি পুরোনো ফাঁদ। আমাদের দেশে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে সহজেই যেমন এনআইডি কার্ড পাওয়া যায়, মিয়ানমারে কিন্তু বিষয়টা তেমন নয়। মিয়ানমারে এনভিসি কার্ড দিয়ে নাগরিকত্ব সনদ পাওয়া যায় না। এর আগে ২০১২ সালেও মিয়ানমার এনভিসি দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করেছিল। কিন্তু তারা এখনও নাগরিকত্ব পায়নি। মূলত প্রত্যাবাসন শুরুর আগে মিয়ানমারের শর্তগুলো জানা প্রয়োজন। আর নাগরিকত্ব না দিলে প্রত্যাবাসন কখনোই টেকসই হবে না।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, বাংলাদেশে এত পরিমাণ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে যে সেখানে ১০০০ রোহিঙ্গা দিয়ে পাইলট প্রত্যবাসন শুরু হতে পারে না, এই ক্ষেত্রে অন্তত অর্ধেক রোহিঙ্গা দিয়ে শুরু হতে পারে। আসলে এটা লোক দেখানে একটা প্রক্রিয়া। তারপরও এটা টেকসই হবে না। যে প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি চলছে তা আই ওয়াশের মতো মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ কমাতে মিয়ানমার এসব করে দেখাচ্ছে। 

মিয়ানমার সরকার ও দেশটির জান্তা বাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন এবং নীপিড়ন সইতে না পেরে জীবন বাঁচাতে ২০১৭ সালের আগস্টে কমবেশি সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের একাধিক আশ্রয়শিবিরে সাময়িক আশ্রয় নেয়। তার আগেও মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা একই কারণে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। সবমিলে বর্তমানে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরগুলোতে কমবেশি সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রয়েছে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com