প্রকাশ: বুধবার, ৩১ মে, ২০২৩, ৬:০৭ এএম আপডেট: ০৩.০৬.২০২৩ ৬:৩৩ এএম | অনলাইন সংস্করণ Count : 631
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫০ হাজারের কাছাকাছি ভোট পাওয়ার পর মনোবল বেড়েছে হাতপাখার। হাতপাখা প্রতীক নিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লড়াই করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গাজীপুরে মোটামুটি সন্তোষজনক ভোট পাওয়ার পর এবার তাদের বড় চোখ বরিশাল সিটিতে। দায়িত্বশীল নেতারা জানান, নিজেদের ভোটব্যাংক থাকায় তাদের সব মনোযোগ ও বিনিয়োগ বরিশালে। ভোটে দলের শক্তিশালী প্রার্থী আছেন। তাই সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন তারা। জয়ের ব্যাপারেও অনেকটা আশাবাদী। কারণ, বিএনপিহীন মাঠে তাদের প্রতীক হাতপাখাই হবে বরিশালে নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।
মূলত চরমোনাই পীরের এ দলটি সম্প্রতি কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে চোখে পড়ার মতো ভোট পাচ্ছে। সবশেষ রংপুর সিটি নির্বাচনে প্রায় ৫০ হাজার ভোট পেয়ে আলোচনায় আসে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। কয়েক দিন আগে দেশের বৃহত্তম সিটি করপোরেশন গাজীপুরে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী তৃতীয় অবস্থান ধরে রাখেন। এখানে ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট পান হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান। পেছনে ফেলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনিকে।
তাদের চেয়ে হাতপাখা ভোটে বেশ এগিয়ে। শতকরা হিসেবে প্রায় ৯ শতাংশ ভোট পায় হাতপাখা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদের ভোট ছিল ২৪ হাজারের মতো, যা এবার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য ইসলামী দলগুলো ভোটের মাঠে না থাকায় সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন। সব নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে। জামায়াতে ইসলামীসহ বিএনপির কিছু অংশের ভোট আদায় করে নিচ্ছে হাতপাখা। ভোটের প্রচারণায় তারা ইসলামকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের সহানুভূতি ও সমর্থন আদায় করছে।
ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া উপ-কমিটির সহকারী সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম কবির সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য হাতপাখার দাওয়াত সব মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়া, যা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে বড় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি। ইসলামী দল মানেই রাজাকার নয়-এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করছি। আমরা বরাবরই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। আমাদের লড়াই সমাজের বৈষম্যরোধ ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য।
এদিকে গত ২৬ মে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রচারণায় প্রথম দিনে মাঠে নেমেছেন ২ হাজার ১০০ নারী কর্মী। সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে ৭০ জন করে দলভুক্ত হয়ে একযোগে প্রচারণা শুরু করেছেন তারা। হাতপাখার নির্বাচন পরিচালনায় গণমাধ্যম সমন্বয় কমিটির সদস্য কেএম শরিয়তউল্লাহ সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের ৩০টি ওয়ার্ডে ১০টি করে টিম কাজ করছে। প্রতি টিমে ১৫ জনের মতো কর্মী-সমর্থক আছেন। তারা ঘরে ঘরে গিয়ে হাতপাখার কথা পৌঁছে দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও কয়েক দিন পর মাঠে নামবেন। আশা করছি, আমাদের প্রার্থী জয়ী হবে। কারণ এবার হাতপাখার প্রার্থী হেভিওয়েট। তিনি আরও বলেন, মানুষের ধারণা, চরমোনাই পীরের হাতে যদি শাসন থাকে তা হলে হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনব্যবস্থার মতো সুশাসন নিশ্চিত হবে। এ জন্যই মানুষ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীকে ভোট দেবে।
সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের নিজস্ব ভোটব্যাংক থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওই বছর বরিশাল-৫ (সিটি করপোরেশন-সদর) আসনে ২৭ হাজারের বেশি ভোট পায় দলটি। ওই আসনে সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন মুফতি ফয়জুল করিম। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব আসনে প্রার্থী দিয়ে আলোচনায় আসে দলটি। ভোটগ্রহণের দিন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফল বর্জনের ঘোষণা দিলেও সারা দেশে দলটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৩ ভোট পায়। এরপর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা ভালো ভোট পান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির। তার বাড়ি বরিশালে। তিনি রেজাউল করিমের মেজভাই। ফয়জুল করিম বলেন, বরিশাল আমাদের প্রাণের শহর। এই শহর থেকেই দলের গোড়াপত্তন। আমি মেয়র হতে চাই না, আমি বরিশালবাসীর খাদেম হতে চাই। গণসংযোগে মানুষ যেভাবে আমাকে আশ^স্ত করছে তাতে আমার মনে হচ্ছে মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হব। কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি কিংবা কে জাতীয় পার্টি সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়, বরিশালের সব ভোটারই আমার দাওয়াতের আওতাভুক্ত। আমি সবার কাছেই হাতপাখার দাওয়াত নিয়ে হাজির হব এবং নগরবাসীকে ভোটের দিন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে হাতপাখায় ভোট দেওয়ার অনুরোধ করব।