অসংখ্য আবেদন করেও সরকারি চাকরি মেলেনি। শেষ বয়সসীমাও। তাই এবার নিজের সব একাডেমিক সার্টিফিকেট পুড়িয়েছেন ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুস সালাম। তবে চাকরি না পেলেও বেকার নয় তিনি। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা রয়েছে তার।
মঙ্গলবার (৩০ মে) রাতে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর শহরে একটি রেস্টুরেন্টের ভেতর সার্টিফিকেটগুলো আগুনে পোড়ান সালাম। পরে সে ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।
মোহনগঞ্জ পৌর শহরের দেওথান গ্রামের শামছুর রহমানের ছেলে আব্দুস সালাম। শহরের স্টেশন রোডে ‘কুটুম বাড়ি’ নামে তার একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
আব্দুস সালাম জানান, মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ময়মনসিংহের আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ঢাকা কলেজ থেকে ২০১৬ সালে দর্শন শাস্ত্রে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
পরে এনএসআই, রেলওয়ে ও পুলিশের এসআইসহ বিভিন্ন চাকরিতে আবেদন করেও চাকরি হয়নি। শেষে হতাশ হয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন।
তিনি বলেন, স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছি, রেজাল্টও ভালো, কিন্তু অসংখ্য আবেদন করেও চাকরি হয়নি। অথচ লবিং-ঘুষে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরাও চাকরি পেয়েছে। এখন আমার বয়স ৩৬ বছর। সরকারি-বেসরকারি কোনো চাকরিতেই আর আবেদনের সময় নেই। অকেজো এই সার্টিফিকেট তাই পুড়িয়ে দিলাম। সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানাই। এতে আমার না হোক পরবর্তী প্রজন্ম উপকৃত হবে। তাদের হয়তো এভাবে হতাশায় আর সার্টিফিকেট পুড়িয়ে দিতে হবে না।
বয়সসীমা সবার জন্য না বাড়িয়ে সার্টিফিকেট পোড়ানোর কারণে ইডেন কলেজের ছাত্রী মুক্তাকে চাকরি দেওয়া ঠিক হয়নি উল্লেখ করে সালাম বলেন, এটা মন্ত্রী মহোদয় ঠিক করেননি। একজনের জন্য আলাদা নিয়ম হতে পারে না। সবার জন্য চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো দরকার। তাহলে সবাই এই সুযোগটা পাবে।
মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, এভাবে সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলা ঠিক নয়। পড়াশোনা আসলে চাকরি পাওয়ার জন্য নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য। এ জ্ঞান জীবনের সব ক্ষেত্রেই কাজে লাগবে। সবার তো চাকরি হয় না। তাই চাকরির চেষ্টার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। তাহলে এই হতাশাগুলো আর থাকবে না।
সম্প্রতি সরকারি ইডেন কলেজের ইডেন কলেজের ছাত্রী মুক্তা সুলতানা সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলার পর সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে তার চাকরি মেলে। কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার বনগ্রামের এই তরুণী ২০১৯ সালে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হয়। সেই তরুণীকে এবার চাকরি দিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তবে মুক্তা ও সালামের মত সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলে দেন নীলফামারীর বাদশা মিয়াও। ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এমন কাণ্ড ঘটনা। ঐ সময়ে এ ঘটনা তেমন সাড়া না ফেললেও মুক্তা ও সালামের কাণ্ডে বাদশা মিয়ার ঘটনাও নতুন করে আলোচনায় আসে। ২০১৪ সালে তিনি নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক পাস করেন। তবে অর্থের অভাবে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেননি। এর আগে ২০০৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগে দাখিল, ২০০৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে আলিম পাস করেন। প্রায় ২০টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পরও চাকরি পাননি নীলফামারীর ডিমলার যুবক বাদশা মিয়া।
বাদশা বলেন, সনদ ছিঁড়ে ফেলার পর রোজ নামে একটি কুরিয়ার সার্ভিস আমাকে চাকরি দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে তিন মাস কাজ করার পর এক মাসের বেতন দেওয়ায় চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি। অপরদিকে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঢাকায় কনস্ট্রাকশনের কাজে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে শ্রমিক হিসেবে আমাকে দৈনিক হাজিরায় কাজ দেওয়ায় তা ছেড়ে চলে আসি।
এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, চাকরি ছেড়ে চলে আসার বিষয়টি জানা ছিল না। বাদশা যদি চায় তাহলে তাকে আইসিটি কিংবা অন্য কোনো বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা হবে। পরে সেই দক্ষতার ভিত্তিতে চাকরির ব্যবস্থা করা যাবে।