ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একশ্রেণির দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। দলিল লেখক, স্ট্যাম্প ভেন্ডার ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত এ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে সাব-রেজিস্ট্রার তফাজ্জল হোসেন নানা অনিয়মে জড়িয়ে আছেন।
তিনি এ অফিসে যোগদানের পর থেকে দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি দলিল থেকে চারহাজার সাতশত টাকা শেরেস্তার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও সাব রেজিস্ট্রি মসজিদের নামে নিচ্ছে ১০০ টাকা, দলিলদাতার আঙ্গুলীর ছাপ নেওয়ার সময় অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে আরও ১০০ টাকা।
দলিলের নকল তুলতে গেলে সরকারি ফ্রি থেকে অতিরিক্ত দ্বিগুণ টাকা গুনতে হচ্ছে ভুক্তভোগীর। নবীনগর সাব রেজিস্টারে কর্মরত লিপি আক্তার ও জোসনা আক্তার উভয়েই এই অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, সাব রেজিস্টার স্যার কে ১৬০০ টাকা দিতে হয় বাকি ১০০ টাকা আমাদের থাকে।
এক পক্ষের দাবি, সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা করছেন না নবীনগর সাব-রেজিস্টার। অফিস টাইমে তার নির্দিষ্ট আসনে না বসে অন্য কক্ষে বসেন তিনি। অফিসে সিটিজেন চার্টার না থাকায় যে যার মতো করে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রদত্ত টাকা দলিল লেখক সমিতি নিজেদের মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করার জন্য রাত পর্যন্ত লাইট চালু রাখে অফিসে।
সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। তার চাহিদা মতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে হয়রানি করা হয়। আবার টাকা পেলে সব বৈধ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক জানান, শেরেস্তা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি তো দূরের কথা সীমাহীন হয়রানির স্বীকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাই বাধ্য হয়েই শেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়। সিন্ডিকেটের ভয়ে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ছুটে আসেন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোঃ জারু মিয়ার ছেলে, সাবেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, অফিসে কোনো শেরেস্তা আদায় করা হয় না। দলিল লেখকরা চুক্তি করে কিছু টাকা অতিরিক্ত নিতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার তফাজ্জল হোসেন সময়ের আলোর প্রতিনিধিকে বলেন, পুরো অফিস আমার, আমি যেখানে খুশি বসতে পারি। সিটিজেন চার্টার এর জন্য আবেদন করেছি পরবর্তীতে লাগানো হবে। নকল নবিশে শুধু ১২০০ নয়, ১২০০০ হাজারও হতে পারে দলিল অনুযায়ী।
শেরেস্তা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, অফিসে কোনো শেরেস্তা আদায় করা হয় না। দলিল লেখকরা চুক্তি করে দলিল রেজিস্ট্রি সরকারি মূল্যের বেশি টাকা নিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি আমার জানা নেই। যারা এরকম করে তাদেরকে আপনারা ধরুন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা রেজিস্টার সরদার লুৎফুর কবিরের সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, সিটিজেন চার্টার অফিসে থাকা তো বাধ্যতামূলক আর এজলাসে বসেই সেবা দেওয়ার কথা, উনি কেনো এরকমটা করছেন আমি উনাকে জিজ্ঞেস করবো।