বাংলাদেশের আলিফা চীন নামের এক শিশুর লেখা চিঠির জবাব দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চিঠিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি তাকে চীনের মিং রাজবংশের শাসনকালের একটি ইতিহাস জানান। ওই সময় চীনের মহান নৌ-অভিযাত্রী, কূটনৈতিক ও অ্যাডমিরাল ঝেং হে দুইবার প্রাচীন বাংলায় আসেন। তার এই সফর দুই দেশের সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের বীজ বুনে দেয়। প্রেসিডেন্ট শি শিশুটিকে মন দিয়ে পড়াশোনা করার পাশাপাশি নিজ স্বপ্ন পূরণে কঠোর পরিশ্রম এবং বড় হয়ে বাংলাদেশ ও চীনের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকায় অবস্থিত চীনের দূতাবাস বুধবার (৩১ মে) জানায়, আলিফা চীন নামের শিশুটির জন্ম গত ২০১০ সালে। আলিফা চীন গর্ভে থাকা অবস্থায় তার মায়ের হৃদযন্ত্রের জটিল সমস্যা দেখা দেয়, যা তাকে জন্মদান করাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এমন সময়ে ‘দ্য পিস আর্ক’ নামের চীনা নৌবাহিনীর একটি হাসপাতাল জাহাজ বাংলাদেশ সফরে আসে। তখন ওই শিশুটির মায়ের হৃদযন্ত্রের জটিল সমস্যা শুনে পেয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ছুটে আসেন চীনা জাহাজের সামরিক চিকিৎসকরা। ‘দ্য পিস আর্ক’ নামের চীনা নৌবাহিনীর একটি হাসপাতাল জাহাজের সামরিক চিকিৎসকরা খুবই সতর্কতার সঙ্গে তখন ওই মায়ের সিজারিয়ান অপারেশন বাস্তবায়ন করেন এবং মা ও কন্যা শিশু উভয়ের প্রাণরক্ষা হয়। এরপর ওই ঘটনার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মেয়ের বাবা নাম শিশুটির পুরো নাম রাখেন আলিফা চীন।
শিশু আলিফাকে লেখা চিঠিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, তার জন্ম ইতিহাস চীন-বাংলাদেশ দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রাচীন কাল থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক ছিল। উভয়েই ছিল ভালো প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ট বন্ধু। দুইপক্ষের সম্পর্কের প্রেক্ষাপট হাজার হাজার বছরের। ৬০০ বছরেরও বেশি সময় আগে মিং রাজবংশের একজন চীনা নাবিক ঝেং হে দুইবার বাংলাদেশ সফর করেন। যা দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের বীজ বপন করেছিল। আর ৬০০ বছরেরও বেশি সময় পরে চীনের নৌবাহিনীর একটি হাসপাতালে জাহাজের সামরিক ডাক্তার শিশু চীনের মাকে বিপজ্জনক সময়ে তাকে জন্ম দিতে সাহায্য করেন। যা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের একটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী গল্প।
মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের সাথে (ডানে) আলিফা চীন।
চীনা প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, চীন বড় হয়ে চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের বার্তাবাহক হতে চায় জেনে তিনি খুবই আনন্দিত। তার মতো অন্যদের জীবন বাঁচাতে আলিফা চীন ভবিষ্যতে চীনের একটি মেডিকেল স্কুলে পড়তে চায়। আগামী ২০ নভেম্বর বিশ্ব শিশু দিবস। এই উপলক্ষে চিঠিতে আলিফা চীনের সুস্বাস্থ্য, পড়াশোনায় সাফল্য ও সুখী পারিবারিক জীবন কামনা করেন প্রেসিডেন্ট শি।