সরকারের তরফ থেকে হঠাৎ সংলাপের বিষয়টিকে সংশয় ও একই সঙ্গে সম্ভাবনার চোখেও দেখছে বিএ
নপি। সংলাপ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতারা ও সরকারের মন্ত্রীরা যে বক্তব্য দিচ্ছেন সেটাকে আপাতত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না দলটি। কারণ সংলাপ নিয়ে সরকারি দল থেকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আসছে। বিএনপি সরকারের মনোভাব আরও পর্যবেক্ষণ করতে চায়। দলটির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বিরতি দিয়ে সংলাপের ইস্যুকে সামনে আনা হবে। এটা সময় ক্ষেপণ ছাড়া কিছু নয়। বিএনপির মাঠের আন্দোলনকে স্তিমিত করতে রাজনীতিতে সংলাপের বায়ু ছেড়ে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে কেউ কেউ সংলাপ নিয়ে সরকারি দলের বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
বিএনপির নেতারা বলছেন, সংকট সমাধানে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রস্তাব পেলে তারা দলের বৈঠকে আলোচনা করে যাওয়া না-যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে যেকোনো ধরনের আলোচনা হতে হবে অবশ্যই নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে। অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট করতে চান না তারা। এ ছাড়া সংলাপ নিয়ে অতীতে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিরোধী দল বিএনপি বহুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাত্র মাসছয়েক বাকি থাকলেও এর কোনো সুরাহা হয়নি।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক সময়ের আলোকে বলেন, সমসাময়িক অবস্থা বুঝে বিএনপি সিদ্ধান্ত নেবে। আমার মনে হচ্ছে সংলাপের কথা বলে সরকার দৃষ্টি ভিন্নখাতে সরাতে চায়। আন্দোলন থেকে বিএনপির মনোযোগ দূরে সরাতে চায়। কারণ আওয়ামী লীগকে সহজে বিশ্বাস করতে নেই। গতবার বিশ্বাস করে প্রতারিত হতে হয়েছে। তাই বিএনপি প্রতিবার প্রতারিত হতে চায় না। তবে সংলাপ নিশ্চয়ই ভালো দিক। যুদ্ধের ময়দানেও সংলাপ হয়। গণতান্ত্রিক এ সুযোগকেও কাজে লাগাতে হবে। তা হতে পারে নির্দলীয় সরকার ইস্যুতে।
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতার ভাষ্য, কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই সরকার সংলাপ নিয়ে নানা কথা বলছে। কয়েক দিন আগেও তারা সংলাপের সম্ভাবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল। এখন তাদের গলায় নরম সুর। এ জন্য বিএনপি কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরালো করছে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের চাপের কারণে সরকার কিছুটা নমনীয় হয়েছে। এখন আন্দোলন ও সংলাপ উভয়ই চলতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান সময়ের আলোকে বলেন, সরকার কখন কী বলে তা দেখার বিষয়। সরকার আসলে বিরোধী দলকে বিভ্রান্ত করতে নানারকম কথাবার্তা বাজারে ছড়াচ্ছে। তাদের প্রতিটি কথার মধ্যেই ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে, যা পরে প্রমাণ হয়। বিএনপি সংলাপে যাবে কি না; জবাবে তিনি বলেন, পরেরটা পরেই বলা যাবে। পরিস্থিতি কোন দিকে দাঁড়ায় সেটি আগে দেখেন। আরও ধৈর্য ধরতে হবে। সংলাপ নিয়ে বুধবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কোথায় কোন সমাবেশে কে কী বলছেনÑসেটার জবাব দেওয়া আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা রাজনীতি পরিবর্তন করছি। আমাদের কাছে কেউ লিখিত প্রস্তাব দিলে সেটার জবাব দেওয়ার জন্য ভাবব।
মঙ্গলবার ১৪ দলের এক সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপির এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করে লাভ নেই। প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আমরা তাদের সঙ্গে মুখোমুখি সংলাপ করতে চাই। তবে বুধবার তিনি ঠিক উল্টো কথা বলেছেন। আমু বলেন, নির্বাচনকে নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কাউকে আহ্বান করা হয়নি। কাউকে আহ্বান করার সুযোগ নেই। এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত নয় যে, দাওয়াত করে এনে খাওয়াব।
এদিকে বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জাতিসংঘের মধ্যস্থতা বা হস্তক্ষেপ করতে হবে- এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট দেশে এখনও তৈরি হয়নি। আমাদের দেশে আমরা আলোচনা করব- এটা নিজেদের সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করব।’ অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘সংলাপের মাধ্যমে সবকিছু সমাধান হতে পারে। আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।’
একইদিন দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তার ভাষ্য, ‘এতেই বোঝা যায় আওয়ামী লীগের কী অবস্থা।’