চিত্রনায়ক ফারুক ছিলেন ঢাকা-১৭ আসনের নৌকার মাঝি। গত ১৫ মে তার মৃত্যুতে আসনটি এখন শূন্য। আগামী ১৭ জুলাই এ শূন্য আসনে উপনির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখানে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এখন অনেকে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, সংস্কৃতি কর্মী পর্যন্ত। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ২২ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই সভায় ঢাকা-১৭ শূন্য আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।
এখন এই ২২ জনের মধ্যে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে- এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। সবাই চান প্রার্থী হতে। সাধারণ মানুষের চাওয়া- প্রধানমন্ত্রী যেন তার পছন্দসই প্রার্থীকে মনোনয়ন দেন। তবে ২২ জনের মধ্যে কয়েকজনের নাম বেশ জোরেশোরে আলোচনায় উঠে এসেছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ আসনের জন্য বেশি আলোচিত আব্দুল কাদের খানের নাম। তিনি এর আগে এ আসনে মনোনয়নের জন্য প্রার্থী ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং দলের একজন পরীক্ষিত নেতা। দলের দুঃসময়ে তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে বেশ গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৭৫ সালের পর থেকে তিনি বনানী এলাকায় বসবাস করেন। সামরিক সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বনানীতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সমাধি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করেছেন। তাকে অনেক জেলজুলুম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও তিনি রাজনীতি ছাড়েননি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, কাদের খান মনোনয়ন ফরম তোলার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেয়েছেন। মনোনয়ন তোলার পর তিনি পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কয়েকজন মন্ত্রী ও নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দোয়া চেয়েছেন। কাদের খান গত সোমবার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
আওয়ামী লীগ গত শনিবার মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে। অন্য যারা ফরম সংগ্রহ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য মো. আলী আরাফাত। তিনি সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আওয়ামীপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত। ফরম তুলেছেন চিত্রনায়ক নায়ক ফেরদৌস। আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে পরিচিত তিনি। একজন বিখ্যাত নায়কের শূন্য আসনে বিকল্প হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হতে চান তিনি। তবে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারটি তিনি সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মো. জসীমউদ্দিনও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি অনেক দিন ধরেই আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ী পরিচিত। তার আরেক ভাই মোরশেদ আলমও সংসদ সদস্য। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার স্বত্বাধিকারী। বুধবার সময়ের আলোকে জসীমউদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রী তাকে মনোনয়ন দেবেন বলে আশাবাদী তিনি। কারণ এর আগেও প্রধানমন্ত্রী মেয়র তাপসের নিবার্চনি এলাকায় সাবেক এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্টকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আর সেই প্রার্থী ধানমন্ডি এলাকায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারই পথ অনুসরণ করে প্রার্থী হতে চান মো. জসীমউদ্দিন।
মো. মূসা একসময় সচিব ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি মুজিবনগর বিসিএস অফিসার সমিতির সঙ্গে সংপৃক্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত। সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি এখনও সবার কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য। তিনিও মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদী।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী নিজে যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন দেবেন। তবে যারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা তারা মনোনয়ন প্রত্যাশা করতেই পারেন। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর লবিং শুরু করেছেন। এর মধ্যে মো. ওয়াকিলউদ্দিন, মো. জাকির হোসেন, মু. নজরুল ইসলাম তমিজি, মো. আবু সাইদ, মো. আবদুল খালেক, প্রয়াত নায়ক ফারুকের ছেলে রৌশন হোসেন পাঠান, মো. সিদ্দিকুর রহমান ও হেফজুল বারী মোহাম্মদের নাম শোনা যাচ্ছে।