প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৩:০৯ এএম | অনলাইন সংস্করণ Count : 67
প্রতিষ্ঠালগ্ন দেশের কৃষি শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতিতে অদ্বিতীয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। দীর্ঘ ছয় দশকের অসংখ্য গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে বাকৃবির নাম, আছেন বীর শহিদও।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বাকৃবিতে রয়েছে বধ্যভূমি, শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ। তবে ‘বিজয় একাত্তর’ শুধু বাকৃবির নয়, দেশের অন্যতম বিখ্যাত একটি ভাস্কর্য। স্মৃতিস্তম্ভটি ১৯৭১ সালে সংঘটিত বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে সোজা সামনের দিকে এগিয়ে এলেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তন। তার সামনে স্থাপিত হয়েছে বিজয় ১৯৭১।
ভাস্কর্যটিতে দেখা যায়, তিনজন মুক্তিযোদ্ধার আপাদমস্তক মূর্তি পরস্পরের বিপরীতমুখী ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে একজন নারী, একজন কৃষক এবং আরেকজন ছাত্র। তিনজনের হাতেই রাইফেল। সঙ্গে কৃষকের হাতে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা। অর্থাৎ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের বিজয় উদযাপনের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয় এই স্থাপনাটি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ও দেশমাতৃকার জন্য লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটে উঠছে। অকুতোভয় প্রান্তিক কৃষক, সংগ্রামে নারীর দৃঢ় সংকল্প আর তারুণ্যের দেশপ্রেমের মধ্য দিয়ে সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব প্রতিকৃতি।
জানা যায়, বিজয় ১৯৭১ স্মৃতিস্তম্ভের ভাস্কর স্থপতি শ্যামল চৌধুরী। ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ ১৯৯৭ সালে শুরু হয়ে ২০০০ সালের জুন মাসে শেষ হয়। ভাস্কর্যটি নির্মাণে সে সময় প্রায় ২৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত নবীন শিক্ষার্থী ও বাইরে থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় একটি স্থান এই বিজয় ১৯৭১ চত্বর।
বাকৃবিতে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের কাছে এটি একটি আবেগের জায়গা। এই চত্বরেই যে এসে মিশে অজস্র গল্প, ক্লান্ত বিকালের প্রাণোচ্ছল মুহূর্তগুলো। তাই প্রাক্তন হয়ে যাওয়ার পরও কখনো ক্যাম্পাসে এলে এই চত্বরে ঘুরে যেতেই হয়। শুধু এখানকার শিক্ষার্থীরাই নয়, প্রায় প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের চোখ আটকে যায় বিজয় ১৯৭১-এর সামনে।
বাকৃবির পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীনতাকামী মানুষের যে অঙ্গীকার ও দৃঢ়প্রত্যয় ছিল, তা এই স্মৃতিস্তম্ভের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। তৎকালীন স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে আপামর জনতার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে এই যুদ্ধে।
স্বাধীন বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের চেতনাকে উজ্জীবিত করে যাচ্ছে বিজয় ১৯৭১ স্থাপত্য। বাকৃবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুসফিকুর রহমান সিফাত বলেন, বিজয় ১৯৭১ ভাস্কর্যটি আমাদের বাকৃবির পরিচয় ধারণ করে। আমরা জাতি হিসেবে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে গর্ববোধ করি। এই ভাস্কর্য ও চত্বরে প্রতিটি শিক্ষার্থীর পদচিহ্ন রয়েছে। অনেক দিন পর ক্যাম্পাসে এসে সেই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে।
সময়ের আলো/আরএস/