সুনামগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনটি ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা নিয়ে। ২০২১ সালে মধ্যনগর থানাকে পরিপূর্ণ উপজেলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরিধি বেড়ে যায় এ আসনের। আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে এটিই এখন সবচেয়ে বড় আসন। আয়তন ও ভোটারসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে হাওর অধ্যুষিত এ আসনের রাজনীতিতেও। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বর্তমানে সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যস্ততা বেড়েছে, দৃশ্যমান হয়ে উঠছে তাদের নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম।
নির্বাচনে বিএনপির আসা না-আসা নিয়ে দোদুল্যমানতার সুযোগে এ আসনে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কার্যক্রমে এগিয়ে আছে আওয়ামী লীগ। তবে নৌকার হাল ধরতে চান অনেকেই। আর বিএনপি যদিও বলছে, আপাতত নির্বাচন তাদের ভাবনায় নেই, আন্দোলনই প্রধান ইস্যু। তারপরও দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘুরছে ভোটারদের মুখে মুখে। মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন একের অধিক। আর নীরবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টি, জমিয়তে উলামা ইসলামসহ অন্য দলের প্রার্থীরা।
কে হবেন ধর্মপাশা, মধ্যনগর, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসনের নৌকার মাঝি? কী করবে বিএনপি? এসব প্রশ্ন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনার কমতি নেই। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। প্রচারে ফেসবুকেও সরব তারা। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রার্থিতার কথা বলছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং করছেন। মনোনয়ন দৌড়ে কে কাকে টপকে যাবেন, এ নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে প্রচারে আছেন বেশ কয়েকজন। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার শীর্ষে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। এরপরই আছেন আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. সেলিম আহমদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জোরেশোরেই মাঠে-ঘাটে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন এবং কেন্দ্রেও নৌকা পেতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় আরও যারা, তারা হলেন-আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির টিম সদস্য ও সাবেক যুগ্ম সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার ভানু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিত সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার চৌধুরী লিটন এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান সেলিম।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে প্রচারে আছেন বেশ কয়েকজন। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় প্রথম দিকে সুনাসগঞ্জ জেলা কৃষক দলের সভাপতি আনিসুল হক। অন্যদিকে আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজাম্মান কামরুল এবং বিএনপির সাবেক এমপি নজির হোসেন। উভয়েই কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রিন সিগন্যালের কথা বলে মাঠ পর্যায়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
বতর্মান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, তিনবার নিবার্চিত হওয়ার পর এ আসনে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে অতীতে এমন উন্নয়ন কেউ কখনো কল্পনাও করেনি। তিনি নির্বাচিত হয়ে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, বিদ্যুতায়ন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান, দরিদ্র ভূমিহীনদের ভূমিদানসহ সব ক্ষেত্রেই সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার যে যুগান্তকারী উন্নয়ন করছে তা সঠিকভাবে জনসাধারণের মধ্যে তুলে ধরছেন। তারা আশা, আগামী জাতীয় সংসদ নিবার্চনে এলাকার উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত করতে দল তাকেই নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ দেবে। তাই সবাইকে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি মো. সেলিম আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। কিন্তু সঠিক নেতৃত্বের অভাবে প্রচার হচ্ছে না। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র সাধারণ জনগণের কাছে তুলে ধরছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেব। জেলার সর্ববৃহৎ নির্বাচনি এলাকা জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগরবাসীর কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই।
মনোনয়নপ্রত্যাশী বিনয়ভূষণ তালুকদার ভানু বলেন, ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবার্চন পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য হিসেবে প্রধানত সিলেট বিভাগের কাজ করে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় সুনামগঞ্জ-১ নিবার্চনি এলাকাসহ জেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি হয়। এ সুবাদে সেখানকার সামাজিক উন্নয়ন কমর্কাণ্ডে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সফলতা, উন্নয়ন কমর্কাণ্ড ও সামাজিক নিরাপত্তা কমর্সূচিগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরে জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১-৪১ বাস্তবায়নে কার্যকর অংশগ্রহণের লক্ষ্যে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। স্মরণকালের অকাল বন্যায় সৃষ্ট দুর্যোগে ভাটি অঞ্চলের মানুষের পাশে বারবার গিয়ে সাহস জুগিয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোয়ন দিলে নিবার্চনের জন্য প্রস্তুত আছি।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমি ও আমার পরিবার সারা জীবন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করে এসেছি। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন সৈনিক হয়ে বিগত সব জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে আমি সুনামগঞ্জ-১ নির্বাচনি এলাকায় আজীবন কাজ করে আসছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনা করে আমি আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। আমার বিশ্বাস, সুনামগঞ্জ-১ আসনে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোটেট রণজিত সরকার বলেন, তিনি দীঘির্দন ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শের একজন সৈনিক হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে আছেন এবং তৃণমূলের মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে আছেন। তাই তৃণমূলের মানুষের জীবন-মানের উন্নয়নে যদি নেত্রী তাকে মনোনয়ন দেন তা হলে তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সাধারণ মানুষের অবকাঠামো উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করবেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশী হায়দার চৌধুরী লিটন বলেন, সারা জীবন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করে এসেছি, জননেত্রী শেখ হাসিনা মেধাবী ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ নেতৃত্ব পছন্দ করেন। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন আমি আমার সাংগঠনিক কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে দল, এলাকা ও দেশের জন্য কাজ করে যাব।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান সেলিম বলেন, দলের জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ করেছি। তৃণমূলে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছি। নির্বাচনি এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মী ও দলীয় সমর্থকরা আমাকে নির্বাচন করতে উজ্জীবিত করছেন। এ আসনে দলকে আরও শক্তিশালী করতে নেত্রীর কাছে তিনি নৌকার মনোনয়ন চাইবেন।
বিএনপি থেকে তিনজন আগেরবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এবারও মাঠে আছেন তারা। ভোটারদের সঙ্গে সভা, মতবিনিময় করলেও তারা বলছেন, আমরা নির্বাচনের জন্য নয়, সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য মাঠে আছি। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছে না নেতাদের। তবে হাটবাজারে নিজেদের প্রার্থিতার আভাস দিয়ে যাচ্ছেন।
সময়ের আলো/আরএস/