ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা সোমবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০ আশ্বিন ১৪৩০
ই-পেপার সোমবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin-Mohammad-City-(Online).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/SA-Live-Update.jpg
পাহাড়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি
আলমগীর হোসেন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৩:৪০ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 159

পার্বত্য তিন জেলায় আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সশস্ত্র ক্যাডারদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। স্থানীয় পাহাড়ি বা বাঙালি বাসিন্দা থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, পরিবহন এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সংশ্লিষ্টরা এসব সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন।

পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাঁদা না দিলেই নির্যাতন কিংবা খুন-জখমের ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। এমনকি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরও চোরাগুপ্তা গুলি চালানোর ঘটাচ্ছে পাহাড়ের উপজাতি সন্ত্রাসীরা। সবশেষ সোমবার সকালে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অস্ত্রের মুখে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের কাছ থেকে চাঁদা ওঠানোর খবরে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ঘটনাস্থলে গেলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় পাহাড়ের সন্ত্রাসী সংগঠন ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র ক্যাডাররা। অবশ্য সেনাবাহিনীর পাল্টা গুলিতে আহত বয় রাম বম (২৫) নামে কেএনএফের এক সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, দেশের মোট আয়তনের দশ ভাগের এক ভাগ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। সবুজ পাহাড়ের অপার সম্ভাবনার এই অঞ্চলটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে আঞ্চলিক অন্তত ছয়টি সংগঠন নানা ধরনের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আধিপত্য ধরে রাখতে প্রত্যেক সংগঠনই গড়েছে সশস্ত্র গ্রুপ। এই সশস্ত্র গ্রুপের মাধ্যমে পার্বত্য জেলাগুলোতে চাঁদাবাজি ও খুনোখুনির ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। সংগঠনগুলো হচ্ছে-পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-সন্তু), জেএসএস (সংস্কার), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এবং মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি)। তবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে কেএনএফ তথা সংগঠনটির সশস্ত্র শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) সৈকত শাহীন সময়ের আলোকে বলেন, ‘সোমবার রুমা উপজেলায় চাঁদাবাজিকালে একজন সন্ত্রাসী আটক হয়েছে। পাহাড়ে মাঝেমধ্যেই এভাবে চাঁদাবাজির অভিযোগ আমরা পেয়ে থাকি। পাহাড়ের চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের টার্গেট মূলত ব্যবসায়ী, ঠিকাদার ও কনস্ট্রাকশনস কাজে নিয়োজিতরা। অভিযোগ বা কোনোভাবে তথ্য পেলেও অনেক সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে সহসা কাউকে পাওয়া যায় না। ভুক্তভোগীরাও ভয়ে অনেক সময় অভিযোগ করেন না। তদন্তেও সহযোগিতা করতে চান না। অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলের বাস্তবতায় এখানে সিডিআর বা ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েও সেভাবে কাজ করা যায় না। এতসব পরিস্থিতির মধ্যেও পাহাড়ের এ অঞ্চলে চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।’

জানা যায়, সম্প্রীতির বান্দরবান জেলায় গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ তথা কেএনএর অত্যাচারে বিপর্যস্ত পাহাড়ের সাধারণ নিরীহ মানুষ। পাহাড়ে নিজেদের অধিকার আদায়ের নামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি, গুম, খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে সব অশান্তির নেপথ্যেই স্থানীয় আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর আধিপত্য ও চাঁদাবাজি মূল কারণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর বান্দরবানের রুমা উপজেলার ১ নং পাইন্দু ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডস্থ চায়রাগ্র পাড়ায় কেএনএফ সন্ত্রাসী কর্তৃক আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ফাঁকা গুলি ছোড়ে চাঁদা দাবি করে। একপর্যায়ে চাঁদা না পেয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে স্থানীয়দের গৃহপালিত হাঁস-মুরগি নিয়ে যায়। এমনকি পরবর্তীতে পরিবারপ্রতি ৫০০ টাকা করে চাঁদা প্রদান না করলে গুলি করে হত্যার হুমকিও দিয়ে যায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। তার আগে গত ২৩ আগস্ট রুমা উপজেলায় বিভিন্ন মার্মা পাড়া থেকে কেএনএফ জোরপূর্বক খাবার (যেমন-হাস-মুরগি, কুকুর, ছাগল ও প্রতি পাড়া থেকে ৫০ কেজি চাল) তুলে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও প্রতি পরিবারকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা প্রদানের জন্য চাপ দেয়। ২৭ আগস্ট রোয়াংছড়ি উপজেলার ১ নং রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নে ইউএনডিপির ৯ জন বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে কেএনএফ মোবাইলের মাধ্যমে জনপ্রতি ৭০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে। জানা যায়, ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে ২৮ আগস্টের মধ্যে টাকাসহ তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলা হয়।

গত ১০ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলাধীন রোয়াংছড়ি উপজেলার ৩ নং আলেক্ষ্যং ইউপির ৪ নং ওয়ার্ড কচ্ছপতলী বাজারের একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোবাইলের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে উপজাতি সন্ত্রাসীরা। ভুক্তভোগী ব্যক্তি চাঁদাবাজকে চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় বর্ণিত ব্যবসায়ীকে রাতের আঁধারে গুলি করে হত্যার হুমকি প্রদান করে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্নিবার পাড়ায় ১২-১৫ জন কেএনএফ সদস্যের একটি দল অবস্থান গ্রহণ করে। পরবর্তীতে সশস্ত্র দলটি বান্দরবান-রুমা সড়কের নির্মাণকাজে নিয়োগকৃত বুলডোজার ড্রাইভার এবং তার ছয়জন সহযোগীর কাছ থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং ৪টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এর আগে গত সপ্তাহে চাঁদার জন্য ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা খাগড়াছড়ির রামগড়ে দুর্গম এলাকায় দুটি কাভার্ড ভ্যানসহ দুই চালক ও দুই হেলপারকে তুলে নিয়ে যায়। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে চাপে পড়ে ভুক্তভোগীদের ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় সন্ত্রাসীরা।

খাগড়াছড়ির জালিয়াপাড়া এলাকার একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে বলেন, পাহাড়ি এলাকায় এমন কোনো পণ্য বা বা প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে চাঁদাবাজি হয় না। কলার ছড়া বা কাঁদি থেকে শুরু করে পাহাড়ে ফলমূল শাকসবজিসহ সব ধরনের পরিবহনকে চাঁদা দিয়ে চলাচল করতে হয়। তিনি বলেন, শুধু খাগড়াছড়ি নয়, একইভাবে রাঙামাটি ও বান্দরবানেও পর্যটন স্পটসহ সবখানে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি চলে আসছে।

এ প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মজিবুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর বেপরোয়া চাঁদাবাজির কাছে সাধারণ মানুষ এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ওই সংগঠনগুলো সামরিক বাহিনীর মতো কাঠামোতে পরিচালিত হচ্ছে। এর দ্বারায় সহজেই অনুমান করা যায় যে, এরা এখন রাষ্ট্রের জন্য কতটা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের এসব অস্ত্র মজুদ ও সশস্ত্র গ্রুপের ব্যয় মেটাতেই মূলত পাহাড় থেকে বছরে সংগঠনগুলো অন্তত প্রায় হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি করছে। এদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com