ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা সোমবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৯ আশ্বিন ১৪৩০
ই-পেপার সোমবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin-Mohammad-City-(Online).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/SA-Live-Update.jpg
রুশ বাহিনীকে বিতাড়িত করা কঠিন
ফারহানা করিম চৌধুরী
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৬:১৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 106

ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো দ্রুত সমাপ্তি হবে না। তিনি বলেন, বেশিরভাগ যুদ্ধ প্রথম শুরু হওয়ার সময় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় ধরে চলে। তাই আমাদের অবশ্যই ইউক্রেনে দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। এ সংঘাত শুরু হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন রাশিয়া তার বাহিনী ইউক্রেনে পাঠায়। কিয়েভ জুনে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে কিন্তু এতে সীমিত সফলতা লাভ করে। 

যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। তবে একই সময়ে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনীয়রা যদি যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়, তা হলে দেশটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ন্যাটো জোটে যোগদানে ইউক্রেনের উচ্চাকাক্সক্ষা সম্পর্কে স্টলটেনবার্গ বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ইউক্রেন শেষ পর্যন্ত ন্যাটোতে থাকবে। স্টলটেনবার্গ আরও বলেন, যখন এই যুদ্ধ শেষ হবে, তখন আমাদের ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দরকার হবে। অন্যথায় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেনের পাল্টা-আক্রমণ ব্যর্থ হয়নি, তবে রুশ বাহিনীকে এই ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করার বিষয়টি খুবই কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি কিয়েভে পাঠানো মার্কিন অস্ত্র সহায়তার ব্যাপারে বলেন, ওয়াশিংটন তার সেরাটা করছে। শুধু ‘জাদু ধুলো’ ছিটিয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের শক্তিকে বাড়িয়ে তোলা হয়নি। ইউক্রেনের পাল্টা-আক্রমণের ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করেন, প্রত্যাশার তুলনায় এটি অনেক ধীর ছিল। তবে এটি একটি পর্যায়ে এসে স্থিতিশীল ছিল। মার্ক মিলি বলেন, অনেকে বলেন তাদের এই হামলা ব্যর্থ হয়েছে। তবে আমি মনে করি, এখনও সে যুদ্ধ শেষ হয়নি। আরও অনেক যুদ্ধ বাকি আছে। আর ইউক্রেনও নিঃশেষ হয়ে যাওয়া কোনো পক্ষ নয়।

অবশ্য ইউক্রেনের সেনাদের দক্ষিণ উপকূলে পৌঁছানো এবং মারিউপোল শহর পুনরুদ্ধার করার মতো উচ্চাকাক্সক্ষী লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনার ব্যাপারে মিলি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করতে চান না। ইউক্রেনের পুরো অঞ্চলকে রুশ দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করা এবং সব রাশিয়ানকে বের করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। তবে এখনই সেটা সম্ভব নয়। কারণ ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার প্রায় দুই লাখ সেনা রয়েছে। তাদের বের করে দিতে অনেক সময় লেগে যাবে।

রুশ হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র অবারিতভাবে ইউক্রেনকে সামরিক ও মানবিক সাহায্য দিয়ে আসছে। মার্ক মিলি জানান, এ পর্যন্ত মার্কিন সরকার ইউক্রেনকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তাসহ সামগ্রিকভাবে ১০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাঠিয়েছে। রাশিয়া রোববার ইউক্রেনের ওপর একটি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে। প্রধানত ওডেসা অঞ্চলের দক্ষিণে শস্যগুদাম লক্ষ্য করে এ হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী।

১৭ সেপ্টেম্বর, রোববার টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া ইরানের তৈরি ৬টি শাহেদ ড্রোন এবং ১০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে। ইউক্রেনের বাহিনী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার আগেই ৬টি ড্রোন এবং ৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর, শনিবার ইউক্রেন জানিয়েছে, দুটি পণ্যবাহী জাহাজ ওডেসা বন্দরে পৌঁছেছে। অস্থায়ী করিডোর ব্যবহার করে এই জাহাজের মাধ্যমে কৃষ্ণসাগর দিয়ে আফ্রিকা এবং এশিয়ার বাজারের জন্য শস্য সরবরাহ করা হবে। এরপর থেকে ওডেসা এবং এর বন্দরগুলোর পরিস্থিতি সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী বলেছে, ফাইটার এয়ারক্রাফট, অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল ইউনিট, মোবাইল ফায়ার গ্রুপ এবং অন্যান্য উপায়ে রুশ বিমান হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। 

ওডেসার গভর্নর ওলেহ কিপার টেলিগ্রামে বলেছেন, এই অঞ্চলের পূর্ব অংশের বেরেজিভস্কি জেলায় একটি শস্যগুদাম এবং কৃষিক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এদিকে রয়টার্স স্বাধীনভাবে এই ঘটনা যাচাই করতে পারেনি এবং রাশিয়া থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্যও পাওয়া যায়নি। তবে ইউক্রেনের পুরো অঞ্চলে কয়েক ঘণ্টা ধরে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। 

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে শস্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ইউরোপের তিন দেশ-পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি। গত শুক্রবার ইউরোপীয় কমিশন ইউক্রেনের প্রতিবেশী পাঁচ দেশে শস্য রফতানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। একই দিনে দেশ তিনটি ইউক্রেনের শস্য কেনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য রফতানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু রাশিয়ার হামলার দরুন শস্য রফতানি ব্যাপকহারে কমে গেছে। গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেনের শস্যচুক্তির আওতায় রফতানি অনেকটা বেড়েছিল। তবে সে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধিতে রাশিয়া অসম্মতি জানালে তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়ে ইউক্রেন। ইউক্রেনের শস্য রফতানির অন্যতম প্রধান রুট ছিল কৃষ্ণসাগর। রাশিয়া সে পথটি বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় ইউক্রেন কেবল তার প্রতিবেশী কয়েকটি দেশেই শস্য রফতানি করতে পারে। তবে গত মে মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইউক্রেনের শস্য রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে শর্ত বেঁধে দেয়। শর্তটি হলো-যেসব দেশ ইউক্রেনের শস্য কিনবে তারা বিশ্বের অন্য কোথাও সেই শস্য বিক্রি করতে বাধ্য থাকবে।

পরে ইইউ সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এ ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার ভালদিস ডমব্রোভস্কিস বলেন, ইইউর দেশগুলোর ইউক্রেনীয় শস্য আমদানির বিরুদ্ধে একতরফা পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এর পরপরই নিজ উদ্যোগে ইউক্রেনের শস্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি। দেশগুলোর যুক্তি, প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইউক্রেনে শস্যের অবাধ আমদানির কারণে স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত শস্যের দাম অনেকটা কমে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয় কৃষকদের আয় কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি ঠেকাতে দেশ তিনটি ইউক্রেনীয় শস্য আমদানিতে তাদের নিজস্ব বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে দেশগুলো তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ইউক্রেনীয় পণ্য পরিবহন করতে দেবে বলে জানিয়েছে।

এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আগেই বলেছেন, ইউক্রেন সম্ভবত তখনই শান্তি আলোচনা শুরু করবে যখন তার সম্পদের অভাব শুরু হবে। সেই সঙ্গে পশ্চিমা মিত্রদের দেওয়া অস্ত্রের সরবরাহে টান পড়লেই তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে। রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তক শহরে শুরু হওয়া ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।  

পুতিন দাবি করেন, ইউক্রেনের পাল্টা-আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে। এই আক্রমণ থেকে তারা উল্লেখযোগ্য কোনো ফল অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং এই সময়ে তারা আরও ৭১ হাজার ৫০০ সেনাসদস্য ও কর্মকর্তাকে হারিয়েছে। পাল্টা আক্রমণ চালাতে গিয়ে কিয়েভ ৫৪৩টি ট্যাঙ্ক এবং বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১৮ হাজার সাঁজোয়া যান হারিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন পুতিন।

কিন্তু ধীরে ধীরে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সম্পদ, তাদের জনবল, সরঞ্জাম, গোলাবারুদ শেষ হয়ে আসছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের আলোচনার টেবিলে ডেকে আসছি। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। এখন তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চাইবে। তাদের জনবল, সামরিক সরঞ্জাম, গোলাবারুদ ইত্যাদি সবকিছু যখন শূন্যের কোঠায় এসে পৌঁছবে, তখন কিয়েভ বলা শুরু করবে, আমরা বহুদিন ধরে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করতে চাইছি কিন্তু তারা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। পুতিন বলেন, অনেকে তার কাছে জানতে চায় এ সংঘাত কবে শেষ হবে। রাশিয়া এ লড়াই বন্ধ করতে প্রস্তুত কি না। এর জবাবে তিনি বলেছিলেন, মস্কো যতক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনের পাল্টা-আক্রমণের মুখোমুখি হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন না।

শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে ইউক্রেনকে রাশিয়ার ওপর থেকে যেকোনো ধরনের আলোচনার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। তারপর তাদের ঘোষণা করতে হবে, তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। ব্যস, এতটুকুই যথেষ্ট হবে। পরেরটা আমরা দেখব। 

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনী ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কিয়েভের সঙ্গে শান্তি সংলাপ শুরু করতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বিশে^র বিভিন্ন দেশ। কিন্তু সেই কাক্সিক্ষত সংলাপের দেখা মেলেনি দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে।







https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com