প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৭:৪৫ এএম | অনলাইন সংস্করণ Count : 111
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থমকে যায় বিকিকিনি। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া মার্কেটের পুড়ে যাওয়া দোকানগুলো পরিস্কার করতেই ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের। অনেকে আধাপোড়া চালডাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন মালামাল খুব কম দামে বিক্রি করে দেন। শুরুতে কিভাবে ঘুরে দাড়াবেন সেই চিন্তায় ব্যবসায়ীদের বিলাপ করতে দেখা গেলেও ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে জোড়াতালি দিয়ে কেনাবেচা শুরু করেছেন অনেকে। মার্কেট চালু না হলেও গোটা কয়েক ক্রেতাকে মালামাল কিনতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহাজনদের কাছ থেকে বাকি মালামাল এনে বিক্রি করছেন তারা। একদম আয় না হওয়ার চেয়ে সীমিত হলেও কিছু আয় হওয়ার আশায় নতুন করে শুরু করেছেন তারা।
গতকাল মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ পুড়ে যাওয়ার পর থেকে যাওয়া অবশিষ্ট মালামাল বিক্রি করছেন। নতুন করে চিড়া, মুড়ি, নারকেল ও গুড় নিয়ে বিক্রি করতে বসা সোহরাব হোসেন বলেন, মহাজনের কাছ থেকে হাজার পাঁচেক টাকার মাল বাকিতে এনে দোকান চালু করেছি। অথচ কয়েকদিন আগেই আমার কাছে লাখ লাখ টাকার মাল ছিল। মানুষজনও বাকি নিয়ে যেত। তিনি আরো বলেন, সকাল থেকে হাজার খানেক টাকার মাল বিক্রি করেছি। এখন তো মানুষ জানে না যে দোকান চালু হয়েছে। হয়ত এক/দুই সপ্তাহের মধ্য মানুষজন জেনে যাবে এবং বিক্রি শুরু হবে।
মুদি দোকান মাদারীপুর ভাই ভাই জেনারেলের মালিক নাঈম শেখ বলেন, পুড়ে যাওয়ার পর যেসব পণ্য নিচে পড়ে কিছুটা ভালো ছিল, সেগুলো নামমাত্র মূলে বিক্রি করছি। এর বাইরে ফেলে দেয়া ছাড়া তো এগুলো দিয়ে আর কিছুই করতে পারব না। যা পারি বিক্রি করছি। পোড়ার পর অবশিষ্ট কয়েক জোড়া জুতা নিয়ে থাই কালেকশন দোকানের সামনে বসেছেন ওই দোকানের কর্মচারী আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, পানি দিয়ে আগুন নেভানোর পর এই কয়েক জোড়া জুতা অবশিষ্ট ছিল। এগুলো নিয়েই বসেছি। জুতাগুলোর তেমন ক্ষতি না হওয়াতে যা দাম পাচ্ছি বিক্রি করছি। এসময় একজন ক্রেতাকে জুতে হাতে নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে দেখা গেছে।
সরজমিনে দেখা যায়, ৫০০ গ্রাম গুড়া দুধের দাম ৪২৫ টাকা হলেও সেটি একজন দোকান মালিক বিক্রি করছেন ৩৮০ টাকায়। ৪০০ গ্রাম চা-পাতার দাম ২২০ টাকা হলেও সেটি বিক্রি করছেন ১৮০ টাকা। ১২০ টাকার চা-পাতা বিক্রি করছেন ৮০ টাকায়।
তারেক ক্লথ স্টোরের মালিক মো. আব্দুস সালাম ভূইয়া বলেন, দোকানে ৮০-৯০ লাখ টাকার কাপড় ছিল। এগুলোর কিছুই সরাতে পারিনি। এখন রাস্তায় ভিখারির মতো হাতও পাততে পারি না। কে আমাকে সাহায্য সহযোগিতা করবে? এখন আমাদের চোখের পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। মার্কেটের খ-৪০ ও খ-৮৫ দোকানের মালিক ইয়াসিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন যদি টিনগুলো সরিয়ে দেয় তাহলে আমরা ব্যবসা শুরু করতে পারব। আমরা তো অলরেডি মরেই গেছি, আর কী মরব! কিন্তু ক্রেতাদের যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য অন্তত জায়গাটা পরিষ্কার করে ময়লাগুলো নিয়ে যাক।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার দিবাগত গভীর রাতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। প্রথমে সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পরে ধাপে ধাপে ইউনিট বেড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট। প্রায় ৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।
সময়ের আলো/আরএস/