ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা সোমবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০ আশ্বিন ১৪৩০
ই-পেপার সোমবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin-Mohammad-City-(Online).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/SA-Live-Update.jpg
সমুদ্র সম্পদ ও আমাদের অর্থনীতি
ড. সুব্রত সরকার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১০:৪৭ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 2660

সমুদ্র অর্থনীতি বা ব্লু-ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্রের সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সামুদ্রিক পরিবেশ ও সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যে অর্থনীতি গড়ে ওঠে তা হলো সমুদ্র অর্থনীতি বা ব্লু-ইকোনমি। সামুদ্রিক পরিবেশের অংশ হিসেবে আমাদের সামুদ্রিক পরিবেশের পাশাপাশি উপকূল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইকোসিস্টেম যেমন, সী-বিচ, ম্যানগ্রোভ, উপকূল তীরবর্তী ও দূরবর্তী দ্বীপ ইত্যাদিকে বিবেচনায় রাখতে হয়। বাংলাদেশের ব্লু-ইকোনমি নিয়ে বলতে গেলে আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করতে হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরের প্রচেষ্টাকালে জাতির পিতা অন্যান্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনার দিকে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সামুদ্রিক অর্থনীতির গুরুত্ব অনুধাবন করেই মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত চট্টগ্রাম বন্দরের চ্যানেলের বিভিন্নস্থানে নিমজ্জিত, অর্ধনিমজ্জিত জাহাজ এবং ও অবিস্ফোরিত মাইন অপসারণে রাশিয়া সরকারের সহায়তা কামনা করেন। রাশিয়া সরকার বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে নিমজ্জিত, অর্ধনিমজ্জিত জাহাজ এবং অবিস্ফোরিত মাইন উদ্ধার করে চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল করার ব্যবস্থা করে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন আইন, ১৯৭৩ (১৯৭৩ সালের ২২ নং আইন) ধারা বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করে। 

যেহেতু বঙ্গোপসাগরে আমাদের আর অনেক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অংশীদারত্ব রয়েছে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখে বঙ্গোপসাগরের ব্লু-ইকোনমির সম্ভাবনা ও সমুদ্র সম্পদ আহরণের জন্য ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন যেটির মূল লক্ষ্য ছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপসংলগ্ন ১২ মাইল এলাকাজুড়ে ‘টেরিটোরিয়াল সী’ অঞ্চল গঠন। এ সমঝোতার স্মারক স্বাক্ষরের পূর্বে জাতির  পিতা বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদের ২ নম্বর ধারা অনুযায়ী সমুদ্রসীমাসংক্রান্ত ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে তৎকালীন শাসক তথা পাকিস্তানের নেতৃত্বের মধ্যে এ অঞ্চলের সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবনা ছিল না। পুরো পৃথিবীর রাষ্ট্রপ্রধান, অর্থনীতিবিদ ও বিজ্ঞানীরা যেখানে নব্বই দশক ও পরবর্তীকালে সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সমুদ্র ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল, সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালেই এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করেছিলেন। যা থেকে আমরা তার দূরদর্শিতার প্রমাণ পাই। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আমরা ধীরে ধীরে আমাদের সমুদ্র সম্পদ সম্পর্কে জানতে থাকি এবং সম্পদ আহরণও বাড়তে থাকে ।এ ক্ষেত্রেও ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু বিশেষ করে রাশিয়া থেকে লোকবলসহ ১০টি মৎস্য আহরণের ট্রলার সংগ্রহ, শিপিং করপোরেশনে ১৯টি জাহাজ সংযোজন, বাংলাদেশ ফিশারিজ একাডেমি প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়, তৎকালীন পাকিস্তান সরকার মেরিন একাডেমি পরিত্যাগ করে একাডেমি কার্যক্রম করাচিতে স্থানান্তর করে। যুদ্ধের পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিন একাডেমি হিসেবে এটি পুনরায় চালু করেন। বঙ্গবন্ধু একাডেমিকে দক্ষিণ এশিয়ায় মেরিটাইম পেশাদার শ্রেষ্ঠত্বের অগ্রভাগে উন্নীত করতে ‘ডেভেলপমেন্ট অব মেরিন একাডেমি (১৯৭৩-১৯৮০)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয় ও বিদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজে বিশ্বমানের মেরিন ক্যাডেট তৈরি করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ১৯৭৫ সালের কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আমাদের দেশের অন্য সেক্টরগুলোর সঙ্গে সমুদ্র অর্থনীতি চিন্তাচেতনাও স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রেগুলোর সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা নিয়ে কোনো ধরনের সমাধানে আসতে পাড়া যায়নি। ফলে মুখ থুবড়ে পড়ে আমাদের সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর বঙ্গোপসাগর থেকে সমুদ্র সম্পদ আহরণের যে কালজয়ী চিন্তা করেছেন, তা বিকল্প অর্থনীতির মাইলফলক। জাতির পিতার মতোই মেধা ও দূরদর্শিতাসম্পন্ন কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমুদ্র সম্পদ আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। সমুদ্রসীমা জটিলতা বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকার ব্যতীত অন্য কোনো সরকার কোনো কাজ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই।  শেখ হাসিনা তার দূরদর্শিতার মাধ্যমে অনুধাবন করেন যে, এত ছোট একটা দেশের এত মানুষের খাদ্যের জোগান তথা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সমুদ্র অর্থনীতি তথা ব্লু-ইকোনমির বিকাশ অত্যাবশ্যক। তারই আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০১ সালে জাতিসংঘের আনক্লোস আইনটি অনুসমর্থন করে।

বঙ্গবন্ধুর করা আঞ্চলিক পানি ও সামুদ্রিক এলাকা আইন ১৯৭৪-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকাকে বাংলাদেশের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন বা সমুদয় অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে দাবি করে যা নিয়ে পার্শর্বর্তী দেশ মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। বিভিন্ন সময়ে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এই বিরোধ সমাধানের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

 ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তীক্ষ্ণ দূরদৃষ্টি তখনই সমুদ্রসীমা বিরোধের ওপর পড়ে এবং তিনি উপলব্ধি করতে পারেন যে সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার বাংলাদেশে একটি বিকল্প অর্থনীতির নতুন দিগন্ত সূচনা করতে পারে। আর এই বিকল্প অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন বিশাল সমুদ্র অঞ্চল। 

এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ- মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা বিরোধের বিষয়টি ২০০৯ সালে জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০১৪ সালের ১২ মার্চ এক ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি হয়। পরে ২০১৭ সালের ৭ জুলাই নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অবস্থিত স্থায়ী সালিশি আদালতের রায়ের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি হয়। বঙ্গবন্ধুর করা আঞ্চলিক পানি ও সামুদ্রিক এলাকা আইন ১৯৭৪, তাঁর কন্যার ২০০১ সালে জাতিসংঘের আনক্লোস আইনটি অনুসমর্থন এবং দৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ১১৮৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকার একচ্ছত্র আধিপত্য লাভ করে।

সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজন দক্ষক্ষ জনশক্তি। আর এই দক্ষ জনশক্তি তৈরির উপলব্ধি থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পর বিশেষায়িত মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয়। ২০১৪ সালে তার নির্দেশে তার কার্যালয়ে ‘সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমন্বয় কমিটি’ গঠন করা হয়। ১৯৯৬ সালে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের একটি স্বনির্ভর সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারি প্রকল্প হাতে নেন এবং বিশেষায়িত সমুদ্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৫ সালে কক্সবাজারে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ জরিপ এবং গবেষণার জন্য ‘আর ভি মীন সন্ধানী’ নামে একটি জাহাজ । প্রায় ৬৫.৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১২৪ ফুট লম্বা জাহাজটি বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের ওপর গবেষণার জন্য এক আশীর্বাদস্বরূপ। কারণ এই জাহাজের উদ্বোধনের আগে প্রায় ১৭ বছর কোনো জরিপ ও গবেষণা ছাড়াই শুধু অনুমানের ভিত্তিতে চলছিল বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের কাজ। ২০১৭ সালে গঠন করেন ব্লু-ইকোনমি সেল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমুদ্র সম্পদ নিয়ে গভীর চিন্তা এবং উপলব্ধির প্রকাশ পাওয়া যায় ২০১৮ সালের বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের মধ্যে যার ৩.২২ অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতি সম্প্রসারণে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সমুদ্র অর্থনীতির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১-এ বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির জন্য বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। সমুদ্র সম্পদের বহুমাত্রিক জরিপ সম্পন্ন করা, উপকূলীয় অঞ্চলে জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি, অগভীর এবং গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কার্যক্রম জোরদার করা, ইকোট্যুরিজম চালু করা এবং সমুদ্রের পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার কৌশলগুলো বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ সালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১২তম একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে নির্দেশ প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা শুধু সমুদ্র সম্পদ আরোহণের বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণের বিষয়েও তার ভূমিকা অতুলনীয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষার উদ্দেশ্যে ২০১৪ সালে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের ১৬৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা, ২০১৯ সালে নিঝুম দ্বীপসংলগ্ন ৩১৮৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা এবং ২০২২ সালে সেন্ট মার্টিনস দ্বীপসংলগ্ন ১৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ তথা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও বর্তমান সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে বর্তমানে বাংলাদেশের মোট মাছের উৎপাদনের প্রায় ১২.২১ শতাংশ হলো ইলিশ এবং এটি জিডিপিতে বছরে এক শতাংশ অবদান রাখছে। সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য গত এক দশকের মধ্যে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে দূরদর্শিতার আর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বঙ্গবন্ধুকন্যা সমুদ্র বিজয় করে বসে থাকেননি, তিনি সমুদ্র অর্থনীতির সুফল পাওয়াকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে পায়রা সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন করেন যেটি সমুদ্র অর্থনীতি তথা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রাখা শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ক দূরদৃষ্টির আরও অনেক নজির রেখেছেন তার মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে ইকোনমিক জোন স্থাপন যেমন- সীতাকুণ্ড ইকোনমিক জোন, সাবরাং ইকোনমিক জোন ইত্যাদি। বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে আধুনিকায়ন ছাড়াও সম্প্রতি জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উপকূল দূরবর্তী দ্বীপে সাবমেরিন কেবল ও দ্বীপের মাঝে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে উপকূলের মানুষদের জীবনমান তথা সমুদ্র অর্থনীতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্মাণের মাধ্যমে আমরা তার দূরদর্শিতা ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে তার সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ চিন্তার প্রতিফলন দেখতে পাই। 

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ওশেনোগ্রাফি বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com