প্রকাশ: বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১২:০৯ এএম | অনলাইন সংস্করণ Count : 67
আলু বরাবরই এ দেশে একটা সহজলভ্য উচ্চফলনশীল ফসল। হাইব্রিড ধানের চাষাবাদ ব্যাপক হারে শুরু হওয়ার আগে ভোক্তার চাহিদা মেটাতে ভাতের বদলে আলু খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতো। একটা সময়ে এমন একটা স্লোগান আমরা প্রায়ই শুনতাম-‘বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান’। ভাতের পর বাংলাদেশে যে খাবারটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় তা হলো আলু।
বাজারে মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অতিরিক্ত মূল্যে হিমশিম খেয়ে আলুর ওপরই বেশি নির্ভর করছে। অথচ সেই আলুর দাম হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। প্রতি কেজি আলুর খুচরা মূল্য ৫০ টাকা।
কৃষিবিদদের মতে, আলু আমাদের দেশে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটা ফসল। স্বল্পমেয়াদি এ ফসলটির উৎপাদন আয় অন্যান্য ফসলের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী দেশে আলুর যে চাহিদা তার বিপরীতে আলু উৎপাদন অনেক বেশি। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আলু রফতানি করা হয়। মঙ্গলবার সময়ের আলো থেকে জানা যায়, দেশে বর্তমানে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৭৫-৮০ লাখ টন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৬ টন। আর এখন হিমাগারগুলোতে প্রায় ১৫-১৬ লাখ টন আলু মজুদ রয়েছে। তাই দেশে আলুর কোনো সংকট নেই।
নিঃসন্দেহে ভোক্তা এবং কৃষকের জন্য এটা শুভ লক্ষণ। অথচ এ দেশে ভোক্তা এবং কৃষক কেউই সেই সুফল ভোগ করতে পারেন না। পর্যাপ্ত আলু থাকার পরও শুধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে আলুর বাজার বেসামাল। এই মধ্যস্বত্বভোগীর কবলে পড়ে পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়, যার মূল্য দিতে হয় ভোক্তা এবং কৃষক উভয়কেই। আলুর মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে আলু কেনা হয় ৭ টাকা কেজি। হিমাগারে আলু সংরক্ষণের পর খরচ দাঁড়ায় ১৪ টাকা। মন্ত্রণালয় কেজিতে ১২ টাকা লাভের সুযোগ রেখে হিমাগারে ২৬ টাকা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছে। তবে প্রকৃত অবস্থা আরও ভয়াবহ। হিমাগারেই বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকা। বাজারে পাইকারিতে ৪২ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা যখন এমন বেপরোয়া হয়ে উঠছে তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে কিছু দিন পরপর কোনো না কোনো পণ্য সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ছে। কখনো মুরগি, পেঁয়াজ, আটা, সয়াবিন তেল, কাঁচামরিচ, ডিম এমনকি ডাব ও রোগীকে দেওয়া স্যালাইনও বাদ যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কয়েকটি বাজারে নজরদারি ও জেল-জরিমানা করে এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য থামানো অসম্ভব। আমরা মনে করি, অসাধু সিন্ডিকেটের হাত থেকে বাজারকে রক্ষা করতে বিপণন ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ জরুরি।
সময়ের আলো/আরএস/