ই-পেপার বিজ্ঞাপনের তালিকা সোমবার ২ অক্টোবর ২০২৩ ১৭ আশ্বিন ১৪৩০
ই-পেপার সোমবার ২ অক্টোবর ২০২৩
https://www.shomoyeralo.com/ad/Amin-Mohammad-City-(Online).jpg

https://www.shomoyeralo.com/ad/SA-Live-Update.jpg
সুদ একটি অর্থনৈতিক মহামারি
ইসমাঈল সিদ্দিকী
প্রকাশ: বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১২:২০ এএম | অনলাইন সংস্করণ  Count : 924

মহান আল্লাহ মানুষের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে ব্যবসাকে হালাল করেছেন, ব্যবসার মধ্যে বরকত রেখেছেন এবং যুগে যুগে তাঁর প্রিয় নবী-রাসুলদের মাধ্যমে ব্যবসার বিধান শিক্ষা দিয়েছেন। অপরদিকে অর্থের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন অর্থাৎ সুদকে হারাম ঘোষণা এবং এর বিনিময়ে জাহান্নামের আজাবের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। 

সুদ মানবজাতির জন্য প্রকাশ্য অভিশাপ। তবে শয়তানের প্ররোচনায় সমাজে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে সুদ। তৃণমূল থেকে নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, অধিকাংশ মানুষ এই অর্থনৈতিক ক্যানসারে আক্রান্ত। অবস্থা এমন হয়েছে যে, সুদের কারবার ছাড়া বড় মাপের কোনো কিছু করার কথা কল্পনাও করা যায় না। ঋণ চাইলে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ ছাড়া কেউ দিতেও রাজি হয় না। সুদ অর্থনৈতিক কাঠামোকে ঘুণে খাওয়া কাঠের মতো বিধ্বস্ত করে দিচ্ছে। ধনীকে আরও ধনী এবং গরিবকে আরও গরিব বানাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সুদের কারণে একদিকে মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে সম্পদ জমা হচ্ছে, অন্যদিকে সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী দিন দিন সর্বহারা হয়ে পড়ছে।

বর্তমানে সাধারণত দুই ধরনের সুদি লেনদেন বেশি প্রচলিত-এক. মহাজনি সুদ, অর্থাৎ কেউ কোনো সাময়িক বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কারও কাছ থেকে ঋণ নিলে এর বিপরীতে ঋণের অতিরিক্ত যে অর্থ নেওয়া হয়। দুই. বাণিজ্যিক সুদ, যা কোনো উৎপাদনমূলক কাজে গৃহীত ঋণের বিপরীতে নেওয়া হয়। দুটোই সুদ, পবিত্র কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী দুটোই হারাম। সুদের এই ভয়াবহতার মাঝে নতুন আতঙ্ক হয়ে হাজির মাইক্রো ক্রেডিট বা ক্ষুদ্রঋণের আপদ। দেশের বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও ছোট উদ্যোক্তারা যেন কোনো কিছু করতে পারে এই লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ চালু করা হয়েছে এবং তা বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে। অভাবগ্রস্ত মানুষের অভাবকে কাজে লাগিয়ে চড়া সুদের কড়া শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত লাভজনক ব্যবসা পরিচালনার নাম ক্ষুদ্রঋণ। ক্ষুদ্রঋণের নামে সুদি লোন বিতরণকারী প্রচুর ব্যাংক, সমিতি ও নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন এমন লোকের খোঁজ আছে কি না তা বলা মুশকিল। বরং চোখের সামনেই দেখা যায়, সুদ আদায় করতে না পেরে বহু পরিবার ভেঙে পড়েছে, বহু মানুষ ঘর ছাড়ছে, ভিটা হারাচ্ছে।

ইসলামে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে হাদিসে কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে রাসুল (সা.)-এর একটি স্বপ্নের কথা বর্ণিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘আমি দেখলাম আজ রাতে আমার কাছে দুজন মানুষ এলো এবং তারা আমাকে একটি পবিত্র ভূখণ্ডে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে একটি রক্তের নদীর কিনারে গিয়ে উপস্থিত হলাম। 
সেই নদীতে একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। আর নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে আছে আরেকজন পুরুষ। তার সামনে রয়েছে পাথর। যখন নদীর লোকটি কিনারে উঠতে চায় তখন কিনারে থাকা লোকটি তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করে। পাথরের আঘাতে লোকটি যেখানে ছিল সেখানে ফিরে যায়। এরপর সে আবারও নদীর কিনারে উঠতে চায়, এভাবে সে যখনই কিনারে উঠতে চায় তখনই তাকে পাথর মেরে যেখানে ছিল সেখানে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আমি আমার সঙ্গে থাকা লোকদের জিজ্ঞেস করলাম, রক্তের নদীতে অবস্থিত লোকটি, যার মুখের ওপর পাথর মেরে আপন জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সে লোকটি কে? তখন তাদের একজন আমাকে বললেন, এ লোকটি সুদখোর।’ (বুখারি : ১৩৮৬) 

সুদ মানুষের তিনটি বিষয়ে আঘাত হানে। সুদের কারণে প্রথম আঘাত আসে মানুষে ঈমান ও বিশ্বাসে। অর্থাৎ সুদের কারণে সুদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার অন্যতম পরিচয় ঈমানদার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করা থেকে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না করো তা হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তওবা করো, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলম করবে না এবং তোমাদের জুলুম করা হবে না’ (সুরা বাকারা : ২৭৮-২৭৯)।

দ্বিতীয়ত, পরকালীন মুক্তির বিষয়ে, অর্থাৎ পরকালীন জীবনে আল্লাহর অপূর্ব নেয়ামত জান্নাত লাভের পরিবর্তে জাহান্নাম নিশ্চিত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা সুদ খায় তারা সেই ব্যক্তির ন্যায় দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা জ্ঞানশূন্য করে দিয়েছে। এ জন্য যে তারা বলে ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। 

যার কাছে রবের এ নির্দেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে তবে অতীতে যা হয়েছে তা তারই এবং তার ব্যাপার আল্লাহর এখতিয়ারে। আর যারা আবার আরম্ভ করবে তারাই জাহান্নামি। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে’ (সুরা বাকারা : ২৭৫)। তৃতীয়. অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর, অর্থাৎ সুদ যদিও বেশি দেখায় কিন্তু এর পরিণতি কমতির দিকে। সুদ সম্পদের বরকতহীনতাকে ত্বরান্বিত করে। সম্পদের মুখ্য উদ্দেশ্য তথা সুখ-শান্তি হতে মানুষকে বঞ্চিত করে। কুরআনে এসেছে, ‘সুদকে আল্লাহ কমিয়ে দেন এবং দানকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭৬)

আসলে যে ব্যক্তি টাকার মাধ্যমে সুদি লেনদেনে জড়ায় সে মূলত আল্লাহর সৃষ্টির রহস্যের সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ করে। কেননা মুদ্রার সৃষ্টি হয়েছে অন্যান্য জিনিস অর্জনের জন্য। মুদ্রা সত্তাগতভাবে উদ্দেশ্য হওয়ার জন্য সৃজিত হয়নি। এ জন্য যে ব্যক্তি মুদ্রা কেনাবেচা করে সে মুদ্রাকেই ব্যবসার পণ্য বানিয়ে ফেলে। 

অথচ মুদ্রা কখনো কেনাবেচার পণ্য হতে পারে না। মুদ্রাকে তার উদ্দেশ্যের বাইরে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি ও নীতি-বিবর্জিত কাজ। সবার কর্তব্য, সুদের লেনদেনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না রেখে ব্যবসার মাধ্যমে হালাল পন্থায় জীবিকা নির্বাহ করা।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com