আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশ অমান্য করা, তাঁদের ইচ্ছাবিরুদ্ধ কোনো কাজে লিপ্ত হওয়াকে গুনাহ বা পাপ শব্দে ব্যক্ত করা হয়। ছোট হোক বা বড়, গুনাহকে হালকা ভাবা উচিত নয়। কারণ ছোট গুনাহই ধীরে ধীরে বড় গুনাহের দিকে নিয়ে যায় এবং গুনাহ করতে করতে একটা সময় গুনাহকারী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়।
জীবনের বেলা ফুরানোর আগে কেউ ফিরে আসতে পারে; আবার অনেকেই গুনাহের চোরাবালিতে আটকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টাকেই বরবাদ করে ফেলে। আগেও বহু জাতির ধ্বংস, বহু সুখী-সমৃদ্ধ পরিবারের অধঃপতন, সর্বত্র মত ও পথের দ্বন্দ্ব, মানুষের মধ্যকার ভয়ভীতি, অস্থিরতা, দুর্ভিক্ষ, মহামারি ও অগ্নিকাণ্ড সবই আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কারণেই হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জল-স্থলে বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মেরই ফল’ (সুরা রুম : ৩০)। গুনাহের বহুবিধ ক্ষতি রয়েছে, এখানে মৌলিক কিছু ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করছি।
রিজিক থেকে বঞ্চিত হওয়া : রিজিক আল্লাহ প্রদত্ত অনেক বড় নেয়ামত। আর মানুষ নেয়ামত থেকে তখনই বঞ্চিত হয়, যখন অকৃতজ্ঞ হয়ে সৃষ্টিকর্তার নাফরমানিতে লিপ্ত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন’ (সুরা ইবরাহিম : ৭)। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় মানুষ স্বীয় গুনাহের কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ : ৪০২২)
ইলম থেকে বঞ্চিত হওয়া : ইলম আল্লাহ প্রদত্ত নূর, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তার জন্য এক আলোর ব্যবস্থা করেছি, যা নিয়ে সে মানুষের মাঝে চলে’ (সুরা আনআম : ১২২)। আর গুনাহ ওই নূর বা আলোকে নিভিয়ে দেয়, এজন্য গুনাহের কারণে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পায়। অনেক কিছু শিখেও ভুলে যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, অবশ্যই আমি মনে করি, মানুষ তার শিক্ষা করা ইলম ভুলে যায় তার কৃত গুনাহের কারণে। (জামিউ বয়ানিল ইলম : ১/১৯৬)
অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায় : গুনাহের দরুন মানুষের অন্তরে মরিচা ধরে যায়। হৃদয়ে কালো দাগ পড়ে যায়, ফলে তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন ভালো কথা আর ভালো লাগে না, চাইলেই ভালো কাজে মন বসানো যায় না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলমান গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে তার পর সে যখন তাওবা করে এবং গুনাহ থেকে বিরত থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তখন তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায়। আর যখন মুমিন আবারও গুনাহ করে তখন অন্তরের কালো দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে মুমিনের অন্তরে আল্লাহর কুরআনে বর্ণিত ‘রাইন’ তথা মরিচা প্রভাব বিস্তার করে।’ (মিশকাত : ২২৮১)
কর্ম সম্পাদন কঠিন হয়ে যায় : যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অনুগত হয়ে চলে আল্লাহ তায়ালা তাদের সময়ে বরকত দান করেন, ফলে খুব সহজেই, খুব কম সময়েই তারা স্বীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারে। আর যারা সৃষ্টিকর্তার নাফরমানিতে লিপ্ত থাকে তাদের মধ্যে অলসতা জেঁকে বসে আর তাদের জন্য কর্ম সম্পাদন কঠিন হয়ে পড়ে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার যাবতীয় কার্যাবলি সহজ করে দেন।’ (সুরা তালাক : ৪)
গুনাহ পরিত্যাগ কঠিন হয়ে যায় : গুনাহের প্রথম পর্যায়ে আমরা ভাবি, আজ না হয় গুনাহটা করেই ফেলি। তারপর তা ছেড়ে দিয়ে তাওবা করে ফেলব। কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি উল্টো, কারণ একটি গুনাহ অন্য গুনাহের জন্ম দেয়। একটি গুনাহের কারণে আরেকটি গুনাহ সংঘটিত হয়। ফলে গুনাহ ছেড়ে রবের দিকে ফিরে আসা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য যথাসম্ভব নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখা। গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে কালক্ষেপণ না করে তওবা করে নেওয়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ পরিত্যাগ করো।’ (সুরা আনআম : ১২০)
শাস্তির মুখোমুখি হওয়া : গুনাহের কারণে দুনিয়াতে যেভাবে নানা রকম সংকট আর সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে তেমনি পরকালেও আল্লাহ তায়ালার শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন পাপ বর্জন করো, যারা পাপ করে, অচিরেই তাদের পাপের সমুচিত শাস্তি দেওয়া হবে’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২০)। সুতরাং এখনও আমরা জমিনের ওপর আছি, দেহে প্রাণ আছে, ইচ্ছাশক্তি আছে, চাইলেই নেক আমলের ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে পারি। মৃত্যু এসে গেলে শত আফসোস করেও সামান্য জিকির করা যাবে না। তাই সময় থাকতেই গুনাহ ছেড়ে রবের দিকে ফিরে আসি। আল্লাহ তওফিক দিন।
সময়ের আলো/আরএস/