ই-পেপার বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৩
বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৩

সমাজ সংস্কারে মহানবী (সা.)-এর অবদান
তিনি এলেন শান্তির দূত হয়ে
আহমাদ যুবায়ের খান
প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৪:১৭ এএম  (ভিজিট : ১৩৭)
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক। পৃথিবীর ইতিহাসে পূর্ণাঙ্গরূপে তিনিই উপহার দিয়েছেন সাম্য ও শান্তির একটি সুন্দর পৃথিবী। পৃথিবীবাসী যখন অন্যায়, অবিচার, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি ও হাজারো অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত; সমাজ যখন বিশৃঙ্খলার জয়জয়কার, মানবতা যখন ভূলুণ্ঠিত, সমাজের নৈতিক ও ধর্মীয় বিষয় যখন একেবারে কোণঠাসা, তখনই তিনি পৃথিবীতে আগমন করেন শান্তির দূত হয়ে।

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি’ (সুরা আম্বিয়া : ১০৭)। আল্লাহ তায়ালা বিশ্বনবী (সা.)-কে সারা জগতের জন্য শান্তির বাতাস প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে এ ধরায় প্রেরণ করেছেন তা তাঁর বাণী থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায়। আর বিশ্বনবী (সা.)-ও নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। আমি উত্তম আদর্শ শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ (ইবনে মাজা : ২২৫)

একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে তিনি শৈশব থেকেই গড়ে উঠেছেন মহান রবের বিশেষ অনুগ্রহে। যে বয়সে দুনিয়ার ভালো-মন্দ কিছুই বোঝা সম্ভব হয় না, সেই বয়স থেকেই নবীজি ইনসাফের প্রমাণ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) যখন মা হালিমার দুধ পান করেন তখনই নিজের দুধভাইয়ের প্রতি ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে নিষ্ঠার প্রমাণ দিয়েছেন। হজরত হালিমাতুস সাদিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন যে, বিশ্বনবী (সা.) প্রথম দিন যে স্তন থেকে দুধ পান করেছিলেন, যতদিন দুধ পান করেছেন ঠিক একই স্তন থেকে পান করেছেন। কখনো অন্য স্তন থেকে দুধ পান করেননি। কারণ তাঁর সঙ্গে আরেকজন ভাই ছিল, তার জন্য রেখে দিতেন। এভাবেই তিনি শিশুকালীন নিষ্ঠার শিক্ষা দিয়েছেন। (তারিখুল ইসলাম)
শান্তি প্রতিষ্ঠায় হিলফুল ফুজুলে অংশ নিয়ে তিনি শান্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তরুণ বয়সেই।

নবীজি (সা.) এমন সময় পৃথিবীতে আগমন করেন, যখন সারা আরব লুটতরাজ, খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, মাদক আর নির্যাতনে ভরা ছিল। তিনি আদর্শ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে বড় বড় গোত্রের লিডারদের সঙ্গে নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি (সংগঠন) গঠন করেন। যা আজও হিলফুল ফুজুল নামে পরিচিত। সে সময় এ সংগঠনে অংশ নেয় বনু হাশিম, বনু মুত্তালিব, বনু আসাদ, বনু যাহরাহ ও বনু তামিমসহ আরও কিছু শক্তিশালী গোত্র। সবাই মিলে সংগঠনের লক্ষ্য স্থির করেÑ১. আমরা দেশ থেকে নিরাপত্তাহীনতা দূরীভূত করব। ২. আমরা মুসাফিরদের সংরক্ষণ করব। ৩. আমরা দরিদ্রদের সাহায্য করব। ৪. আমরা বড়দের ছোটদের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করা থেকে বাধা প্রদান করব। এভাবেই শুরু করেন বিধ্বস্ত আরব জাতিকে আদর্শ জাতিতে রূপান্তরের কার্যক্রম। তারপরে যখন তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হলেন তখন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত অহির মাধ্যমে আরব জাতির আমূল পরিবর্তন করে সোনার জাতিতে রূপান্তরিত করলেন।

নবুয়তের আগেই মহানবী মক্কায় একটি ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বের সমাধান করেন। মাত্র ৩৫ বছর ২ মাস বয়সে সমগ্র আরবের সব গোত্রের মধ্যকার আশু রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঐতিহাসিক সমাধান করে সারা আরবে প্রশংসার পাত্রে রূপান্তরিত হন তিনি। সে সময় মক্কায় বন্যার কারণে কাবাঘর ভেঙে গিয়েছিল। তাই আরবের সব গোত্রের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কাবাঘর পুনঃসংস্কারের কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং যথারীতি কাজ সম্পন্ন হয়ে যখন হাজরে আসওয়াদ নির্ধারিত স্থানে পুনঃস্থাপনের সময় হলো তখন বিবাদ শুরু হলো। কেননা কাজটি ছিল অতি সম্মানের, আর সব গোত্র চাচ্ছিল এ সম্মানের কাজটি তারা করবে যার ফলে প্রায় সংঘর্ষ লাগার উপক্রম হলো। ইতিমধ্যে কুরাইশের একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি ঘোষণা দিলেন, এ কাবাঘরের দরজা দিয়ে যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম প্রবেশ করবে সে যে সিদ্ধান্ত দেবে তা সবাই মেনে নিতে হবে। সবাই মোটামুটি রাজি হয়ে গেল। সবাই দৃষ্টি রাখল দরজার দিকে হঠাৎ করে দেখা গেল প্রবেশ করছেন মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ। সবাই এবার এক বাক্যে বলে উঠল-হ্যাঁ এই ব্যক্তির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। বিশ্বনবী (সা.) এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত প্রদান করে সবার দিলে স্থান করে নিলেন। তিনি নিজের চাদর বিছিয়ে নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদ উঠিয়ে চাদরের ওপরে রাখলেন।


তারপর সব গোত্রের একেকজন প্রতিনিধিকে বললেন চাদর ধরে দেয়ালের কাছে নিয়ে যেতে। সবাই চাদর ধরে যথাস্থানে নিয়ে গেলে বিশ্বনবী (সা.) নিজ হাতে তুলে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করলেন। একদিকে সব গোত্রের লোকের অংশগ্রহণের কারণে সবাই আনন্দিত হলো। অন্যদিকে বিশ্বনবীর (সা.) হাতে বিশ্বের সম্মানিত প্রস্তরখণ্ড যথাস্থানে স্থাপিত হলো। আর আরব জাতি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পেল। (তারিখুল ইসলাম)

সমাজ থেকে দূর করেন অভিশপ্ত সুদ প্রথা। নবীজি (সা.) যখন দেখলেন, আরবের সামাজিক অবস্থার অবনতির পেছনে মূল কারণ হলো অর্থনৈতিক যথেচ্ছ ব্যবহার। আর তখনকার আরবের অর্থ উপার্জনের মূল মাধ্যম ছিল অবৈধ পদ্ধতিতে উপার্জন। তার মধ্যে সুদ প্রথার প্রচলন ছিল সবথেকে বেশি। আর এই সুদের কারণে কেউ হয়ে যেত বড় ধনী আর কেউ শোষণের বেড়াজালে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যেত। ইচ্ছেমতো জুলুম করত ধনীরা গরিবদের ওপর। তাই বিশ্বনবী (সা.) দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, ‘মহান আল্লাহ তায়ালা সুদকে হারাম করেছেন আর ব্যবসাকে হালাল করেছেন’ (সুরা বাকারা : ২৭৫)। সমাজকে ঢেলে সাজাতে বিশ্বনবী (সা.) লক্ষ করলেন, সবথেকে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয় মদ ও জুয়ার আসরে।

তাই বিশ্বনবী (সা.) সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ঘোষণা দিলেন, মহান আল্লাহর নির্দেশ, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘ওহে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর-এসব শয়তানের কারসাজি ঘৃণ্য বস্তু। সুতরাং তোমরা এসব বর্জন করো। যাতে তোমরা সফল হতে পারো। (সুরা মায়িদা : ৯০)। এভাবে যাবতীয় দূষণমুক্ত একটি সুন্দর সমাজের দৃষ্টান্ত তিনি আমাদের সামনে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।


সময়ের আলো/আরএস/ 
 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com