প্রকাশ: রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৭:০৪ এএম আপডেট: ২৪.০৯.২০২৩ ৭:২৭ এএম (ভিজিট : ৩৮৮৫)
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুত মানব মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারকে সংযুক্ত করার প্রযুক্তি ‘নিউরোলিংক’। নিউরোলিংক একপ্রকার ‘ব্রেইন-মেশিন ইন্টারফেস’ ডিভাইস, যা প্রসেসিং চিপ এবং ছোট ইলেক্ট্রোডের সমন্বয়ে তৈরি। নমনীয় এবং জৈব উপাদান দিয়ে তৈরি এই ডিভাইসটি জুড়ে দেওয়া হবে ব্যবহারকারীর মস্তিষ্কের সঙ্গে।
মস্তিষ্কের নিউরনে তৈরি হওয়া ‘স্পাইক/অ্যাকশন পটেনশিয়াল’ বা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ শনাক্ত করতে পারে নিউরোলিংকের ইলেক্ট্রোড। আর প্রসেসিং চিপের সাহায্যে মস্তিষ্কের তরঙ্গকে পাঠানো হয় শরীরের সঙ্গে থাকা বাহ্যিক ডিভাইসে। মস্তিষ্কের নিউরনে সৃষ্টি হওয়া বৈদ্যুতিক তরঙ্গ লিপিবিদ্ধ করে বাহ্যিক ডিভাইসটি সেই তরঙ্গকে কমান্ডে রূপ দিয়ে সেটি অনুযায়ী স্মার্ট ডিভাইসগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। এভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে যেকোনো স্মার্টফোন, সাধারণ কম্পিটার, রোবটিক আর্ম এবং প্রোগ্রামিং কমান্ড মেনে চলে এমন কোনো ডিভাইস।
ইতিমধ্যে ইলন মাস্কের ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তিকে মানব মস্তিস্কে স্থাপন করতে ভলান্টিয়ারও নেওয়া শুরু করে দিয়েছে স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠান নিউরোলিংক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য এবং ঔষধ প্রশাসনের (এফডিএ) অনুমতি সাপেক্ষে এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ১০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য এবং ঔষধ প্রশাসন কতজন মানুষের ওপরে পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য এবং ঔষধ প্রশাসনের অনুমতিই প্রমাণ করে দিচ্ছে তাদের এই প্রযুক্তি মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। মানব মস্তিষ্কে নিউরোলিংক স্থাপনে অস্ত্রোপচারে রোবটের ব্যবহার করা হবে এবং নিউরোলিংক চিপকে ৬৪টি নমনীয় তার দিয়ে সংযুক্ত করা হবে মানব মস্তিষ্কের সঙ্গে। অতঃপর এই প্রযুক্তির সাহায্যে আমাদের ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো সরাসরি সংযুক্ত করা যাবে আমাদের মস্তিষ্কের সঙ্গে। ব্লুটুথ বা ওয়্যারলেস ডিভাইসগুলো যেভাবে কাজ করে, ঠিক সেভাবে কাজ করবে। হাত ব্যবহার না করেই আমাদের চিন্তায় আসা কমান্ডগুলোই নির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে কম্পিউটার এবং স্মার্ট ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে।
টেসলার সিইও ইলন মাস্ক কো-ফাউন্ডার হিসেবে যোগ দেওয়ার পর এই প্রযুক্তির গবেষণা ও বিকাশে ২০১৬ সালে শুরু হয় ‘নিউরোলিংক’ নামের প্রতিষ্ঠানের যাত্রা।
এখন পর্যন্ত নিউরোলিংক ডিভাইসটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে না এলেও ল্যাব পরীক্ষায় সফল হয়েছে। বানর, ভেড়া ও শূকরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এসেছে এই সফলতা। প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশ করা এক ভিডিওতে সফলভাবে চিপ স্থাপন করা এক বানরকে নিউরোলিংক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গেম খেলতে দেখা যায়।
সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ এবং প্রতিষ্ঠানটির কিছু গোপন সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা প্রাণীগুলোর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৫০০ প্রাণী মারা গেছে। কিছু প্রাণীকে হত্যা করা হয়েছে গবেষণার অংশ হিসেবে এবং কিছু প্রাণী পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই মারা গেছে। এমনকি ব্যবহৃত প্রাণীদের কোনো যথাযথ নথি বা হিসাব রাখেনি নিউরোলিংক। প্রযুক্তিটি বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে ইলন মাস্ক কাজের গতি বাড়াতে চাপ দেওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।