রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। আকাশে কালো মেঘ আর ঝুম বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। লাগাতার বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। এতে শস্য ভান্ডার খ্যাত এই উপজেলার কৃষকদের চোখে মুখে চিন্তার ভাজ পড়েছে। বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। আবহাওয়ার বৈরিতায় গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে আমন চাষিদের মাঝে স্বস্তি দেখা দিলেও, টানা বৃষ্টিতে খেত তলিয়ে যাওয়ায় এখন তারাও চিন্তিত।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে ১৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ মৌসুমে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আরও দুদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।
উপজেলায় সবজির জন্য বিখ্যাত রানীপুকুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া, আফজালপুর, তাজনগর, ভক্তিপুর, বলদীপুকুর হিন্দুপাড়া গ্রামের কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে তাদের আমনসহ বিভিন্ন সবজির ফসলের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের পুকুরের মাছ বের হয়ে গেছে। ফলে কৃষিজীবীরা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এভাবে বৃষ্টি চলমান থাকলে আর পানি নেমে না গেলে বন্যার আশঙ্কা করছেন তারা। একইভাবে অলস সময় পার করছেন অটো রিকশা চালক, ছোট দোকানদার এবং স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এদিন টানা বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট ফাঁকা দেখা যায়। স্কুল-কলেজের ছাত্র-শিক্ষকের অনেকেই স্কুলে এলেও বৃষ্টি আর বজ্রপাতের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটি দিতে দেখা যায়। তবে বজ্রপাতে এখনো কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
উপজেলার পাইকান গ্রামের কৃষক মাহফুজার রহমান জানান, তার ২টি পুকুর রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে সবাই ঘরবন্দী থাকলেও তিনি তার পুকুরের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুকুরের চারপাশের পাড়ে পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে। কখন যে পানির তোড়ে পাড় ভেঙে যায় সেই চিন্তায় আতঙ্কিত তিনি। তার দুটি পুকুরে প্রায় ৫ লাখ টাকার মাছ রয়েছে। পানির তাণ্ডবে যেন মাছ বের হয়ে যেতে না পারে সেজন্য তিনি চারপাশে জাল দিয়ে ঘিরে মাছ রক্ষায় ব্যাস্ত সময় পার করার পাশাপাশি পুকুরের মাছ রক্ষার চেষ্টা করছেন।
মামুদপুর গ্রামের কৃষক হায়দার আলী জানান, এক বছরের জন্য ২৫ হাজার টাকা দিয়ে তিনি ২৫ শতকের একটি পুকুর লিজ নিয়েছেন। সেই পুকুরে এবারই প্রথম মাছ ছেড়েছেন কিন্তু পুকুরের মাছ বড় হাওয়ার আগেই টানা বৃষ্টিতে তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। তার পুকুর পানিতে ভরে গিয়ে মাছ বের হয়ে গেছে। তারপরেও যতটুকু সম্ভব জাল দিয়ে পুকুরের চারপাশ ঘিরে মাছ রক্ষার চেষ্টা করছেন তিনি
কৃষক নুর আলী জানান, তিনি দেড় বিঘা কাকরুল আবাদ করছেন। সেখানে সাথী ফসল হিসেবে আদা চাষ করেছিলেন তিনি। এখন তার সেই ফসলের খেত পানিতে তলিয়ে আছে। এভাবে ৩/৪ দিন পানিতে ডুবে থাকলে সব পঁচে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হবেন বলে জানান।
অটোচালক সাজ্জাদুর রহমান জানান, তিনি অটো নিয়ে একদিন বের হতে না পারলে তার দেনা বেড়ে যায়। শনিবার থেকে টানা বৃষ্টির কারণে বাইরে মানুষের চলাফেরা কমে গেছে। একারণে অটো বন্ধ করে ঘরে বসে দিন পার করছেন।
পাইকান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক একরামুল হক বলেন, আমাদের এলাকায় গতরাত থেকে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। সকালে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তিনি স্কুলে যান। কিন্তু বৃষ্টির কারণে মাত্র কয়েকজন ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়ে এসেছিল। তাদের মুষলধারে বৃষ্টি আর বজ্রপাতের কারণে একটু আগেভাগেই ছুটি দিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন জানান, মিঠাপুকুর কৃষির জন্য বিখ্যাত। এখানে সবধরনের সবজি এবং ধানের চাষ হয়। এই বৃষ্টি ধানের জন্য খুবই উপকারী। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সবজি ক্ষেতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যা পানি নেমে যাওয়ার পর বোঝা যাবে। কৃষকদের যেন ক্ষতি না হয় এজন্য ১৭টি ইউনিয়নে আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।
সময়ের আলো/জেডআই