ই-পেপার মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩
মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩

দিনাজপুর-২: আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাপায় চলছে প্রার্থিতার লড়াই
নিজস্ব প্রতিবেদক দিনাজপুর
প্রকাশ: সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১:৪৬ এএম  (ভিজিট : ৭৩১)
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক ডাকসাইটে নেতা নির্বাচন করতে চান। আর দল নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি থেকেও মনোনয়ন চাইবেন একাধিক নেতা। এমনকি নির্বাচনে দলের টিকেট পেতে জাপাতেও একাধিক নেতা নামবেন প্রার্থিতার লড়াইয়ে ।

জাতীয় সংসদের ৭ নম্বর সংসদীয় আসন গঠিত হয়েছে বিরল-বোঁচাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে। এটি দিনাজপুর-২ আসন। এই আসন থেকে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আনিছুল হক। যথাক্রমে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সতীশ চন্দ্র রায়, তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সতীশ চন্দ্র রায়, চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রিয়াজুল হক, পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের সতীশ চন্দ্র রায়, সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো সতীশ চন্দ্র রায় নির্বাচিত হন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মাহবুবুর রহমান নির্বাচিত হন। তবে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে দিনাজপুর-২ আসনে (বিরল-বোঁচাগঞ্জ) মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নিজ দলের ব্যানার নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। 

দিনাজপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমানকে হারিয়ে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী সাদিক রিয়াজ চৌধুরীকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী আবদুর রৌফ চৌধুরীর রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত কর্মতৎপরতায় এবারও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। তবে এই আসন থেকে আরেকজন শক্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা সতীশ চন্দ্র রায়ের ছেলে আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সহ-সম্পাদক ডা. মানবেন্দ্র রায় মানব। এ ছাড়াও নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বিরল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। তিনি অবশ্য এ বিষয়ে সময়ের আলোকে স্পষ্টভাবে কিছু জানাননি।

অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, বোঁচাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ ছাড়া এই আসন থেকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. মোজাহারুল ইসলামও মনোনয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন বিরলের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বজলুর রশীদ কালুও মনোনয়ন চাইবেন। তবে বজলুর রশীদ কালু নিজে এ বিষয়ে সময়ের আলোর কাছে মুখ খোলেননি।

এ ছাড়াও এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান বোঁচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জুলফিকার আলী এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ও বিরল উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট সুধীর চন্দ্র শীল। 

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী বিরল উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এ কে এম আফজালুল আনাম। তিনি প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ না করলেও নিজের প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনি এলাকায় নীরবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির টানা তিনবারের নির্বাচিত সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দিনাজপুর-২ আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরী চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জনগণের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন বলে আশা ব্যক্ত করেছেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বিরল স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়কের সম্প্রসারণ, কৃষকের চাষাবাদের স্বার্থে দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ, বাঁধ নির্মাণ, স্কুল-কলেজ ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণ, উপজেলা পরিষদের ভবন নির্মাণ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়াসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।

আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ডা. মানবেন্দ্র রায় মানব সময়ের আলোকে বলেন, আমি বা আমাদের পরিবার জন্মসূত্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমার শ্রদ্ধেয় পিতা সতীশ চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য। এর আগে দুবার প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন চারবার। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এখনও আমার পিতাকে যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন। সে কারণে এখনও তাকে উপদেষ্টাম-লীর সদস্য হিসেবে রেখেছেন। 

ডা. মানবেন্দ্র রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় মনোনয়ন দেন, তা হলে নির্বাচিত হয়ে বিরল-বোঁচাগঞ্জের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করব। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এগিয়ে চলেছে। দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছেন তিনি। তাই নৌকা মার্কার বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, যদিও আমি আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার মনোনয়ন প্রত্যাশী, সে ক্ষেত্রে কোনো কারণে আমাকে যদি নৌকা মার্কায় মনোনয়ন দেওয়া না হয়, তা হলে প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষেই নৌকা মার্কার বিজয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাব। 

অন্যদিকে বোঁচাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক সময়ের আলোকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সরকারের অধীনে বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিএনপি গত নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আমি গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট না হওয়ায় গতবার নির্বাচন বয়কট করতে হয়েছিল। 

তিনি বলেন, নির্বাচন এলেই অনেকে মনোনয়ন চাইবে। মনোনয়ন না পেয়ে আবার মাঠ থেকে হারিয়ে যাবে। দেশান্তরি হবে। তবে আমি গত নির্বাচন করে এখন পর্যন্ত মাঠে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। ইনশাআল্লাহ আগামীতেও থাকব। 

তিনি বলেন, বর্তমান হায়েনা সরকার নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। জনগণ সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে এর জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আবারও মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এবার জয়লাভ করব ইনশাআল্লাহ।

বিএনপি আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. মোজাহারুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, আমরা বর্তমানে আন্দোলনমুখী। তবে আমাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসে তা হলে আমরা নির্বাচনে যাব। আন্দোলনের পাশাপাশি আমার নিজেরও নির্বাচন করার প্রস্তুতি আছে। 

জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট জুলফিকার হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। আর ভোট সুষ্ঠু হলে জাতীয় পার্টি এই আসন পুনরুদ্ধার করতে পারবে। তিনি বলেন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমি আশাবাদী লাঙ্গল মার্কা পাব। অন্য কেউ পেলেও তার পক্ষে দলের হয়ে তাকে বিজয়ী করতে কাজ করব। 

দিনাজপুর-২ (বিরল-বোঁচাগঞ্জ) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬ হাজার ৫৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬৩ জন এবং মহিলা ১ লাখ ৫২ হাজার ১৬ জন।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo[at]gmail.com