ই-পেপার মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩
মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩

সচিবালয়ে মন্ত্রীদের উপস্থিতি কম
কেউ এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণায়, কেউ বিদেশে
রফিকুল ইসলাম সবুজ
প্রকাশ: সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৩:৫০ এএম  (ভিজিট : ১০১৩)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে আর মাত্র ৩ মাস। তাই অফিসের প্রতি মন নেই বেশির ভাগ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর। সুযোগ পেলেই তারা ছুটে যাচ্ছেন নির্বাচনি এলাকায়। আবার কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে সেরে নিচ্ছেন বিদেশ সফর। এ কারণে সচিবালয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দফতরগুলো অনেকটাই ফাঁকা। 

সচিবালয়ের ভেতরে ৩২টি মন্ত্রণালয়ের অফিস রয়েছে। রোববার সরেজমিন দেখা গেছে এই ৩২টি মন্ত্রণালয়ের ৩৭ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মধ্যে অফিস করেছেন মাত্র ১২ জন। আর বিদেশ সফরে রয়েছেন ৭ জন। বাকিরা নির্বাচনি এলাকায় বা অন্য কোনো কর্মসূচির কারণে অফিসের বাইরে রয়েছেন। 

সচিবালয়ের ৬ নং ভবনে ১৩টি মন্ত্রণালয়ের ১৬ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর অফিস রয়েছে। তাদের মধ্যে রোববার অফিস করেছেন মাত্র ৫ জন। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেসা ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু অফিস করেছেন। বিদেশ সফরে রয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। আর বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ওমরাহ পালন করতে গেছেন। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী গত মঙ্গল ও বুধবার কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন শেষে বৃহস্পতিবার অফিস করেন। গত শুক্রবার আবার নিজের নির্বাচনি এলাকায় চলে যান। গত শনিবার ঢাকায় ফিরে রাতে যান চীন সফরে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম গত বৃহস্পতিবার পিরোজপুরে নিজের নির্বাচনি এলাকায় গেছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেন। তিনি জানান, প্রতি বৃহস্পতিবারই মন্ত্রী নির্বাচনি এলাকায় যান এবং শুক্র থেকে শনিবার বা রোববার পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও উপমন্ত্রী এনামুল হক শামিম দুজনই গত সপ্তাহে নির্বাচনি এলাকায় ছিলেন। এর মধ্যে উপমন্ত্রী গত সপ্তাহে অফিস করেছেন মাত্র এক দিন। রোববার পানি ভবনে একটি অনুষ্ঠান থাকায় প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী সচিবালয়ে অফিস করেননি বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দুয়েক দিনের মধ্যে থাইল্যান্ড সফরের কর্মসূচি রয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনও এক সপ্তাহ ধরে নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করায় সচিবালয়ে অফিস করছেন না। আরও এক সপ্তাহ পর তিনি ঢাকায় ফিরবেন বলে তার অফিস থেকে জানানো হয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলম দস্তগীর গাজী গত মঙ্গলবার থেকে অফিস করছেন না। তার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈকত চন্দ্র হালদার জানান, নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি থাকায় মন্ত্রী অফিসে আসছেন না। কোনো জরুরি ফাইল থাকলে তারা মন্ত্রীর বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে আনেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংস্কারকাজ চলায় মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী আপাতত অফিস করছেন মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে। তবে রোববার তারা অফিস করেননি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। 

সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ৫টি মন্ত্রণালয়ের ৬ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর অফিস রয়েছে। রোববার অফিস করেছেন মাত্র ২ জন। এর মধ্যে একজন হলেন টিঅ্যান্ডটি মন্ত্রী (টেকনোক্র্যাট) মোস্তাফা জব্বার। তিনি দুপুর আড়াইটায় অফিসে আসেন। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে এক সপ্তাহ পর রোববার সকালে অল্প সময়ের জন্য অফিস করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এই ভবনের এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের বাইরে রয়েছেন। আর প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য রয়েছেন এলাকায়। এ ছাড়া যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল রয়েছেন জাপান সফরে। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান রয়েছেন খুলনায় নির্বাচনি এলাকায়। 

সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনে ৬টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রোববার ৩ জন মন্ত্রী অফিস করেছেন। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গত বৃহস্পতিবার চলে যান চট্টগ্রামে নির্বাচনি এলাকায়। শুক্র ও শনিবার নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পর রোববার সচিবালয়ে অফিস করেন। 

একইভাবে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও আইন মন্ত্রী আনিসুল হকও গত শুক্র ও শনিবার তাদের নির্বাচনি এলাকায় কর্মসূচি পালন করে রোববার অফিস করেন। আইন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিম জানান, আইনমন্ত্রী করোনার পর থেকে প্রতি শুক্র ও শনিবার নিয়মিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজের নির্বাচনি এলাকায় যান। সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। এটা মন্ত্রীর একটা রুটিন কাজের মতো। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং গত সোমবার থেকে নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করায় সচিবালয়ে অফিস করছেন না। মন্ত্রী নিয়মিত এলাকায় যান বলে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান খান জানান। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নির্বাচনি এলাকায় থাকার কারণে রোববার অফিস করেননি। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীও অফিসে ছিলেন না। 

এ ছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিদেশে রয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী চলতি মাসে অফিস করবেন না বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান রোববার অফিস করেছেন। তবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী গত সপ্তাহের পুরোটা সময় নির্বাচনি এলাকায় ছিলেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মেহেরপুরে নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করায় রোববার অফিস করেননি। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও রোববার অফিস করেননি। 

সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অফিসের প্রতি তেমন একটা আগ্রহ নেই। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে গত কয়েক মাস ধরে সুযোগ পেলেই ছুটে যাচ্ছেন নির্বাচনি এলাকায়। আবার শেষমুহূর্তে বিদেশ সফরের সুযোগও হাতছাড়া করছেন না। নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন, বিয়ে, জন্মদিন, সুন্নতে খতনা, মিলাদ মাহফিল, ওয়াজ মাহফিল, নৈশভোজ, স্কুল-কলেজের ক্রীড়া অনুষ্ঠান এবং নবীনবরণ অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন তারা। রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছেন। 

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া গণমানুষের দল। আওয়ামী লীগ সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকে। তিনি জানান, নিজের নির্বাচনি এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াবেন এটাই স্বাভাবিক। 

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এসব উন্নয়ন কর্মকা-ের বিষয়টি মন্ত্রী ও এমপিরা তাদের নির্বাচনি এলাকার মানুষের কাছে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তুলে ধরছেন। 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম জানান, তিনি সবসময়ই নির্বাচনি এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। নিয়মিত এলাকায় সাধারণ মানুষের খোঁজখবর রাখেন। এটা তিনি নিজের দায়িত্ববোধ থেকে করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দলের মন্ত্রী এমপিরা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন বলে জানান তিনি।


সময়ের আলো/আরএস/ 









https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo[at]gmail.com