ময়মনসিংহের ত্রিশালের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রোড। পানিতে তলিয়ে বেহাল দশায় পতিত হয়েছে পৌর শহরের প্রধান সড়কটি। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সম্প্রতি কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ এ সড়কে। তার ওপর সড়কজুড়ে অসংখ্য খানাখন্দে পানি ভরে গিয়ে ঝুঁকি বেড়েছে দুর্ঘটনার।
ভোগান্তিতে ক্ষুব্ধ পৌরবাসীর অনেকেই বলছেন, দেখে এটিকে এখন আর রাস্তা মনে হয় না; মনে হচ্ছে যেন ডোবা! এলাকাবাসীর অভিযোগ, বহু বছর ধরে সড়কটির এমন বেহাল অবস্থা থাকলেও বর্ষা মৌসুমের আগমুহূর্তে সড়ক পুনঃনির্মাণের কাজে হাত দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। সংস্কারকাজ চলমান থাকায় আরও খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এখন। ধীরগতির কাজের ফলে মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই দুঃসহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয়েছে পৌরবাসীকে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, পৌর শহরে প্রবেশের একমাত্র সড়ক এটি। এই একটি সড়ক ধরেই রয়েছে সরকারি নজরুল একাডেমি স্কুল, ত্রিশাল নজরুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাব রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা ভূমি অফিস, ত্রিশাল থানা, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠান, পৌর কার্যালয়সহ বড় মার্কেট এলাকা। প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পথ এটি।
সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, পৌর দরিরামপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে চিকনা মোড় পৌরসভার অংশটুকুর বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্ট গর্তগুলো আড়াল হয়ে গেছে জমে থাকা পানিতে ডুবে। সড়কের পাশঘেঁষে কোনোরকম এক পা-দু পা করে হেঁটে পার হচ্ছে পথচারীরা। বড় যানবাহন পার হতে পারলেও রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলের মতো ছোট যানগুলো সড়ক পার হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। তলিয়ে থাকা খানাখন্দ চোখে না পড়ায় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে হিমশিম খাচ্ছে চালকরা। গাড়ি উল্টে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে উপজেলা ভূমি অফিসের সামনের অংশ দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোন সড়ক। এসবের মধ্যেই সড়কের একপাশ বন্ধ করে চলছে ড্রেন নির্মাণের কাজ।
স্থানীয়রা জানান, তাদের সড়কের এ দুর্ভোগ আজকের না, বহু বছর ধরেই এটি খানাখন্দে ভরা। একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে ডোবায় পরিণত হয় সড়কটি। ৩ মাস আগে সংস্কারের কাজ শুরু হলেও একপাশে ড্রেনের কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে মাত্র। নির্মাণকাজ চলমান থাকার কারণে অবস্থা আরও ভয়াবহ এখন। পৌরবাসীর এসব ভোগান্তি দেখারও যেন কেউ নেই। হেঁটে চলা তো দূরের কথা, গাড়ি নিয়ে যাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়েছে এ সড়কটি ধরে।
কথা হয় রোকসানা আক্তার, হালিম মিয়া, ইয়াসমিন আক্তারসহ বেশ কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের অনেকে বলেন, ‘ছবি তুলে কী করবেন, ভাই? এই সড়কের কোনো মা-বাপ নেই। বহু বছর ধরেই এ অবস্থা। ৩ মাস আগে মেয়র সড়কের কাজ উদ্বোধন করলেও ড্রেনের কাজ ৫০ শতাংশও শেষ হয়নি। ড্রেনের কাজ শেষ হতেই ১ বছর লাগবে, সড়ক করতে তো তা হলে একযুগ লাগবে। সাধারণ মানুষের কষ্ট কেউ বোঝে না।
কথা হয় কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থীর সঙ্গেও। সাফওয়ান সাদাত, আরিশা নুর ও ফারিয়া জাহান নামের কয়েকজন বলেন, এ সড়কের অবস্থা অনেক খারাপ। প্রতিদিন আমাদের হেঁটে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় জুতা খুলে হাতে নিয়ে আসতে হয়। অনেকেই কাদা পানিতে পড়ে ব্যথা পেয়েছে।
হারুন অর রশিদ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই সড়কটিকে ত্রিশালের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত হাজারো মানুষের আনাগোনায় ব্যস্ত থাকে সড়কটি। সড়কের এমন দশা দেখার কেউ নেই। অনেক বছরের সমস্যা এটি। এই খানাখন্দ ও ডোবার জন্য রিকশাতেও ঠিক মতো চলা যায় না।
সড়কটি সংস্কারের কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার রোকেয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শওকত আলী লাভলু বলেন, সড়ক ও ড্রেনের কাজ শেষ হতে আরও ২ মাস সময় লাগবে। আমার জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সময় আছে। এ সময় তার কাছে সড়কের আরও তথ্য জানতে চাইলে, ‘সাইনবোর্ডে লেখা আছে দেখে নেন’ বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
সড়কের বেহাল দশার কারণে মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে, সে বিষয়ে অবগত আছেন জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ বলেন, এটি পৌরসভার কাজ। আমি মেয়রের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলব।
এ ব্যাপারে পরে যোগাযোগ করা হয় পৌর মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রোকেয়া এন্টারপ্রাইজ এ সড়কের ঠিকাদারি কাজটি পেয়েছে। ড্রেন ও আরসিসি সড়কের জন্য ব্যয় ধার্য হয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কাজের মেয়াদ নির্ধারিত হয়েছে এক বছর। মাত্র তিন-চার মাস অতিবাহিত হয়েছে। এ সময় কবে নাগাদ সড়কের সব কাজ শেষ হবে-প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলতে পারবে।
সময়ের আলো/আরএস/