ই-পেপার মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩
মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩

চট্টগ্রামে মধ্যবিত্তের কপালেও জুটছে না ফল
ইব্রাহিম খলিল চট্টগ্রাম
প্রকাশ: সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৬:২২ এএম  (ভিজিট : ৬৪২)
নিম্নবিত্তের ফলের স্বাদ নেওয়া দুরূহ হয়ে গেছে অন্তত আরও ১০ বছর আগেই। তখন সেটা গিয়ে ঠেকেছিল মধ্যবিত্ত পর্যন্ত। আর এখন সেই মধ্যবিত্তের কপালেও জুটছে না ফলের স্বাদ নেওয়া। কতিপয় উচ্চবিত্তের খাবার হয়ে গেছে এই ফল। ফলের ব্যবসা এখন তলানিতে। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ফলের খুচরা বাজার বহদ্দারহাট, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী ও পাইকারি ফলের বাজার রেয়াজুদ্দিন বাজারের ফল ব্যবসায়ীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামের ফলের বাজারে এখন বিদেশি কোনো ফল নেই। দেশি ফলেই চলছে এই ব্যবসা। আর দেশি ফল বিদেশি ফলের মতো সুমিষ্ট ও মানসম্মত না হওয়ায় ক্রেতাও নেই। তা ছাড়া বিদেশি ফলের সংকটে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে দেশি ফলের দাম। ফলে মধ্যবিত্ত যারা ফলের ক্রেতা ছিলেন তারা আর ফল কিনছেন না। এখন উচ্চবিত্ত শ্রেণির কিছু মানুষ মাঝেমধ্যে ফল কিনতে আসেন।

ফল ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ফলের ব্যবসার ধস শুরু হয় চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে। এ সময় ডলার সংকটে এলসি (ঋণপত্র) খোলার জটিলতায় ফল আমদানি নিরুৎসাহ করার কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এরপর থেকে ফলের বাজার অস্থির হতে শুরু করে। এই সময় মাত্র দুই-তিন দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশি ফলের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

এ অবস্থায় রমজানে খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ফলও পায়নি ক্রেতারা। তখন থেকে দেশি ফল বিক্রি করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ফলের ব্যবসার পরিস্থিতি ততই খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফল ব্যবসায়ীদের এখন প্রায়ই পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

বহদ্দারহাটের যমুনা ব্যাংক মার্কেটের নিচ তলার খুচরা ফল ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন বলেন, দেশের পাইকারি বাজারে এখন দেশে উৎপাদিত আপেল, মাল্টা, আঙুর, কমলা, আম, কলা, পেয়ারা ছাড়া আর কোনো ফল নেই। তাও আবার চাহিদার তুলনায় অনেক কম। দোকান প্রায় খালি। ফলে দামও অনেক বেশি।

তিনি বলেন, বাজারে এখন আপেল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০০ টাকায়, মাল্টা বিক্রয় হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৪০ টাকায়। আঙুর বিক্রয় হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া আমের কেজি ৩০০ টাকা এবং পেয়ারার কেজি ১৫০ টাকা। কলা ডজন ২৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে এখন। এভাবে ফলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারাও ফল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।

নগরীর চকবাজারের খুচরা ফল ব্যবসায়ী আবুল ফজলও বলেন একই কথা। তিনি বলেন, বাজারে ফল নেই। তাই ফলের দাম প্রায় দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে নিম্নবিত্তরা দূরের কথা, মধ্যবিত্তরা পর্যন্ত ফল খেতে পারছেন না।

ফলের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি ফলের ব্যবসায়ীরাও। পাইকারি ফল ব্যবসায়ী তসকির আহমেদ বলেন, চীন থেকে ফল আমদানি করা হয়। গত ফেব্রুয়ারি থেকে ফল আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে বাজারে বিদেশি আপেল, মাল্টা, সবুজ আঙুর, কালো আঙুর, নাশপাতি, বেদনা, ম্যান্ডারিন, ড্রাগন, সাম্মাম এবং বিদেশি জাতের আম কিছুই নেই।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে বিদেশি ফলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এই সময়ে বাজারে আমদানি করা ফল না থাকায় শুধুমাত্র দেশি ফল দিয়ে বাজারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাজারে সব ধরনের ফলের দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়ছে। অন্যদিকে ক্রেতা না থাকায় মার খাচ্ছেন ফল ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রায় ১৭ লাখ কেজি ফল কেনাবেচা থেকে প্রায় ২৮ কোটি টাকা আয় আসে ফল ব্যবসায়ীদের। দুই ঈদের সময় দৈনিক ফলের চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে প্রায় ৩৪-৩৫ লাখ কেজিতে ওঠে। কিন্তু আমদানি কমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, ডলার সংকট ও এলসি (ঋণপত্র) জটিলতার প্রভাব ছিল এতদিন। এখন সরকার বিদেশি ফল আমদানিতে নিরুৎসাহিত করায় আমদানি একেবারে কমে গেছে। ফলে দেশি ফলের ওপর নির্ভর করে চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ফল ব্যবসায়ীরা পথে নামবে।


সময়ের আলো/আরএস/ 










এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo[at]gmail.com