ই-পেপার মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩
মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩

তুমি, আমি আর বৃষ্টিচা
মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩, ২:৪২ এএম  (ভিজিট : ১৯৬)
আজকাল শহরের বুকে আগের মতো ঝুম বৃষ্টি নামে না। সবুজ পাতার ডগায় ছোট ছোট জলের ফোঁটায় মন আটকে যায় না আর। কচুপাতা মাথায় নিয়ে ছোট ভাইবোনের দস্যিপনাও চোখে পড়ে না খুব একটা। আজকাল কাদা মাঠে ফুটবল নিয়ে খেলতে নামে না কেউ তেমন। 

তোমার হাতে হাত রেখে বৃষ্টিতে ভিজি না কতটা বছর হয়ে গেল। খালি পায়ে ভেজা রাস্তায় হাঁটার সেই মুহূর্তগুলো যেন আমাদের ভালোবাসার একেকটি রূপকথার ইতিবৃত্ত। ধূসর সাদা রঙের খেলায় জীবনের সেরা সময়গুলো বোধহয় পেরিয়ে এসেছি।

অচরিত রহস্যময় বৃষ্টির ঘ্রাণ কেন জানি না অন্তরে নাড়া দিচ্ছে হঠাৎ। সেই চেনা স্পর্শে হৃদয় নীলে দোলা দিয়ে ‘ভালোবাসি’ বলতে খুব ইচ্ছে করছে। আকাশ কালো মেঘ দেখে রোমারের কবিতার ভাবনায় উদাস হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।

তোমার মনে আছে? প্রথম যেদিন তুমি আমায় দেখতে এসেছিলে, আকাশের বুক ফেটে কান্না ঝরেছিল প্রচণ্ড। মনে হচ্ছিল এই মেঘ বড্ড হিংসুটে। তুমি আসবে জেনে আজ তার মন খারাপ।
কিন্তু তুমি চেয়েছিলে বৃষ্টিটা ঝরুক আরও কতক্ষণ। অন্তত এই উছিলায় হলেও বাড়তি কিছু সময় আমার কাছাকাছি থাকতে চেয়েছিলে। 

সেদিন হয়তো তোমার মনের কথা বুঝতে পারিনি আমি। 

তবে তোমার চোখের ভাষা ঠিকই পড়েছিলাম। খাবার টেবিলে মাথা নিচু করে কখনো চোখের পাতা উঠিয়ে, কখনো গ্লাসে পানি খাওয়ার ফাঁকে তোমার এক পলকের চাহনি, অযুত কোটি বছর ধরে মায়ায় বেঁধে রাখার পবিত্র উপহার।
অথচ সেই তুমি কিনা এক সালামের জবাব দেওয়া ছাড়া আর কিছু বলতেই পারলে না সেদিন। আমিও পারিনি। জড়তা কাটিয়ে তোমার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে।

জানালার পর্দাটা সরিয়ে তোমার পছন্দের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি দেখতে দেখতে আনমনে সেই দিনগুলোর কথা ভাবছি। সঙ্গে দমকা হাওয়া এসে চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে। চোখ বুজে আমি তোমাকে অনুভব করতে পারছি। মুখের উপর থেকে চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে, কানে কুন্দ ফুল গুঁজে তুমি বলছো, ‘চলো আঁকি ভালোবাসার জলছবি।’

তুমি সহসাই বৃষ্টিতে ভিজতে চাও না, কিন্তু আমি ভিজতে পছন্দ করতাম। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল কোনো এক বৃষ্টিভেজা দিনে ক্যাম্পাসের পিচঢালা রাস্তায় হাঁটবো, তারপর টং দোকানের এক কাপ কড়া করে লেবুচা। সেই স্বপ্নের সারথি হয়েছিলে তুমি। বিয়ের পর তোমার পায়ে পা মিলিয়ে প্রথম ভিজেছিলাম পাক্কা দেড় ঘণ্টা।

শ্রাবণের অশান্ত সুরে প্রকৃতির সব পরিতাপ ধুয়ে কোলাহলহীন সেই বিকেলে তোমাকে চিনেছিলাম নতুন করে। পথের দুই ধারের সুবিশাল কদম, দেবদারু, গগনশিরীষ আর রেইনট্রি গাছ চুয়ে তখনও টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিলো। তুমি আমি হেঁটে চলেছি সেই পথ ধরে, ক্লান্তিহীন।

‘আচ্ছা, আমরা যে কদম ছাড়া বর্ষা যাপন করছি, বেচারা তো অভিমান করবে।’ তোমার এমন রসিকতায় খিক করে হেসে ফেলেছিলাম।

তুমি চলে গেলে কদম ফুল পাড়তে। বারণ করতেও ইচ্ছে করছিল না তখন। সবুজ পাতায় জড়ানো তিনটি কদম ফুল আমার হাতে তুলে দিয়ে বললে, ‘এবার একদম পারফেক্ট হয়েছে।’
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম-‘তুমি কি পাগল?’

‘উত্তরটা আপেক্ষিক। তবে কদম ছাড়া বৃষ্টিবিলাস অসম্পূর্ণ।’
বাঁশের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট একটা চায়ের দোকানের সামনে এসে আমরা থামলাম। দুইটি লেবুচা বলে বাইরে দাঁড়িয়ে ফুলগুলো দেখছিলাম। নীরবতা ভেঙে দার্শনিকের মতো তুমি বললে, ‘একটা জিনিস খেয়াল করেছো, বৃষ্টির অদ্ভুত একটা ব্যাপার আছে।’
‘কী সেটা?’

‘বৃষ্টি হচ্ছে ভুবন ভোলানো সেই প্রেমিকা, যার মায়ায় আটকে যায় সবাই। কিন্তু তার ক্ষণিকের অস্তিত্বে মন হারানোর বেদনা হয় তীব্র।’
‘তাই বুঝি?’

‘হ্যাঁ। এ সময় মনের গতি হয় দ্রুত। আর সব উচ্ছ্বাস থেমে গেলে বুকে বিঁধে বিষণ্ন স্মৃতি।’
মুগ্ধ হয়ে তোমার কথা শুনছিলাম। তখনই রজার মিলারের একটি চমৎকার উক্তি মনে পড়ল, ‘কিছু মানুষ আছে যারা বৃষ্টিকে অনুভব করে, বাকিরা শুধু শরীর ভেজায়।’

আমাদের চা রেডি হয়ে গেছে। দোকানের ছোট বালকটা এসে আমাদের চা দিয়ে গেল। চায়ে চুমুক দিতে দিতে দেখি আবার অঝোরে বর্ষণ শুরু হয়ে গেছে। তুমি নাম দিলে ‘বৃষ্টিচা’। 
আমি খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বৃষ্টিচা? সেটা আবার কী?’
‘যে চায়ে বৃষ্টির ছোঁয়া লেগে থাকে, সেটাই বৃষ্টিচা।’

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। এরপর চা শেষ করেই এক ছাতার নিচে দুজন মাথা গুঁজে রওনা দিলাম বাড়ির পথে। আলো আঁধারি সেই গোধূলির রং দেখতে দেখতে কখন যে জীবনের সায়াহ্ন এসে গেল বুঝতেই পারলাম না। ২৩ বসন্ত পেরিয়ে একইভাবে তোমাকে ভালোবাসি প্রিয়।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo[at]gmail.com