
আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা। জমি দখল করতে দিনে-দুপুরে বাড়িঘরে হামলা চালানো হচ্ছে। বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় ওই এলাকার অসংখ্য পরিবার। ভয়ে অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এসব অভিযোগের তীর রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং রংধনু গ্রুপের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) এসব অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হন ১৫-২০ জন ভুক্তভোগী। তাদের অভিযোগ, রফিকুল ইসলাম কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সব জমি দখল করতে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বাড়ি বাড়ি হামলা চালাচ্ছে। গত এক মাসে এভাবে অন্তত ৪০টি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করা হয়। তবে এসব ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। মামলাও নিচ্ছে না।
অভিযোগের সূত্র ধরে সরেজমিন রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় থমথমে অবস্থা। হামলার শিকার হয়েছে সাবেক ইউপি মেম্বার ও কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সেক্রেটারি মোশারফ ভূঁইয়ার বাড়িও। ভেঙে ফেলা হয়েছে দ্বিতল বাড়িটির গেট, জানালার কাচ, ভেতরের আসবাব।
মোশারফ ভূঁইয়ার মামাতো ভাইয়ের স্ত্রী নার্গিস হামলা চালানো বাড়িটি দেখিয়ে বলেন, অনেক দিন ধরেই রফিক বাড়িটি ছেড়ে দিতে চাপ দিয়ে আসছিল। রাজি না হওয়ায় ১৫ দিন আগে তার ভাড়া করা লোকরা অস্ত্র নিয়ে হাজির হয়। তখন ভয়ে আমরা সবাই পালিয়ে যাই। এরপর আরও কয়েকবার এসে বিভিন্ন রকম হুমকি দিয়ে যায়। সেই থেকে পুরুষ মানুষরা বাড়িছাড়া। সাত-আটজন মেয়ে আছে বাড়িতে। তাদের নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকি।
পাশে আরও কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালানো ভবন চোখে পড়ে। এ ছাড়া অনেক মাটির বাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ ঘটনায় ভয়ে স্থানীয় লোকজন মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই নারী বলেন, আশপাশে রফিকের লোকজন আছে। রফিকের ভয়ে এসব ঘরের লোকজন বাড়িঘর ফেলে পালিয়েছে। এলাকা ছেড়েছে আজিজুল্লা, ফজুল, মোক্তার, আমারত, ছোমেদ আলী, কবিরসহ ৬০-৭০টি পরিবার। দুদিন আগে-পরে আমাদেরও হয়তো এলাকা ছাড়তে হবে। গভীর রাতে ঘরে ঢুকে রফিকের লোকজন হুমকি দিয়ে যায়। মারধর করে।
মোশারফের ভাই আলী আসগর বলেন, নামমাত্র মূল্যে ঘরবাড়ি কিনে নিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিক সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে অনেক দিন ধরে হামলা-মামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ করে। তারপরও আমাদের পাঁচ ভাইয়ের বাড়িসহ এই এলাকার অন্তত ৪০টি বাড়িতে রফিকের লোকজন হামলা চালিয়েছে। শনিবার সকালে ১৫০-২০০ লোক নিয়ে আমার নতুন বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় এমপি এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থন থাকায় সে এগুলো করার সুযোগ পাচ্ছে। তিনিই বিএনপি সমর্থক রফিককে আওয়ামী লীগের পতাকা দিয়েছেন।
পশ্চিমগাঁও কায়েতপাড়ার বাসিন্দা ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার আবুল বাশার টুকু বলেন, গত ২৪ অক্টোবর ও ১৩ নভেম্বর দুই দফা আমার বাড়িতে লুটপাট করা হয়েছে। জোর করে গরু, ছাগল, টিভি, ফ্রিজ সব নিয়ে গেছে। পুলিশ নীরব। থানায় গেলে মামলা নেয় না। পরে আদালতে গিয়ে মামলা করেছি। বিষয়টি দলের সিনিয়র নেতাদের জানিয়েছি।
এদিকে মোশারফ ভূঁইয়া বলেন, তার পাঁচ ভাইয়ের বাড়িঘরে হামলায় অন্তত ৮-১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর বাইরে গত এক মাসে অন্তত ৪০টি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে রফিক বাহিনী। থানা মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়ে আদালতে গিয়ে পাঁচটি মামলা করেছি।
বাড়িঘর ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে রূপগঞ্জ থানার ওসিকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, অতি সম্প্রতি বাড়িঘর ভাঙচুরের কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে কয়েক দিন আগে একটি বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ পেয়েছি। তবে ভুক্তভোগী পরিবার মামলা করতে আসেনি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
সময়ের আলো/জিকে