প্রকাশ: রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩, ১২:২৩ এএম (ভিজিট : ১৯২)

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বা পরামর্শকৃত মাত্রার চেয়েও বেশি ওষুধ নিয়ম না মেনে ইচ্ছেমতো সেবন করার প্রবণতা বাংলাদেশে ব্যাপক। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার।
দৈনিক সময়ের আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর সর্বত্র চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ফার্মেসিগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হচ্ছে। অথচ হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না। অন্যদিকে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধে চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে ‘ঔষধ ও কসমেটিকস বিল ২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ওই বিলেও বলা হয়েছে, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, একই সঙ্গে ফার্মেসির লাইসেন্স বাতিল করার নির্দেশনা রয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যে হারে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হচ্ছে, একসময় তা আর কোনো রোগে কাজ করবে না। মানুষের জীবন রক্ষায় যেমন অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প নেই, তেমনি অসচেতনভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে জীবন বিপন্নও হতে পারে।
এ বিষয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, সাধারণ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক খেতে খেতে নিজেদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স তৈরি করে ফেলছে। একসময় আর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। তখন কোনো ওষুধই কাজ করবে না; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি।
বর্তমানে অনেক কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিককে সংক্রমণ চিকিৎসায় অকার্যকররূপে পাওয়া যাচ্ছে; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি ভয়াবহ হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি থেকে ব্যবহার পর্যন্ত জড়িত সবার সচেতন থাকা জরুরি। যদি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধ করা না যায় দেশ এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ব্যাপারটি খুবই গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। এ থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে অ্যান্টিবায়োটিক বিপণনেও নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরি। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি আইনত নিষিদ্ধ, কিন্তু তা মেনে চলা হচ্ছে না। নিষেধ অমান্যকারীদের শাস্তির নিশ্চিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র লেখার সময় রোগীর প্রয়োজন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া কাম্য। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। চিকিৎসক যে মাত্রা ও মেয়াদ নির্ধারণ করে দেবেন, তা সম্পূর্ণভাবে মেনে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। তা হলেই কেবল অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে বাজার নজরদারিতে ওষুধ প্রশাশনের বেশি কঠোর হওয়া উচিত। মাঝেমধ্যে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, নকল ওষুধে বাজার সয়লাব। যা সেবন করার ফলে রোগীর আরও নতুন উপসর্গ দেখা দেয়। তাই নকল ওষুধ সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় আনতে হবে। যেসব দোকানি ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা অতীব জরুরি। বাজার তদারকিতে প্রয়োজনে ঝটিকা অভিযান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। রোগীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র এবং খাওয়ার নিয়মে সচেতন হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন-এ প্রত্যাশা করছি।
সময়ের আলো/আরএস/