ই-পেপার মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩
মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩

রেকর্ড আর বিতর্কের বিশ্বকাপ
আশরাফুল ইসলাম জাফরী
প্রকাশ: রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩, ১:২০ এএম  (ভিজিট : ২০৬)
ক্রিকেট রেকর্ডের খেলা। রেকর্ডের রোমাঞ্চে এবারের বিশ্বকাপ ছাপিয়ে উঠেছে অতীতকে। ক্রিকেটের রেকর্ড বই ব্যস্ত থেকেছে এবারের আসরে। রেকর্ডের পাশাপাশি বড় ঐতিহাসিক বিতর্কও হয়েছে এবারের বিশ্বকাপের সঙ্গী। ক্রিকেটের দেড়শ বছরের ইতিহাসে কখনো যা ঘটেনি সেটাই ঘটেছে এবারের বিশ্বকাপে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে টাইমড আউট হন লঙ্কান অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। এই আউট নিয়ে পুরো ক্রিকেট দুনিয়া বিভক্ত। যতদিন ক্রিকেট থাকবে বোধকরি ততদিন এই আউট উঠে আসবে আলোচনায়।

ইতিহাসের প্রথম টাইমড আউট : ২০২৩ বিশ্বকাপের ৩৮তম ম্যাচটি ক্রিকেট ইতিহাসে লেখা থাকবে আলাদা করেই। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচে ক্রিকেট বিশ্ব প্রথমবারের মতো সাক্ষী হয়েছে টাইমড আউটের। লঙ্কান ইনিংসের ২৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাকিব আল হাসানের বলে আউট হন সামারাবিক্রমা। এরপর ক্রিজে আসেন ম্যাথুস। এরপরই যত বিপত্তি। ম্যাথুস যে হেলমেট নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তার ফিতা খুব সম্ভবত ছেঁড়া ছিল। টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা যায়, যে ফিতা দিয়ে হেলমেট আটকে রাখা হয় সেটি বাঁধতে গিয়ে ছিঁড়ে যায়। পরে তার সতীর্থ আরেকটি হেলমেট নিয়ে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আম্পায়ার মারাইজ ইরাসমাসের কাছে আবেদন করেন টাইমড আউটের। মানে নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে ব্যাটিং করতে নামেননি ম্যাথুস। বাইলজ অনুসারে আম্পায়ার মারাইজ ইরাসমাস টাইমড আউট ঘোষণা করেন ম্যাথুসকে।

শচিনের জোড়া রেকর্ডের মালিক কোহলি : এবারের আসরে ইডেন গার্ডেনসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজের ৩৫তম জন্মদিনে ব্যাটিং বিস্ময় শচিন টেন্ডুলকারের ৪৯ ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড স্পর্শ করেন ভারতীয় রানমেশিন বিরাট কোহলি। তার অর্জনে ভাগ বসানো কোহলিকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত শচিন টুইটার বার্তায় লেখেন, ৪৯ থেকে ৫০-এ যেতে আমার লেগেছিল ৩৬৫ দিন। আশা করছি, অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই তুমি ৫০-এ পৌঁছাবে। সত্যি হয়েছে ব্যাটিং মাস্টার শচিনের কথাই। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শচিনের মাঠে শচিনের সামনেই ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ৫০ সেঞ্চুরির মালিকানা নিজের করে নিয়েছেন কোহলি।

বুধবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম সেমিফাইনালে ১১৩ বলে ১১৭ রানের ইনিংস খেলেন কোহলি। এর মধ্য দিয়ে শচিনের দুটো বিরল রেকর্ডের মালিক বনে গেছেন কোহলি। ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির পাশাপাশি এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মাইলফলকও পেরিয়েছেন কোহলি। ২০০৩ সালে এক বিশ্বকাপে ১১ ইনিংসে ৬৭৩ রান সংগ্রহ করে এই রেকর্ডটি দখলে রেখেছিলেন শচিন। ১০ ইনিংসেই সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড গড়লেন কোহলি। এই বিশ্বকাপে ফাইনালের আগ পর্যন্ত তার সংগ্রহ ৭১১ রান। এক বিশ্বকাপে প্রথম কোনো ব্যাটার হিসেবে সাতশর ক্লাবের উদ্বোধন করলেন কোহলি।

রোহিতের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি ও ছক্কার রেকর্ড : ব্যাটিং বিস্ময় শচিন টেন্ডুলকার ও ডেভিড ওয়ার্নারকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এবারের বিশ্বকাপ শুরুর আগ পর্যন্ত ৬ সেঞ্চুরি নিয়ে শচিন ছিলেন সবার ওপরে। কিন্তু গত বিশ্বকাপেই সেই রেকর্ডকে হুমকির মুখে ফেলে দেন রোহিত। ২০১৯ বিশ্বকাপে করেন ৫ সেঞ্চুরি। এবারে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮৪ বলে ১৩১ রানের ইনিংস খেলে বিশ্বকাপে ইতিহাসে একমাত্র ব্যাটার হিসেবে ৭ সেঞ্চুরির মালিক এখন রোহিত। চলতি আসরেই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১০৪ রানের ইনিংস খেলে শচিনের ছয় সেঞ্চুরির রেকর্ড স্পর্শ করেন ওয়ার্নার। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির সঙ্গে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডের মালিকানাও এখন রোহিতের।

ম্যাক্সওয়েলের দ্রুততম সেঞ্চুরি : এবারের আসরে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙেছে দুবার। প্রোটিয়া ব্যাটার এইডেন মার্করামের হাত ঘুরে এই রেকর্ডের মালিক এখন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এবারের আসরের আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক ছিলেন আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েন। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার দিনে ব্যক্তিগত ইতিহাসও গড়েছিলেন এই আইরিশ ব্যাটার। মাত্র ৫০ বলে সেঞ্চুরি গড়ে রেকর্ড গড়েন তিনি। এবারে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই রেকর্ড ভাঙেন মার্করাম। ১৪ চার আর ৩ ছয়ে ৪৯ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন এই প্রোটিয়া ব্যাটার। এই রেকর্ডটি স্থায়িত্ব পায় মোটে দুই সপ্তাহ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে রেকর্ড বুকে নিজের নাম লেখান ম্যাক্সওয়েল। মাত্র ৪০ বলে ৯ চার ও ৮ ছক্কায় দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন ম্যাক্সওয়েল।

এক ইনিংসে প্রোটিয়াদের সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি : এই বিশ্বকাপে একই ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল অস্ট্রেলিয়ার দখলে। ২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪১৭ রান করে এই রেকর্ড গড়ে অজিরা। এবারে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই রেকর্ড বইয়ে নতুন করে নিজেদের নাম লেখে দক্ষিণ আফ্রিকা। দিল্লিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়ারা সংগ্রহ করে ৪২৮ রান।

আর সর্বোচ্চ রানের সৌধ গড়ার পথে বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক ইনিংসে তিন সেঞ্চুরির বিরল কীর্তি গড়ে প্রোটিয়ারা। একই ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার তিন ব্যাটার কুইন্টন ডি কক, র‌্যাসি ভ্যান ডার ডুসেন ও এইডেন মার্করাম করেন সেঞ্চুরি। এক দিনের ক্রিকেটে চতুর্থবারের মতো ঘটে এমন ঘটনা। কাকতালীয়ভাবে তিনবারই নাম জড়িয়ে আছে প্রোটিয়া ব্যাটারদের।

এক ম্যাচে চার সেঞ্চুরি : এক দিনের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক ম্যাচে চার সেঞ্চুরির দেখা মিলেছে বিশ্বকাপের মঞ্চে। পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচে চার সেঞ্চুরির দেখা পায় এক দিনের ক্রিকেট। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার হয়ে সেঞ্চুরি করেন কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। সেই রান তাড়া করতে গিয়ে সেঞ্চুরির দেখা পান পাকিস্তানের আবদুল্লাহ শফিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান।

সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় : এবারের বিশ্বকাপে গড়া প্রতিটি রেকর্ডেই যেন পাঞ্চিং ব্যাগ হয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ইতিহাসে লঙ্কানদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়েছে পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমার সেঞ্চুরিতে ৩৪৪ রান করে লঙ্কানরা। শফিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে ভর করে ১০ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। এ ছাড়াও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ৪০১ রান টপকানোর চ্যালেঞ্জে একটা সময় পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ২৫.৩ ওভারের ২০০/১। এরপর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে গেলে ডিএলএস মেথডে ২১ রানে জয়লাভ করে পাকিস্তান।

সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয় : এবারের আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপে তিন শতাধিক রানের ব্যবধানে জয়ের ঘটনা ছিল না একটিও। অথচ এবারে তিন শতাধিক রানের ব্যবধানে দুটো জয় দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। এর মধ্যে সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের রের্কডটি গড়েছে অস্ট্রেলিয়া। দিল্লিতে ম্যাক্সওয়েলের দ্রুততম সেঞ্চুরি গড়ার রেকর্ডের দিন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩০৯ রান ব্যবধানে জিতেছে অজিরা। আগে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ৩৯৯ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ৯০ রানে গুটিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। এ ছাড়াও শ্রীলঙ্কাকে ৩০২ রানে হারায় ভারত।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo[at]gmail.com