প্রকাশ: সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩, ১১:৪২ পিএম (ভিজিট : ২০০)

প্রাণির চিকিৎসায় ৩৪ ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ।
সোমবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর একটি বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি শিল্পে নানা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে। এসব প্রাণি মাংস খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স কমাতে আমরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এর মধ্যে প্রাণি চিকিৎসায় ব্যবহৃত ফসফোমাইসিন, কলিস্টিনসহ ৩৪ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক বাতিল করেছি। নিবন্ধিত ভেটেনারির ব্যবস্থাপত্র ছাড়া প্রাণি চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না। যে কোন স্থানে ঔষধ বিক্রির জন্য ড্রাগ লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। ড্রাগ লাইসেন্স ব্যতীত যদি কেউ প্রাণি খাদ্য বিক্রয় করে তাদের দুই বছরের কারাদন্ড অথবা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে হবে।
জেনারেল ইউসুফ বলেন, ঔষধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩ মোতাবেত প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সহজে অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্তের জন্য প্রাইমারী ও সেকেন্ডারী পাকেজিং লাল স্ট্রিপ এবং বড় করে অ্যান্টিবায়োটিক লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সেমিনারের শুরুতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিডিসি শাখার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. অনিন্দ্য রহমান।
তিনি বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হলো বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটা ইদিমধ্যে বৈশিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বলা হয় তখন যথন আমাদের শরীরে ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস বা অনুজীব গুলো বাড়তে থাকে এবং এর জন্য আমরা যে ওষূধ গুলো দেই সে ওষুধ গুলো যখন আর কাজ করে না তখন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বলে।
ডা. অনিন্দ্য রহমান বলেন, আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্যবিধি, পানি ও পয়নিষ্কাষণ নিরাপদ রাখতে পারতাম তাহলে বর্তমান রোগীর সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমে যেত। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের কারণে বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে সাব সাহারা আফ্রিকা। প্রতি লাখে মৃত্যু হয় প্রায় ২৪ জনের (২৩.৭)। দক্ষিণ এশিয়ার মৃত্যু ২১ দশমিক ৫ জনের। সবচেয়ে কম মৃত্যু উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে ১১ দশমিক ২ জনের।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সামান্য অসুস্থ হলে আমরা ওষুধের দোকান থেকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটি সেবন করি। এতে রোগ তো সারেই না, শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাই অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে আরও সর্তক হবে হবে। বিশেষ করে রোগী ও চিকিৎসকদের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, কার্যক্ষমতা কমেছে এমন ৩৭টি অ্যান্টিবায়োটিক চিহƒত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬টি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে। এদিকে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরিও হচ্ছে না। সুতরাং ভবিষৎ অনেক খারাপ এটি বলায় যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা, প্রেসক্রিপশন ছাড়া এর যথেচ্ছা ব্যবহার এর মূল কারণ। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কমাতে হলে এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম।
সময়ের আলো/এম