উত্তরের জেলা গাইবান্ধার প্রকৃতিতে ঘনকুয়াশা জানান দিচ্ছে শীত আসছে। সকাল আর সন্ধ্যায় শীত অনুভূতও হচ্ছে। যদিও শীত এখনও তীব্র হয়নি। তবে উত্তরের কনকনে শীত মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। শীতকে সামনে রেখে জমে উঠেছে গাইবান্ধার শীতবস্ত্রের দোকানগুলো।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। মাত্র ৩ থেকে ৩০০ টাকায় কেনা যাচ্ছে সোয়েটার। মনে হয়, এটা শায়েস্তা খার আমলের গল্প। না, তা নয়। ছোট-বড় সবার পরিচিত গাইবান্ধা শহরের জিপি মার্কেটে সর্বনিম্ন ৩ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকার মধ্যে যে কেউ কিনতে পারে পছন্দের সোয়েটার, এমনটাই বলছিলেন ব্যবসায়ী মাসুদ মিয়া। মাসুদ ২২ বছর ধরে ব্যবসা করেন জিপি মার্কেটে।
তিনি বলেন, গাইবান্ধায় সাধারণ মানুষের শীতবস্ত্র কেনাকাটার মার্কেট মূলত গাউন পট্টি, সংক্ষেপে অনেকে বলেন জিপি মার্কেট।
শার্ট, প্যান্ট, জামাকাপড়সহ গাউন পট্টিতে সারা বছর পুরোনো পোশাক কেনাবেচা হলেও শীত মৌসুমে মানুষের ভিড় জমে শীতবস্ত্রের জন্য। এখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সি নারী-পুরুষের সোয়েটার এবং জ্যাকেটসহ সব ধরনের পুরোনো শীতবস্ত্র পাওয়া যায়।
গাইবান্ধা পৌরসভার পেছনে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের বাসভবন-সংলগ্ন মার্কেটটি পুরোনো কাপড় এবং শীতবস্ত্রের জন্য বিখ্যাত।
এই এলাকার বাসিন্দা এবং রাজনীতিক জিয়াউল হক জনি বলেন, একটা সময় মূলত নিম্নআয়ের মানুষ এই মার্কেট থেকে বেছে বেছে কম দামে পছন্দের পোশাক বা শীতবস্ত্র সংগ্রহ করতেন। এখন নিম্নবিত্ত শুধু নয়, মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত সবাই এখান থেকে পছন্দসই জামাকাপড় বা শীতবস্ত্র সংগ্রহ করেন। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এ তিন মাস ভালো কেনাবেচা হয়।
জিপি মার্কেটের ব্যবসায়ী মিনার ও মাসুদ মিয়া জানান, তারা চট্টগ্রাম থেকে বেল (গাঁইট) পদ্ধতিতে এসব পোশাক সংগ্রহ করেন। নিয়ে আসার পর ক্রেতারা পছন্দের পোশাক সংগ্রহ করেন। ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, গত বছরের চেয়ে এবার বেলে দুই থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা কেজি পদ্ধতিতে ওজন করে পোশাক বা শীতবস্ত্র সংগ্রহ করেন। এক বেলে জামা-কাপড় বা শীতের পোশাক থাকে ৬০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত। সোয়েটার বা জ্যাকেটের আবার আলাদা, আলাদা গাঁইট থাকে।
গত বছর জ্যাকেটের গাঁইট ছিল ৮ থেকে ১৮ হাজার, এবার ১২ থেকে ২৭ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। গতবার সোয়েটারের গাঁইটের দাম ছিল ৬ থেকে শুরু করে ১৭ হাজার পর্যন্ত। এবার দাম উঠেছে ৮ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসার পর ছোট-বড় এবং ছেঁড়া বা ফাটা সব বাছাই করার পর খুচরা পর্যায়ে জ্যাকেট বিক্রি হয় ৩০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায়। আর সোয়েটার পাওয়া যায় ৩ থেকে ৩০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশ স্বাধীনের আগে থেকে এখানে পুরোনো কাপড় বেচাকেনা হয়, তবে দিনদিন চাহিদা কমছে।
সময়ের আলো/জেডআই