ই-পেপার মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩
মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ২০২৩

স্বল্প পরিসরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ডিসেম্বরে শুরু করা যাচ্ছে না
এমএকে জিলানী
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩, ২:২৬ এএম  (ভিজিট : ১৪৪)
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সহযোগিতায় আসছে ডিসেম্বরে স্বল্প পরিসরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ-মিয়ানমার। কিন্তু সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অতি মাত্রায় অস্থিতিশীল হয়ে ওঠায় পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। এর আগেও দুবার দিন-তারিখ ঠিক করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।

এদিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে সংঘাত লেগেই আছে। গত রোববার দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় সৈয়দ আমিন নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বিজিবি মহাপরিচালক গতকাল সোমবার তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। এতে দেশটির জান্তা সরকার সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে শান রাজ্যে চীন সীমান্তে বিদ্রোহী সশস্ত্র একাধিক গোষ্ঠী তৎপরতা শুরু করায় বেকায়দায় পড়েছে জান্তা সরকার। ফলে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট এই বলে সতর্ক করেছেন, শান রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পুরো মিয়ানমারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে দেশটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এই অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও পড়েছে। ফলে ডিসেম্বরে স্বল্প পরিসরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন এই তিন দেশের ত্রিপাক্ষিক উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করা যায় দ্রুত সময়েই রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন শুরুর পর রাখাইনে রোহিঙ্গারা কি কি সুযোগ-সুবিধা পাবে, সে সম্পর্কে ব্রিফ করতে এবং অসমাপ্ত ভেরিফিকেশন কাজ শেষ করতে গত ৩১ অক্টোবর থেকে গত ১ নভেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফে দ্বিতীয় কাম অ্যান্ড টক সফরের আয়োজন করা হয়। এ সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তবে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় রাখাইনে জাতিসংঘের সরাসরি সম্পৃক্ততা ইত্যাদি প্রশ্নের তাৎক্ষণিক জবাব দিতে পারেননি মিয়ানমার প্রতিনিধি দল। এসব বিষয়ে তাদের অবস্থান পরে জানাবেন বলে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আশ্বস্ত করেছে।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত ৯ নভেম্বর কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সঙ্গে এক আলোচনায় স্বল্প পরিসরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে বলেন, ‘চীন চায় যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিয়ে কাজ করছে চীন। অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী তাদের নিজের দেশে ফিরতে চায়। কিন্তু বিষয়টি খুবই জটিল। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রয়োজন।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, স্বল্প পরিসরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে না, এটা আমি আগেই বলেছি। জোর করে বা প্রলুব্ধ করে ২০০ বা ৫০০ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করে বাংলাদেশের কোনো লাভ নেই। এ ধরনের প্রত্যাবাসন মূলত মিয়ানমারের একটা ফাঁদ। 

সাবেক রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের শুভবুদ্ধির উদয় হতে হবে। কারণ, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব মিয়ানমার নিশ্চিত না করলে প্রত্যাবাসন কখনো টেকসই হবে না।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্য জাফর আহমেদ আবদুল গণি দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, জোরপূর্বক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কখনো টেকসই হবে না। স্বল্প পরিসরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নয়, সব রোহিঙ্গাই তাদের নিজ জন্মভিটায় ফিরতে চায়। তার আগে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

সময়ের আলোর উখিয়া সংবাদদাতা জানান, উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় গত রোববার সৈয়দ আমিন নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।

উখিয়া থানার ওসি মো. শামীম হোসেন জানান, গত রোববার রাত ৮টার দিকে উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডিওসি ব্লকের মাঝামাঝি সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক ক্যাম্পের বি ব্লকের বাসিন্দা ছিলেন। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।

সময়ের আলোর টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান গতকাল সোমবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান বর্তমান সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্ভূত সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বিজিবি মহাপরিচালকের এই সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo[at]gmail.com