প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩, ৩:০৪ এএম (ভিজিট : ১৬২)
অনেকটা দুর্ঘটনাক্রমেই অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের দায়িত্ব পান প্যাট কামিন্স। যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে ২০২১ সালে টেস্ট অধিনায়কত্ব হারান টিম পেইন। তড়িঘড়ি করে তখন কামিন্সকে দায়িত্ব দেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। পরের বছর ওয়ানডে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের অবসরে ৫০ ওভার ক্রিকেটের নেতৃত্বভারও পান কামিন্স। কোনো ফাস্ট বোলার হিসেবে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার দলের নেতা হন তিনি। দুই বছর বাদে সেই কামিন্সই আহমেদাবাদে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরেছেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ষষ্ঠ শিরোপা জয়ের পর তিনি বসেছেন অ্যালান বোর্ডার, স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং এবং মাইকেল ক্লার্কদের মতো বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তিদের কাতারে।
অতীতে অনেক ট্রফি জয়ের সুবাদে অনেক উচ্চতায় আছে অস্ট্রেলিয়া। নেতৃত্বভার পেয়ে সেটিকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন কামিন্স। এ সময় তার নেতৃত্বে অ্যাশেজ ধরে রাখে অজিরা। ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জেতে অস্ট্রেলিয়া। এরপর স্বাগতিক ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে ফাইনালের নায়কে পরিণত হন হেড। তাতে ঢাকা পড়ে যায় কামিন্সের দুর্দান্ত বোলিং। পুরো টুর্নামেন্টে বল হাতে সেভাবে আলো ছড়াতে না পারলেও ফাইনালে কার্যকরী দুটি উইকেট নেন তিনি। প্রথমে শ্রেয়াস আইয়ারকে দ্রুতই প্যাভিলিয়নে ফেরান। এরপর ভয়ংকর হয়ে ওঠা বিরাট কোহলির উইকেটটিও তুলে নেন অজি অধিনায়ক। ১০ ওভার বল করে ৩৪ রান খরচায় নেন দুই উইকেট। তার বোলিংয়ের বড় বিস্ময় ছিল, একটি বাউন্ডারিও হজম না করা। ভারতের মতো ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে এটি বিরলই বটে। যেন এমন বোলিংয়ের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। সেটি তার কথাতেও পরিষ্কার, ‘আমরা আমাদের সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলাম। আজ (রোববার) সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সেরাটা দিয়েছে। তাদের নিয়ে আমি গর্বিত।’
ফাইনাল জয়ের পর প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন কামিন্স। দেশটির সাবেক অনেক ক্রিকেটার তো বলেই দিয়েছেন ছয় শিরোপার মধ্যে কামিন্সেরটাই সেরা। সুন্দর বাচনভঙ্গি, ভদ্র আচরণ, তীক্ষবুদ্ধি আর ঠান্ডা মাথার গুণাবলির জন্য আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন কামিন্স। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার সাহসেরও তারিফ করেন অনেকে। ফাইনালেই একটি বিষয় ধরা যাক। টস জিতেও ভারতের মতো ব্যাটিংসমৃদ্ধ দলকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছেন কামিন্স। কতটা সাহস আর আত্মবিশ্বাস থাকলে এমনটি করা যায়, সেটা বিস্তর আলোচনার দাবি রাখে। যেখানে চলতি বিশ্বকাপে পাঁচবার আগে ব্যাটিং করে চারবারই তিনশোর্ধ রান করেছে রোহিত শর্মার দল। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৪১০ রান ছিল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করে ভারত করেছিল ৩৯৭ রান। সেটাও মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে। কিন্তু এসব কিছু ধর্তব্যের মধ্যেই নেননি কামিন্স। তিনি তো কেবল বিশ্বকাপ জয়ের কথাই ভেবেছিলেন। উইকেট কেমন হবে, টস জেতার গুরুত্ব কেমন, বিপুল সংখ্যক দর্শককে কীভাবে সামলাবেন, ফাইনালের আগে এসব আলোচনাতে কামিন্স বলেছিলেন, ‘কোনো কিছু নিয়েই আমরা চিন্তিত নই। ফাইনালে পিচ, টস কোনো গুরুত্ব বহন করে না। আমরা ট্রফি জিততে চাই। মাঠে সবকিছুর জন্য আমরা প্রস্তুত থাকব। আর ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শককে চুপ করিয়ে দেওয়ার মতো তৃপ্তি কিছুতেই নেই।’
ভারতের ইনিংসের ২৯তম ওভারে কোহলির উইকেট উপড়ে ফেলে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের বিপুল সংখ্যক দর্শককে ঠিকই চুপ করিয়ে দেন কামিন্স। এরপর তো নীল সমুদ্রে পরিণত হওয়া স্টেডিয়ামকে চূড়ান্ত হতাশায়ও ডোবান অজি কাণ্ডারি।
বোলিং আর অধিনায়কত্ব নিয়ে কথা হলো। কিন্তু ব্যাটার কামিন্স যে ছিলেন আরও বেশি স্মরণীয়। রবিন লিগের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জেতান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। কিন্তু কামিন্সের ৬৮ বলের ইনিংসটিকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনালেও আরও একবার ব্যাট হাতে দলকে ভরসা দিয়েছেন তিনি। ২৯ বলে ২২ রানের ইনিংসটি হয়তো বড় নয়, তবে জয়ের জন্য যা হয়ে ওঠে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মোট কথা, দলের প্রয়োজনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠাটাই তো একজন নেতার আসল কাজ।
সময়ের আলো/জেডআই