ই-পেপার বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৩
বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৩

টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
৭ দিনে প্রায় ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩, ৯:১১ পিএম আপডেট: ২১.১১.২০২৩ ৯:১৪ পিএম  (ভিজিট : ১৭৯)
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৪ নভেম্বর থেকে মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু শহর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনো পণ্য আসছে না বলে জানা গেছে। একইভাবে টেকনাফ থেকেও পণ্য মিয়ানমারে যাচ্ছে না।

টেকনাফ স্থলবন্দর-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষের কারণে হঠাৎ আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে।

টেকনাফ স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ। এ কারণে রাখাইনের জেলা শহর মংডু থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আসা বন্ধ হয়ে গেছে। সাত দিন ধরে এ বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মূলত বন্ধই রয়েছে। এতে করে প্রতিদিন গড়ে তিন কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে ৪৭ টনের একটি হিমায়িত মাছের চালান টেকনাফে এসেছিল।

মিয়ানমারের মংডুর অবস্থান টেকনাফের উল্টো পাশে নাফ নদীর ওপারে। টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে শহরটির দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা।

টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাত দিন ধরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও আগে আসা আদা, নারিকেল, আচার, সুপারি, শুঁটকিসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বন্দরের জেটি ফাঁকা পড়ে আছে। কোনো কার্গো ট্রলার বা জাহাজ নেই। কার্যক্রম না থাকায় বন্দরের কর্মরত শ্রমিকেরা অলস সময় পার করছেন।

এদিকে এই স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে টেকনাফ-কক্সবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক দোকানপাটও প্রায় বন্ধ। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরের প্রধান ফটকে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের জটলা দেখা গেলেও সোমবার (২০ নভেম্বর) কোনো যানবাহন চোখে পড়েনি। নাফ নদীতেও নেই পণ্যবোঝাই ট্রলার-জাহাজ। তবে বন্দরের খোলা জায়গা ও ওয়্যারহাউসে মিয়ানমার থেকে আগে আসা বিভিন্ন ধরণের কাঠ, আদা, শুঁকনা সুপারি, শুঁটকি, নারিকেল, আচারসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য মজুত রয়েছে।

টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুনেছি, তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ চালু হবে তা বলা যাচ্ছে না। এতে করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বন্দরকেন্দ্রিক এক ব্যবসায়ী বলেন, ১৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আকিয়াব শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংঘর্ষ চলছে। দেশটির স্থানীয় প্রশাসন আকিয়াব শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

স্থলবন্দরের শ্রমিকনেতা আলী আজগর মাঝি বলেন, বন্দরে মালামাল ওঠা-নামার কাজের জন্য ছয় শতাধিক শ্রমিক রয়েছেন। টানা সাত দিন কাজ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এসব শ্রমিকরা। আয় না থাকলে অনেকের ঘরে চুলা জ্বলে না।

মিয়ানমার থেকে হিমায়িত মাছ আমদানিকারক এম কায়সার বলেন, হঠাৎ করে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মিয়ানমারে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু পণ্য আটকা পড়েছে। তার মধ্যে রয়েছে হিমায়িত মাছসহ পচনশীল নানা পণ্য। এসব পণ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আনতে না পারলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।

মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ, আদা, শুঁটকি ও সুপারি আমদানি করেন ব্যবসায়ী ওমর ফারুক। তিনি বলেন, চলতি মাসের শুরুতে ১ হাজার ৩০০ টন পেঁয়াজ ও আদা আমদানি হয়েছে মিয়ানমার থেকে। এর বাইরে আরও ৬০০ টন পেঁয়াজ, ৪০০ টন আদা কিনে রাখা হয়েছিল। এখন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় এসব পঁচনশীল পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর বাইরে ৪০০ টন শুঁটকি ও সাড়ে ৫০০ টন সুপারি মিয়ানমারে আটকে আছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা এ এস এম মোশাররফ হোসেন বলেন, হঠাৎ করে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দিনে তিন কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধের কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।

সময়ের আলো/আরআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড
এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫। ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com