ব্যবসায়ীদের অনুরোধ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় এক মাস বাড়াচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর ফলে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনা জরিমানায় রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। বর্তমানে রিটার্ন জমার শেষ দিন ৩০ নভেম্বর।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সময় বাড়ানোর অনুমতি চেয়ে ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে এনবিআর চলতি সপ্তাহে আদেশ জারি করবে।
নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী, করদাতাদের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে করদাতারা চাইলে এ সময়ের পরও সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত পাবেন না তারা এবং বিলম্ব সুদ ও জরিমানা গুনতে হবে।
এ বিষয়ে এনবিআরের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে কথা বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, দেশের মানুষের সব কাজই শেষ সময়ে করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। যার ফলে শেষ সময়ে রিটার্ন জমা বাড়ে। এখন সময় বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলে করদাতাদের মধ্যে এক ধরনের অলসতা কাজ করবে। আরও পরে রিটার্ন জমা দিতে চাইবে। সে জন্য এখনও ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার কর অঞ্চল-৪, কর অঞ্চল-১ ও কর অঞ্চল-২, কর অঞ্চল-৮ ও কর অঞ্চল-১১-তে মঙ্গলবার সরেজমিন করদাতাদের তেমন একটা ভিড় লক্ষ করা যায়নি। সাধারণত প্রতি বছর ২০ নভেম্বরের পর থেকেই এসব কর অঞ্চলে করদাতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়।
কর অঞ্চল-৪-এ রিটার্ন জমা দিতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সোহেল রানা বলেন, অবরোধের কারণে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতেই ভয় লাগে কখন গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। সে জন্য রিটার্ন জমা দিতে একটু দেরি হয়েছে। সাধারণত ১৫ তারিখের ভেতরেই রিটার্ন জমা দিয়ে দিই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর অঞ্চল-৪-এর এক কর্মকর্তা জানান, অর্ধেকের কম করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। আগামী ২ দিনে বাকি করদাতারা জমা দেবেন, তা মনে হচ্ছে না। রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়তে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এই অঞ্চলে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি করদাতা রিটার্ন জমা দেন।
কর অঞ্চল-৮-এ ৮০ হাজারের বেশি করদাতা ই-টিআইএন রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৫০ হাজারের মতো ব্যক্তি নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করে থাকেন। এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার ব্যক্তি আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এর আগে ৩০ নভেম্বর একই দিনে রিটার্ন দাখিল ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমার শেষ দিন হওয়ায়, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তফসিল পেছানোর দাবি জানান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
রিটার্ন জমার সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও। এফবিসিসিআই রিটার্ন জমার মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর আহ্বান জানায়।
এর কারণ হিসেবে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন আয়কর আইন ২০২৩ প্রতিপালন ও আয়কর পরিপত্র বিলম্বে প্রকাশের কারণে এবার কারদাতারা প্রস্তুতি নেওয়ার তেমন সময় পাননি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে অনেক করদাতার পক্ষেই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব হবে না।
অন্যদিকে ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশনও সময় বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে এনবিআরে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চলমান হরতাল-অবরোধ, আয়কর আইন ২০২৩ সম্পর্কে করদাতা ও আইনজীবীদের পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাব, ২০২৩-২৪ করবর্ষের পরিপত্র বিলম্বে প্রাপ্তি এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ২০২৩-২৪ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের নির্ধারিত সময় বাড়ানো প্রয়োজন।
নতুন আয়কর আইনে কর দিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে। কর রিটার্ন দাখিলের নির্ধারিত সময় ৩০ নভেম্বর। দেশে বর্তমানে ৯৪ লাখের বেশি কর শনাক্তকারী নম্বরধারী (টিআইএন) করদাতা রয়েছেন। গত অর্থবছরে ৩৫ লাখ ২৯ হাজার রিটার্ন দাখিল করা হয়েছিল।