ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পান চাষ করে বছরে আয় ১২ কোটি টাকা, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও
প্রকাশ: বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩, ৯:৪৬ পিএম  (ভিজিট : ৭৩৪)
স্বাদ ও সুনাম খ্যাত কুষ্টিয়া দৌলতপুরে পান এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশেও। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কুষ্টিয়াসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি জেলার পান এখন রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। এদিকে কুষ্টিয়ার অন্য সব উপজেলার মতো দৌলতপুরের পানও যাচ্ছে বিদেশে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারের তুলনায় বেশি দামে পান বিক্রি করায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক।

তবে কৃষকরা বলছে, এ অঞ্চলে একটি পান গবেষণা বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব হলে পান চাষকে আরো সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি তৈরি হবে নতুন উদ্যোক্তা। এতে যেমন বাড়বে নতুন কর্মসংস্থান, আরো বৃদ্ধি পাবে রপ্তানি। সম্ভব হবে আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন।

স্থানীয় পান বাজারের হিসেব বলছে, প্রতিদিন দৌলতপুর থেকে ৩ থেকে ৪ টন পান রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। প্রতি কেজি পন রপ্তানিকারকদের কাছে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেন স্থানীয় ফড়িয়ারা।

ভৌগোলিক ও উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের চাষিরা অর্থকরী ফসল হিসেবে পান চাষ করে আসছেন। অন্য ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি হাজার খানেক কৃষক পান চাষে জড়িত। কয়েক বছর ধরে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, পান চাষকে আরো সমৃদ্ধ করতে তারা কাজ করছেন। পাশাপাশি সরকারিভাবে এসব পান বাইরে রপ্তানির উদ্যোগও হাতে নিয়েছেন তারা। যা দ্রুত কার্যকর হবে, ফলে আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, এই অঞ্চলে স্থানীয় বাজার থেকে বছরে পানের আয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। উপজেলাটিতে পান চাষ হয় প্রায় ৪৯০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নে। তবে বিদেশে পান রপ্তানি সঠিক হিসেব নেই এই অফিসে।

পান চাষকে কেন্দ্র করে এই উপজেলার গড়ে উঠেছে দুটি পান বাজার বা আড়ৎ। সেখান থেকে চাষিদের কাছ থেকে ফড়িয়া বা আড়ৎদাররা পান কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। মাঝে মাঝে অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও এসব বাজার থেকে পান কিনে নিয়ে যান। 

প্রসঙ্গত, দেশে ৮০টি পান পাতাকে এক বিড়া বা এক পন হিসেবে বিক্রি করা হয়। পান ক্ষেতকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘পান বরজ’। প্রতিদিন প্রত্যুষে চাষিরা বরজ থেকে পান ভেঙে বাজারে বিক্রি করে থাকেন।

পান চাষ নিয়ে কথা হয় কয়েকজন প্রবীণ পান চাষিদের সাথে। যারা দুই যুগের বেশি সময় ধরে এই চাষের সাথে জড়িত। তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম নজু নামের এক চাষী জানান, এখন বর্তমানে পানের বাজার দর ভালো স্থানীয় বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে ১ পন পান  বিক্রি হচ্ছে। আর যে পানটি রপ্তানির জন্য ফড়িয়ারা নিচ্ছেন সেটা ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তার এই দীর্ঘ পান চাষ কালে পান রপ্তানি শুরুর পর থেকে ভালো লাভের কথা জানান তিনি।

কালু নামের তারাগুনিয়া এলাকার আরেক চাষী জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে পান চাষ করা গেলে রপ্তানিযোগ্য পানের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। কুষ্টিয়ায় পান গবেষণা বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকলে আরো ভালো পরামর্শ নেওয়া সম্ভব হতো বলে জানান তিনি।

পলাশ নামের এক ফড়িয়া জানান, রপ্তানিযোগ্য পান সরাসরি চাষীদের ‘বরজ’ থেকে সংগ্রহ করা হয়। যেসব চাষী সাপ্লাই পান বিক্রি করতে ইচ্ছুক, তারা ফড়িয়াদের সংবাদ দেন। ফড়িয়ারা ক্ষেতে গিয়ে নিজস্ব লোকজন দিয়ে পান সংগ্রহ করেন।

তিনি আরো বলেন, রপ্তানির জন্য সব ক্ষেত থেকে পান সংগ্রহ করা হয় না। আকারে বড়, ওজনে ভালো, সুন্দর রং এবং রোগবালাইমুক্ত পান সংগ্রহ করা হয়। বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে এসব পান ক্রয় করা হয়। এসময় তিনি বলেন, ক্ষেতের সেরা পানগুলোই নেওয়া হয়। ফড়িয়ারা সারাদিন ক্ষেত থেকে পান সংগ্রহ করে ঢাকায় রপ্তানিকারকদের কাছে পৌঁছে দেন। দিন দিন রপ্তানি পানের চাহিদা বাড়ছে। দৌলতপুর থেকে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ টন পান সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে। যা ঢাকা এয়ারপোর্টে বিক্রি হয় ৫০০ টাকা কেজি দরে।

তবে বেশি দামে পান বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষীরা তৈরি করছে নতুন পান ক্ষেত। বাদশা সর্দার ও বাবু নামের দুই চাষী জানান, দীর্ঘদিন পানের দাম হতাশা জনক থাকার পর পানের দাম বেড়েছে। পান এখন বিদেশে যাচ্ছে দাম এমনি থাকলে নতুন নতুন পানের ক্ষেতও তৈরি হবে।

এবিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, দৌলতপুরে ৪৯০ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হচ্ছে। এতে স্থানীয় বাজার থেকে বছরে অন্তত ১২ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। তবে বিদেশে রপ্তানির বিষয়টি আমাদের জানা নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, জৈব পদ্ধতিতে নিরাপদ পান উৎপাদনে কৃষি অফিস পান চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। এখন কুষ্টিয়া থেকে প্রচুর পান বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। 
সরকারিভাবে পান বাইরে রপ্তানির উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। যা দ্রুত কার্যকর হবে, ফলে আরো বেশী বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এতে কৃষকরাও বেশি লাভবান হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে পান চাষিরা সাথে জড়িত হয়ে এ অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরাও এখন স্বচ্ছল। লেখাপড়ার পাশাপাশি সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা পান বরজে কাজ করে প্রায় ২০০ টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হয় তারা। তাই এই পান চাষের উপর সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়লে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তা বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অনেকে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  দৌলতপুরে পান চাষ   বিদেশে রপ্তানি   বৈদেশিক মুদ্রা আয়  




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close