অনুশীলনে পূর্ণ মনোযোগ, সম্ভাব্য সেরা উপায়ে তৈরি হওয়ার চেষ্টা। সবাই নিজ কাজটা করে গেলেন। সেখানে কোনো জড়তা ছিল না বরং ঠিকরে বেরুলো আরও ভালো কিছু করে দেখানোর তাড়না। একটা জয় এভাবেই পাল্টে দিয়েছে টিম বাংলাদেশের আবহ। বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় কয়েক দিন আগেও যারা ছিল হতাশায় নিমজ্জিত, তাদেরই ভীষণ প্রাণবন্ত দেখাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোর আর আউটডোরে।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এবং কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহকে ফাঁকে ফাঁকে চিন্তিতও দেখাল। বোধকরি তা প্রত্যাশার চাপে। সিলেটে পাওয়া জয়ের পর টাইগারদের ঘিরে প্রত্যাশা যে ঊর্ধ্বমুখী। নিউজিল্যান্ডের মতো শক্তিধর দলের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়ের সুযোগ, মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে শান্ত ব্রিগেড সেই সুযোগ দুর্দান্তভাবে কাজে লাগাবে, এমনই প্রত্যাশা সবার। অথচ শুরুর আগে এই সিরিজ নিয়ে শঙ্কা ছিল বিস্তর। সাকিব-লিটন-তাসকিনসহ নিয়মিত পাঁচ সদস্যের অনুপস্থিতিতে তারুণ্যনির্ভর দলটা ঠিকঠাক লড়াই গড়তে পারবে কি না সংশয় ছিল তা নিয়েই।
সেই সিরিজই কি না স্মরণীয় অর্জনের হাতছানি দিচ্ছে টাইগারদের। মিরপুরে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় এবং শেষ টেস্টে হার এড়াতে পারলেই মিলবে সিরিজ জয়ের গৌরব। টেস্ট আঙিনায় ২৩ বছরের পথচলায় যে গৌরব কেবল জিম্বাবুয়ে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই পেয়েছে টিম বাংলাদেশ। সুযোগ ছিল ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, তা কাজে লাগানো যায়নি সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট হেরে যাওয়ায়। গত বছরের জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুই রূপকথার পর সুযোগ ছিল নিউজিল্যান্ডকেও জিম্বাবুয়ে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাতারে নিয়ে আসার, শেষতক হয়নি।
আবার এসেছে সুযোগ, প্রত্যাশার বাড়তি চাপ সেখানে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। জয় প্রত্যাশার যে উত্তাপ, তা কিছুটা হলেও লাগবে ক্রিকেটারদের গায়ে। যে কারণে সিলেটে যতটা নির্ভার থেকে খেলতে পেরেছে শান্তর দল, মিরপুরে ততটা সম্ভব না হওয়ারই কথা। প্রথম টেস্ট ঘিরে প্রত্যাশার জায়গা ছিল না তেমন, ভয় ছিল না কিছু হারানোর। কিন্তু মিরপুর টেস্ট ঘিরে পাওয়ার যেহেতু অনেক কিছু আছে, তাই বাড়ন্ত প্রত্যাশার সঙ্গে আছে হারানোর ভয়টাও। হাথুরুসিংহে অবশ্য পূর্ণ আস্থাই রাখছেন তারুণ্যনির্ভর দলের ওপর। তার বিশ্বাস, দারুণ কিছুই হবে হোম অব ক্রিকেটে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই শিষ্যদের প্রতি হাথুরুর বার্তা, ‘বার্তাটা একই থাকবে। ব্যাপারটি হলো, নিজেদের যা আছে, সেসবকে সঙ্গী করে সামনে এগিয়ে যাওয়া, নিজেদের শক্তির জায়গা বোঝা এবং প্রতিটি সেশনে লড়াইয়ের চেষ্টা করা। এই দলটা অভিজ্ঞতার দিক থেকে তরুণ, কিন্তু স্কিলের দিক থেকে তারা খুবই ভালো। ... (সিলেট টেস্টে) এই তরুণ দল তাদের সবটুকু ঢেলে দিয়েছে। ওদের জন্য বার্তা হলো-একই কাজের পুনরাবৃত্তি করা।’ টাইগার কোচ যোগ করেন, ‘সিলেটের ম্যাচটি আমরা যেভাবে শুরু করেছিলাম, ঠিক একইভাবে এই ম্যাচটিও শুরু করা। সেই একই তীব্রতা, একই উদ্বেগ, একই আশা এবং লক্ষ্য নিয়ে শুরু করতে চাই।’
ম্যাচের ফল কী হবে, সেই ভাবনা আপাতত দূরে সরিয়ে রেখে শিষ্যরা প্রতিটি সেশন লড়াই করুক, এমনটাই চান হাথুরু। যদিও মিরপুরের ২২ গজি উইকেট কেমন আচরণ করবে, তা নিয়ে কিছুটা সংশয়ে আছেন তিনি। তবে সিলেটের থেকেও তা আরও বেশি স্পিনবান্ধব হবে বলেই ধারণা। ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া নিউজিল্যান্ড শিবির তো সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে। কঠিন সময়েও অধিনায়ক টিম সাউদি আস্থা রাখছেন সতীর্থদের সামর্থ্য। তার বিশ্বাস, মিরপুরে ধরা দেবে জয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট হোমে অনুষ্ঠিত সবশেষ ১২ টেস্টই ফল দেখেছে। সেই ধারা যদি অব্যাহত থাকেও, সে ক্ষেত্রে সাউদির বিশ্বাস জয় হয়ে ধরা দেবে কি না তা বলা মুশকিল। টিম বাংলাদেশও যে সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়তে ম্যাচটা জিততে মরিয়া।
যদিও ইতিহাস গড়তে মিরপুর টেস্ট জেতার প্রয়োজন টাইগারদের নেই, ড্র করলেই চলবে।
সময়ের আলো/আরএস/