দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতার বিষয়টি ঝুলেই থাকল।
জোটের একাধিক সূত্র বলছে, গত সোমবার গণভবনে সন্ধ্যা ৬টা থেকে প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির সভাপতি ও জোট নেত্রী শেখ হাসিনা। এ বৈঠক থেকেও আসন বণ্টনের কোনো সিদ্ধান্ত না পেয়েই শরিক নেতারা বাসায় চলে যান। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গে তারা নৈশভোজে অংশ নেন। এ ছাড়া নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দল অংশ নেবে এমন আশ্বাস দেন জোট নেত্রী। কিন্তু আসন বণ্টনের বিষয়টি শরিক নেতারা তুললেও শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। পরে একটি সমন্বয় টিম করে দেন শেখ হাসিনা। এই টিমে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। শরিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে বলেন শেখ হাসিনা। ফলে আরও ন্যূনতম এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতে পারে জোটের শরিক দলগুলোকে।
সূত্র বলছে, মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর ইস্কাটনের আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর বাসায় অনির্ধারিত বৈঠক করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার। তারা আমির হোসেন আমুর কাছে দাবি করেন, রাশেদ খান মেননকে যেন বরিশাল-২ আসন ও শিরিন আখতারকে যেন ফেনী-২ আসনে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়। এটি যেন জোট নেত্রী শেখ হাসিনা ও সমন্বয়ক টিমকে তিনি অনুরোধ করেন। তবে বৈঠকে আমির হোসেন আমু তাদের কোনো আশ^াস দিতে পারেননি। তবে জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে আমির হোসেন আমু তাদের জানাবেন বলে জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, এখানে আমার কী বলার আছে। জোট নেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তাই হবে।
বৈঠক শেষে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের আসন বণ্টনের বিষয়টি নির্ধারিত হবে। জোট শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচন জোটগতভাবে হবে। আসন বণ্টনের ব্যাপারে কোথায় কী করা যায়, কীভাবে আসন বিন্যাস করা যায়, সে ব্যাপারেও আমরা আলোচনা করছি। আলোচনা করে আমরা নেত্রীকে জানাব। মেনন সাহেব, ইনু সাহেব এসেছেন, আলোচনা হয়েছে, আমি বুধবার (আজ) সেই বিষয়গুলো নেত্রীকে জানাব। আলাপ করার পর আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব।
বৈঠক শেষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী যেখানে থাকবে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উঠে যাবে। যেকোনো লেনদেনে দর কষাকষি হবে। মন কষাকষি হবে। বন্ধুদের মধ্যে দর কষাকষি হয়, মন কষাকষি হয়, তা হলে শেষ বিচারে হাসিমুখে উঠে যাব। দিনের শেষে হাসিমুখে হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে যাব। যেখানে জোটের প্রার্থী আসবে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উঠে যাবে।
সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের মনোনীত দলীয় প্রার্থীদের কোনো আসনে বসিয়ে দিতে রাজি নয়। তারপরও জোটের স্বার্থে তারা ৫টি আসন ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। এই ৫ আসনের কোথায় কাকে দেওয়া যেতে পারে তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে তাকে জানানোর কথা বলেন শেখ হাসিনা। এর আগে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২টি ফাঁকা রেখে ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে। ফাঁকা আসন দুটি কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫। কুষ্টিয়া-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। ফলে এ আসন নিয়ে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না ইনুর। এখন বিপত্তি দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে নিয়ে। তিনি ঢাকা-৮ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য। কিন্তু এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তবে মেনন মনোনয়নপত্র তুলেছেন বরিশাল-২ ও ৩ আসন থেকে। এখন তার চাওয়া বরিশাল-২ আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ইউনুস তালুকদার। ফলে তাকে রবিশাল-২ আসনে নৌকা দিতে হলে ইউনুস তালুকদারকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর-২ আসন চান। কিন্তু পিরোজপুর-২ কানাই লাল বিশ্বাসকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ আসনে মঞ্জুকে নৌকা দিতে হলে কানাই লাল বিশ্বাসকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী চট্টগ্রাম-২ আসন চান। কিন্তু এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার। তাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। আরেকজন নৌকা চান বাসদ আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান। এ ছাড়া জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার ফেনী-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনিও নৌকা চান। কিন্তু এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী। ফলে শিরিন আখতারকে এ আসনে নৌকা দিতে হলে আলাউদ্দিনকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। সঙ্গত কারণে শিরিন আখতারকে নৌকা দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। তাকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ করতে চায় আওয়ামী লীগ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার সময়ের আলোকে বলেন, গত সোমবার আমরা ১৪ দলীয় জোট নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছি। মঙ্গলবারও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর বাসায় বসেছিলাম। কিন্তু এখনও আসন বণ্টনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কবে কখন হবে তাও জানি না। আমাদের যা বলার বলে এসেছি। আমরা এখন অপেক্ষায় আছি।
বাসদ আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান সময়ের আলোকে বলেন, ১৪ দলীয় জোট নেত্রীর সঙ্গে আমরা গত সোমবার বৈঠক করেছি। কিন্তু বৈঠকে আসন বণ্টনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি একটি সমন্বয় টিম গঠন করে দিয়েছেন, তারা আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জোট নেত্রীকে জানাবেন। পরে হয়তো ঠিক হবে। তবে কবে ঠিক হবে সেটি জানি না। আমরা এখন অপেক্ষা করছি।
সময়ের আলো/আরএস/