ই-পেপার শুক্রবার ৪ অক্টোবর ২০২৪
শুক্রবার ৪ অক্টোবর ২০২৪

বিচিত্র সাহিত্যরুচির লেখক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৩:০২ এএম  (ভিজিট : ৫৫৬)
বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে একটি বিশিষ্ট নাম কবীর চৌধুরী। শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক পরিচয় ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন সংস্কৃতকর্মী। সুশীল সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের একজন। 

অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে তিনি শিল্পকলা বিষয়ক রচনা ও সাহিত্যসমালোচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। অনুবাদের মাধ্যমে বিভাষী শিল্পী ও সাহিত্যিকদের শিল্পকর্মের সঙ্গে বাংলাদেশি পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। কবীর চৌধুরী ১৯২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার গোপাইরবাগ গ্রামের মুন্সী বাড়ি। তার পুরো নাম আবুল কালাম মোহাম্মদ কবীর। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে দেশের বিভিন্ন কলেজ এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপক ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

পাশ্চাত্যের ধ্রুপদী ও আধুনিক চিত্রকলা নিয়ে বেশকিছু গ্রন্থ যেমন রচনা করেছেন, তেমনি নানান ভাষার শ্রেষ্ঠ গল্প, উপন্যাস, নাটক কবিতাও অনুবাদ করেছেন। শেকসপিয়র, চেখভ, জ্যাক লন্ডন, কাফকা, বেকেটসহ অনেক রথী-মহারথীর সাহিত্যকর্মই তিনি বাংলা ভাষায় তর্জমার মাধ্যমে বাঙালি পাঠকদের সামনে হাজির করেছেন। শুধু অন্যভাষা থেকে বাংলাতেই অনুবাদ করেননি, বাংলা ভাষা থেকেও তিনি ইংরেজিতে বেশকিছু অনুবাদ করেছেন। তার মৌলিক, অনূদিত, সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা দুই শতাধিক।

কবীর চৌধুরীর সাহিত্যরুচি ছিল বহুমুখী। তাই তো সাহিত্যের নানান শাখায় তার বিচরণ দেখি। তিনি অ্যারিস্টোফানিসের ‘শান্তি’, শেকসপিয়রের ‘ওথেলো’ (মুনীর চৌধুরীর সঙ্গে যৌথভাবে) যেমন অনুবাদ করেছেন, তেমনি অনুবাদ করেছেন স্যামুয়েল বেকেটের ‘গডোর প্রতীক্ষায়’সহ আরও কয়েকটি নাটক। 
স্যামুয়েল বেকেট বিংশ শতাব্দীর অন্যতম নাট্যকার, ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার। ১৯৬৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনি। স্যামুয়েল বেকেটের সবচেয়ে বিখ্যাত নাটক ‘ওয়েটিং ফর গডো’, যা কবীর চৌধুরী ‘গডোর প্রতীক্ষায়’ নামে অনুবাদ করেন। ১৯৮১ সালের জুলাই মাসে মুক্তধারা প্রকাশনী থেকে গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ‘ওয়েটিং ফর গডো’ একটি রূপকাশ্রয়ী, প্রতীকধর্মী নাটক। 

প্রচলিত নাটকের মতো এর কোনো ঘটনা নেই। তেমন কোনো বিষয় নেই। গডোর জন্য প্রতীক্ষা করাই এ নাটকের মূল উপজীব্য। ফলে নাটকে আমরা দেখি ‘নিষ্ফল প্রতীক্ষা, কথা নিয়ে খেলা, কোনো রকমে সময় কাটিয়ে দেয়া, সীমাহীন ক্লান্তি, ছেলেমানুষী কৌতুকক্রীড়া’। তাই বলে অ্যাবসার্ডধর্মী এই নাটকের আবেদন কিন্তু আমাদের কাছে ফুরিয়ে যায় না। এই নিষ্ফল অপেক্ষা, কথা নিয়ে খেলা, সীমাহীন ক্লান্তির মধ্য দিয়েই ফুটে উঠেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মানুষের হতাশা, ক্লান্তি, অর্থহীন আশার কথা। 

‘ওয়েটিং ফর গডো’র চরিত্রসংখ্যা পাঁচটি হলেও মূল চরিত্র দুটি। এস্ট্রাগন ও ভ্লাদিমির। এছাড়াও রয়েছে লাকি, পোজো এবং একটি বালকের চরিত্র। নাটকটির সময়কাল মাত্র দুদিন। দুদিনই গডো খবর পাঠান, তিনি আজকে আসবেন না, আগামীকাল নিশ্চয়ই আসবেন। কিন্তু তার দেখা আমরা আর নাটকে পাই না। 
নাটকের সময়কাল দুদিনের হলেও নাটক সমাপনান্তে মনে হয়, সারা জীবন ধরে তারা গডোর অপেক্ষা করছে এবং এভাবেই নিষ্ফল অপেক্ষা করে যাবে।

কবীর চৌধুরী বেশ দক্ষতার সঙ্গেই নাটকটি অনুবাদ করেছেন। নাটকের ক্লান্তি, কৌতুককর বিষয়গুলো তিনি নিপুণভাবেই তুলে ধরেছেন।

পরিশেষে বলা যায়, কবীর চৌধুরীর এই বিচিত্র সাহিত্যরুচি আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে নিঃসন্দেহে, তাই তো তার কাছ থেকে যেমন ‘ন্যুড চিত্রকর্ম’-এর মতো সাহসী এবং ব্যতিক্রমী বই পেয়েছি, তেমন পেয়েছি ‘সাহিত্য কোষ’-এর মতো আকরগ্রন্থ। 


সময়ের আলো/আরএস/ 






https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close