প্রকাশ: শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১:৫৭ এএম (ভিজিট : ৪৮৭)
ঐতিহাসিক স্থাপত্য দেখতে ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন পাঁচশ বছরের পুরোনো মোগল আমলের এক গম্বুজ পীরগঞ্জ জামে মসজিদ। চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ঠাকুরপুর গ্রাম। স্থানটির নাম পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে পীরগঞ্জ হিসেবে পরিচিতি। পীরগঞ্জ নামকরণের পেছনে নিহিত রয়েছে ওই বিশাল আকৃতির এক গম্বুজ মসজিদটি। এই মসজিদের মূল অংশ নির্মাণের ব্যাপারে প্রকৃত তথ্য পাওয়া না গেলেও স্থানীয় প্রবীণদের ভাষ্যমতে, ১৬৯৮ সালের দিকে শাহ্ মোহাম্মদ আফতাফ উদ্দিন চিশতী ওরফে আফু শাহ নদীপথে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাথাভাঙ্গা ও নবগঙ্গা বেয়ে চুয়াডাঙ্গার ঠাকুরপুর গ্রামে এসে আস্তানা গাড়েন। তিনি সাধক ছিলেন। ধর্ম প্রচার-প্রসার যার লক্ষ্য ছিল।
প্রচলিত আছে, খাজনা বাকি হলে তাকে জমিদার দরবারে ডেকে নিয়ে যায় প্রজারা। তিনি অলৌকিকভাবে সবার আগে পৌঁছে যান জমিদারের দরবারে। বিষয়টি জানার পর জমিদার আফু শাহকে জমি দান করেন। সেই জমিতে এক গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন তিনি। অনেকের ধারণা, আফু শাহ অলৌকিক শক্তি দিয়েই মসজিদটি নির্মাণ করেন। জিনদের সাহায্য নিয়ে এক রাতেই মসজিদটি নির্মাণ করেন আফু শাহ। এজন্য অনেকে এটিকে জিনের মসজিদও বলে থাকেন।
দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ নামাজ পড়তে আসেন। মসজিদটি প্রাচীন ও ইসলামিক স্থাপত্য নিদর্শনসমৃদ্ধ। এটি জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করছে। হাতে তৈরি পাতলা ইট আর চুন-সুরকির গাঁথুনিতে তৈরি হয় এক গম্বুজ মসজিদ। মসজিদের ভেতরে দুই কাতারে নামাজ আদায় করা যায়। বর্তমানে মসজিদটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। মূল কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখেই বর্তমানে মসজিদটি সংস্কার করে বড় পরিসরে তিন গম্বুজ করা হয়েছে।
প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত এই জামে মসজিদে প্রবেশ করলেই আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত একটি প্রবেশ তোরণ চোখে পড়বে। মসজিদের পেছনে রয়েছে একটি বড় পুকুর, আরও রয়েছে সারি সারি নারকেল গাছ এবং কবরস্থান। প্রধান ফটকটি টাইলস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে যেমন, তেমনি মসজিদের অভ্যন্তর অংশেও লাগানো হয়েছে টাইলস। তবে ভেতরের পুরোনো ওই অংশটি রয়েছে এখনও আগের মতোই। মসজিদটিতে নারীদের নামাজ পড়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসেন মসজিদটি এক নজর দেখতে। সারা বছরই ভিড় করেন পর্যটকরা। প্রতি বছরের বাংলা মাসের ১২ ফাল্গুন বার্ষিক ইছালে ছওয়াব ও হালকায়ে জিকিরের তথা বার্ষিক ওরস আয়োজন করে এলাকাবাসী। এছাড়া রমজান মাসে প্রতি শুক্রবার যুবসমাজের উদ্যোগে মসজিদ প্রাঙ্গণে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পূর্বপুরুষদের বরাত দিয়ে এলাকাবাসী জানান, মসজিদটি অলৌকিকভাবে এক রাতে নির্মাণ হয়েছে। মসজিদটিকে অঞ্চলের আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচনা করেন এলাকার লোকজন। তাদের দানেই চলে মসজিদটি।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে পূর্বাশা, শ্যামলী, হানিফ, চুয়াডাঙ্গা এক্সপ্রেস, রয়েল এক্সপ্রেস বা ওই রুটের অন্য দূরপাল্লার গাড়িতে চুয়াডাঙ্গা যেতে পারবেন। এছাড়া রেলপথে চিত্রা, সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেসে চুয়াডাঙ্গা যেতে পারবেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর থেকে ইজিবাইক/ রিকশায় ঠাকুরপুর বা পীরগঞ্জ জামে মসজিদের সামনে গিয়ে নামবেন।
কোথায় থাকবেন
চুয়াডাঙ্গা শহরে বেশকিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল আছে। সেখানে থাকতে পারবেন। খাবারের জন্য চুয়াডাঙ্গা কলেজ রোডে কয়েকটি উন্নত মানের রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকান আছে।