প্রতি বছরই বছরের শেষভাগে অর্থাৎ নোবেল পুরস্কার দেওয়ার প্রাক্কালে কারা নোবেল প্রাইজ পেতে পারেন, সে ঢেউ আমাদের দেশেও এসে পড়ে। বিশেষ করে সাহিত্য নিয়ে আমাদের আগ্রহ অসীম। অন্যান্য ক্যাটাগরি নিয়ে সাধারণত এর একভাগ আলোচনাও হয় না, সাহিত্য নিয়ে যতটা হয়। পত্রিকায় কারা এবার সাহিত্যে নোবেল পাবেন বা পাচ্ছেন মোটা শিরোনামে গদ্য ছাপা হয়। হয় অনেক বিভাষী লেখকের ছবিসহ। পত্রিকার অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে হোক, নিজের জ্ঞান জাহির করার জন্যে হোক কিংবা সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা থেকেই হোক-এসব গদ্যে সাধারণত যাদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তারা কেউই কাক্সিক্ষত পুরস্কারের দেখা পান না। তবে প্রাকৃত-পাঠক কিছু অন্যভাষার লেখকের নাম এবং কীর্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন। এসব গদ্য সাধারণত এর বেশি ভূমিকা রাখে না।
২০২৩ সালেও নোবেল পুরস্কার কারা পেতে পারেন, এ নিয়ে সাহিত্যপাতা বড় বড় গদ্য প্রকাশ করেছে কিন্তু তালিকায় যাদের নাম ছিল তারা কেউই পুরস্কার পাননি। তবে ব্যক্তিগতভাবে ফসে সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুয়েকজন আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত সেটাই বাস্তবতায় পর্যবসিত হয়েছে। তারপরেও বাঙালি পাঠকদের কাছে জন ফসে অপরিচিতই ছিলেন বললে অত্যুক্তি হবে না। যদিও তার পুরস্কারের পাল্লা যথেষ্ট ভারী। এবং ২০২২ সালে তার ‘এ নিউ নেম : সেপ্টালোজি ৬-৭’ উপন্যাসের নাম ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল। এই বইটি ২০২৩ সালে ‘ন্যাশনাল বুক ক্রিটিক সার্কেল অ্যাওয়ার্ডের’- ফিকশন জনরাতেও চূড়ান্ত তালিকায় বিবেচনাধীন ছিল। জন ফসের বইয়ের সংখ্যা সত্তরের অধিক। তার উপন্যাস, কবিতা, শিশুসাহিত্য, প্রবন্ধ, নাটক প্রায় পঞ্চাশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
তার প্রথম উপন্যাস ‘রাউডট, স্ভার্ট’ (লাল, কালো) ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি সে সময় নরওয়ের জনপ্রিয় সামাজিক, বাস্তববাদী উপন্যাসের চেয়ে বিপরীত ঘরনার ছিল এবং এখানে তিনি প্লটের চেয়ে ভাষার প্রতিই বেশি গুরুত্ব দেন। প্রথম উপন্যাসের প্রায় বছর দশেক পরে তার নাটক প্রকাশিত হয়। বলা ভালো প্রথম নাটক তিনি অনেকটা অনুরোধের ঢেঁকি গিলেই রচনা করেন।
জন ফসের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হলো: উপন্যাস : ‘মেলানকোলি’, ‘মর্নিং অ্যান্ড ইভিনিং’, ‘এলিস অ্যাট দ্য ফায়ার’, ‘ওয়াকফুলনেস’, ‘সেপ্টালোজি’(সাত খণ্ডে প্রকাশিত) প্রভৃতি।
নাটক : ‘সামওয়ান ইজ গোয়িং টু কাম হোম’, ‘দ্য নেম’, ‘নাইটসংস’, ‘আই এম দ্য ওয়াইন্ড’, ‘দিজ আইজ’ প্রভৃতি। জন ফসে তার সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্যই নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সমালোচকদের মতে, ফসের লেখার স্টাইল একান্তই তার নিজস্ব। অনেকের কাছে এটি ‘ফস মিনিমালিজম’ নামে পরিচিত। সুইডিশ একাডেমি ফসে সম্পর্কে বলেছে, তার উদ্ভাবনী নাটক এবং গদ্য যা বলা যায় না, তা-ই ব্যক্ত করেছে। সেই সঙ্গে আরও বলা হয়েছে, জন ফসের ভাষা এবং কাজের প্রকৃতি নরওয়ের পটভূমির মধ্যে প্রোথিত রয়েছে।
হেনরিক ইবসেনের পর জন ফসের নাটকই সবচেয়ে বেশি মঞ্চস্থ হয়েছে। বলা হয় বিশ^ব্যাপী এক হাজারেরও বেশি মঞ্চে অভিনীত হয়েছে তার নাটক। ২০২৩ সালে নোবেল পাওয়ার ফলে বাংলাদেশেও জন ফসে আরও বেশি পঠিত এবং চর্চিত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।