দেখতে দেখতে আমরা আরেকটি নতুন বছরে উপনীত। ভোরের সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হলো নতুন আরেকটি বছর। ২০২৩ সাল শেষে ২০২৪ সাল শুরু। একটি বছর শেষ হওয়া মানে আমার জীবনের খাতা থেকে ৩৬৫টি দিন হারিয়ে যাওয়া। হারানোর বেদনায় হতাশ হওয়া যেমন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয়, তেমনি নতুন বছরের প্রাপ্তিতে উল্লাসভরা তৃপ্তিবোধও সচেতনতার পরিচয় নয়; বরং এখন সময় পেছনের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন জীবন পরিকল্পনা সাজানোর।
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান তো সে, যে নিজের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য কর্ম করে। আর অক্ষম সে, যে প্রবৃত্তির অনুসারী হয় আর আল্লাহর প্রতি অলীক প্রত্যাশা পোষণ করে’ (তিরমিজি : ২৪৫৯; ইবনে মাজা : ৪২৬০)। তাই আমাদের নতুন বছরের পরিকল্পনায় যেসব বিষয় থাকা চাই-
কুরআন-হাদিসে নিমগ্নতা : প্রতিদিন অন্তত দশ মিনিট হলেও বুঝে বুঝে কুরআন পড়া। সকালে বা রাতে নির্দিষ্ট সময়ে কিংবা ফরজ নামাজের পর পড়া যেতে পারে। অথবা মোবাইলে কুরআনের অ্যাপস ডাউনলোড করে কাজের ফাঁকে পড়া যেতে পারে। কুরআন পাঠ নিঃসন্দেহে আপনার মনে প্রশান্তি নিয়ে আসবে। চাইলে কিছু চমৎকার তেলাওয়াতও শুনতে পারেন নিয়ম করে। একইভাবে নিয়মিত কিছু হাদিস পড়ার অভ্যাস করা। অন্তত একটি হাদিস হলেও যেন বুঝে পড়া যায়, সেই পরিকল্পনা রাখা নতুন দিনের আগমনে।
আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদায় : আমরা মুসলিম হিসেবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি ঠিকই, কিন্তু কাজের ব্যস্ততায় সবসময় আউয়াল বা প্রথম ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা হয়ে ওঠে না কারও কারও। নতুন বছরের এই পরিকল্পনা করতে পারি, যত কাজই থাকুক এবার থেকে আউয়াল ওয়াক্তে আমি নামাজ পড়বই।
নিয়মিত নফল আমল করা : আমার ফরজ আমলে ত্রুটি থাকলে কেয়ামতের দিন নফল আমল দিয়ে এর ঘাটতি পূরণ করা হবে। তাই প্রতিদিনের ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি কিছু নফল আমল করার পরিকল্পনাও করা চাই। নফল নামাজ, নফল রোজা, দান-সদকা ইত্যাদি আমল বেশি বেশি করার ফিকির করা।
অন্যায়-অপরাধ থেকে দূরে থাকা : অনেকে নিজের অজান্তে অনেক অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। পরে চাইলেও ভালো পথে থাকতে পারে না। যেমন-কেউ একটা মিথ্যা বলল, এই মিথ্যাটা ঢাকবার জন্য তাকে আরও কয়েকটা মিথ্যা বলতে হয়। একটা দুর্নীতি করলে এটা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আরও কিছু দুর্নীতি করতে হয়। তাই এসব অন্যায়-অপরাধমূলক কর্ম থেকে বিরত থাকার নতুন পরিকল্পনা করা। যেন নতুন বছরে আমার দ্বারা এমন কিছু না ঘটে।
আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নেওয়া : আত্মীয়তার বন্ধন ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু অনেকেই আছে, বছর পার হয়ে গেলেও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কোনো দেখা-সাক্ষাৎ করে না বা খোঁজখবর নেয় না। এমন না করা। সম্ভব হলে প্রতি সপ্তাহে কিংবা মাসে আত্মীয়দের খবর নেওয়া। দুর্বল স্বজনদের সহায়তা করা। এমন আরও নানা বিষয়ে পরিকল্পনা করা যেতে পারে নতুন বছরের প্রাক্কালে।
নিয়মিত দান করা : আমাদের প্রাত্যহিক খরচের একটা অংশ দানের নিয়তে রাখতে পারি। দান করার দ্বারা শুধু যে পরকালেই উপকার পাওয়া যাবে তা নয়, এর দ্বারা ইহকালেও উপকার পাওয়া যায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দান আল্লাহর অসন্তুষ্টি লাঘব করে এবং লাঞ্ছিত মৃত্যু (খারাপ মৃত্যু বা অপমৃত্যু) প্রতিরোধ করে’ (তিরমিজি)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা বেশি বেশি দান করবে, কেননা বিপদাপদ তাকে (দানকে) অতিক্রম করতে পারে না’ (মেশকাত শরিফ)। অর্থাৎ দানের দ্বারা বিপদাপদ দূরীভূত হয়।