প্রকাশ: সোমবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৪, ৫:১২ পিএম আপডেট: ০১.০১.২০২৪ ৫:৪৬ পিএম (ভিজিট : ৭৫১)
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ভোট চুরি করতে পারবে না তাই নির্বাচন বর্জন করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছি। নির্বাচন বানচাল করার কোন সুযোগ তাদের দেওয়া হবে না। বাবার সামনে সন্তান-পড়ে মারা যাচ্ছে। মায়ের সামনে সন্তান মারা যাচ্ছে। কারা করেছে বিএনপি জামায়াত। বিএনপির যাতে সন্ত্রাসী কোন কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে প্রত্যেকটি ভোটার ভোট কেন্দ্রে যাবেন। ভোট দিয়ে ওই অগ্নি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জবাব দেবেন। কারণ আওয়ামী লীগ আছে বলেই ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে এই আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ। আগামীতে নৌকায় ভোট দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করবেন। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে কেউ থামাতে পারবে না ইনশাল্লাহ। প্রথম যারা ভোটার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবেন।
সোমবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডির কলাবাগান মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় শেখ হাসিনা সবাইকে হ্যাপি নিউয়ারের শুভেচ্ছা জানান।
এতে সভাপতিত্ব করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চলানা করছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। বক্তব্য শেষে ঢাকার ১৫ টি আসোনের নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করে দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালিরা ক্ষমতা যাবে এটা কখনো পাকিস্তানিরা চাইনি। এই মাঠের সামনেই ৩২ নম্বরের বাড়ি। এখান থেকেই বঙ্গবন্ধ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়েছিলেন। জাতির পিতা ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়ে মুক্তি যুদ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধু মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৫ই আগস্ট ৩২ নম্বরের বাড়ি আক্রমণ করে। অনেক আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে সাবধান করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতা বিশ্বাস করেননি যে সোনালীরা তাকে মেরে ফেলতে পারে। ওই হত্যাকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি। হত্যা করেছে আমার পুরো পরিবারকে। তারা শুধু হত্যাকান্ড চালায় নি। বাড়ির লুটপাট করে। আমাদের দেশে আসতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছিল। ৮১ সালে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসি। আমি ও আমার ছোট বোন রেহানা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই বাড়িটা জনগণের। আমরা ব্যবহার করব না। এই বাড়িতে ঘিরে একটা ট্রাস্ট করেছি। যেখান থেকে ছেলে মেয়েদের বৃত্তি দেই।
তিনি বলেন, জাতির পিতা সময় পেয়েছে মাত্র তিন বছর সাত মাস তিন দিন। এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু অসহায় পরিবারকে সাহায্য করেন। এমনকি বিদেশি থেকে ডাক্তার এনে তাদের চিকিৎসা দিয়েছেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তোলেন। বিনা পয়সায় বই কাপড় দিয়ে দেশক গড়ে তুলেন। এভাবে তিনি প্রতিটি সেক্টরে জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করেন। কিন্তু ৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা ক্ষমতায় এসেছিল অস্ত্র হাতে নিয়ে। প্রবৃদ্ধি নয় ভাগ পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলেন। যায় দেশে কোন সরকার করতে পারেনি। আমরা ৮ ভাগ পর্যন্ত করতে পেরেছি। মুক্তিযোদ্ধা চেতনা জলাঞ্জলি দিয়ে দেয় জিয়াউর রহমান। জাতির পিতার আমলে ২৭৭ মার্কিন ডলার আয় ছিল। যা জিয়াউর রহমান এরশাদ কেউ করতে পারেনি। জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হবে না বলে রায় দিয়েছিল। বিচার পাওয়ার অধিকার টুকু আমাদের ছিল না। আমাকে মামলা করতে দেওয়া হয়নি। আমি যেদিন বিদেশে যাই সেদিন সবাই ছিল। কিন্তু দেশে ফিরে এসে কাউকে পাইনি। তখন বলেছিলাম বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। বাংলাদেশের মানুষের জন্যই জীবন উৎসর্গ করে পথে নেমেছি। কেউ না খেয়ে পথে মরবেনা। কেউ গৃহহীন থাকবেন না।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগে নেতাকর্মীদের হামলা করে হত্যা করেছে। হাজার হাজার নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমাকে প্রথম গ্রেফতার করে। কিন্তু ছাত্র শিক্ষক সবার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি জামাত অগ্নি সন্ত্রাস করেছিল। বিএনপি মানুষ খুন করা এটাই তারা জানে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংলাপ করেছিলাম। তারা নির্বাচনে আসে। কিন্তু প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার নামে বাণিজ্য করে। লন্ডন থেকে তারেক রহমান দেয় নমিনেশন। মির্জা ফখরুল ও রিজভী নমিনেশন দেয়। যার কারণে তাদের নির্বাচনে পরাজয় হয়। আর দোষ দেয় আমাদের। আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব। এই স্লোগান আমাদের দেওয়া।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ করে দিয়েছে। কারণ আমরা গণতন্ত্র বিশ্বাস করি। এখন মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। যারা ভোট চুরি করে তারা নির্বাচনে জিততে পারে না। বিএনপির আমলে পানি ছিল না বিদ্যুৎ ছিল না। দর সালাউদ্দিনকে মানুষ ধাওয়া দিয়েছিল। যে গার্মেন্টস শ্রমিকের মধ্য দিয়েছিল ৮০০ টাকা। তাদেরকে ১৬০০ টাকা করে দিয়েছিলাম। এখন ১২০০০ টাকা বৃদ্ধি করে দিয়েছি। তাদেরকে কেয়ার সেন্টার করে দিয়েছি। ঢাকার পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা দূর করেছি। এর আগে তো কোন সরকার পারেনি। ইতিমধ্যে মেট্রোরেল দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হয়ে গেছে। মানুষ যাতে যানজট মুক্ত ভাবে চলাফেরা করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করে দিয়েছি। তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ আমরা উদ্বোধন করেছি। ঢাকা আশপাশে যেসব নদী রয়েছে, সেগুলো দূষণমুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে প্রজেক্ট নিয়েছি। উত্তর দক্ষিণ হিসাব করে দিয়েছি। ৪০০০ মানুষ যেন একসঙ্গে পায় সে ব্যবস্থা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। ঢাকা শহরের সমস্ত তারগুলো মাটির নিজ দিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের যেটা লক্ষ্য দেশটাকে উন্নত করা। বঙ্গবাজারে আধুনিক মার্কেট নির্মাণ করে দেওয়া হবে। যারা দোকানদার ছিল তারাই পাবে। ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর কেউ বস্তিতে নয় ফ্লাটে বসবাস করবে সবাই। হিজড়া ও বেদে জনগোষ্ঠী সবার জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পাঁচ লাখ ৪১ হাজার পরিবারকে বিনা পয়সায় ঘর এবং জমি করে দিয়েছি। জানুয়ারির ১ তারিখে ছেলে-মেয়েদের হাতে নতুন বই তুলে দেই। মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস করে দিয়েছি। জিয়াউর রহমানের আমলে সম্পদশালী হয়েছে। জিয়াউর রহমান ভাঙ্গা ছুটকেস ছাড়া রেখে যায়নি। তাহলে ভাঙ্গা সুটকেস কি জাদুর বাক্স হলো, তা না হলে এত টাকা কোথায় পেলো।
জনসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়াদুল কাদের, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা ১০ আসনের নৌকা প্রার্থী চিত্র নায়ক ফেরদৌস আহমেদ প্রমুখ।
সময়ের আলো/এম