বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে রিশিডিউল ও নির্দিষ্ট পরিমাণ ডাউন পেমেন্ট করে কেউ খেলাপির তালিকা থেকে বাদ পড়লে নতুন করে আবার অন্যকেউ তালিকায় আসেন বলে জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আফজাল করিম।
সোমবার (১ জানুয়ারি) সদ্য বিদায়ী বছরের নানা অর্জন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান আফজাল করিম। এ সময় ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে তিন হাজার ৭২৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়, ঋণের বিপরীতে প্রভিশন এবং সরকারি ট্যাক্স হিসাব করা হয়নি। খরচ বাদ দিয়ে মূলত নিট মুনাফা হিসাব করা হয়। খরচ বাদ দিলে ব্যাংকের নেট বা প্রকৃত মুনাফা কিছুই থাকবে না। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকার ডেফারেল বা প্রভিশন রাখতে অতিরিক্ত সময় নিয়েছে ব্যাংকটি। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের বিপরীতে এসব প্রভিশন রাখার পর নিট মুনাফার বিপরীতে লোকসানে পড়বে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকটি।
আফজাল করিম বলেন, বিভিন্ন সূচকে আমরা ভালো করার চেষ্টা করেছি। আশানুরূপ ফলও এসেছে সদ্য বিদায়ী ২০২৩ সালে। আমরা ব্যাংকের পুরোনো খেলাপি ঋণ আদায়ে চেষ্টা করেছি। শাখাগুলোতে একজন পিও এবং জিএমদের মাধ্যমে তদারকি করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমরা চাই খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে। সে লক্ষ্যেই কাজ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছ থেকে ২৭০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শীর্ষ ২০ খেলাপির তালিকা হালনাগাদ হয়। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে কেউ রিশিডিউল করেন কেউ আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ ডাউন পেমেন্ট করে খেলাপির তালিকা থেকে বাদ পড়েন। নতুন করে আবার খেলাপির তালিকায় অন্য একজন আসেন। তবে নতুন বিনিয়োগ বাড়িয়েছি আমরা। আমাদের এখানে আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। আর লোনের পরিমাণ ১ লাখ ৬৮ কোটি টাকা।
এমডি জানান, ট্রেজারি বিল বন্ডের পরিবর্তে আমরা লোনের পরিমাণ বাড়িয়েছি। তবে নতুন লোন যাতে খেলাপি না হয় সে বিষয়েও আমরা সতর্ক রয়েছি। ২০০৭ সালে আমাদের ক্যাপিটাল শর্টফল ছিল ৬ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। এটা নিয়ে আমাদের যাত্রা হয় ওই বছরে। পরে তা ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকায় উঠে যায়। ক্রাপিটাল শর্টফল আমরা ৪ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছি। এ বছরে নেগিটিভ করার চেষ্টা থাকবে।
ফরেক্স মার্কেট নিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি ডলার সংকটের অন্যতম কারণ হলো ডিমান্ড ও সাপ্লাই। যখন ডিমান্ডের তুলনায় সাপ্লাই কম হয় তখন সংকটটা বাড়ে। তবুও আমরা এবিবি-বাফেদা মিলে ডলারের দাম নির্ধারণ করছি। সকল ব্যাংকে বলা হচ্ছে বেঁধে দেওয়া দামে ডলার কেনা-বেচা করতে। তবে খবর প্রকাশ হয়েছে অনেক ব্যাংকই নাকি বেশি দামে ডলার কিনেছে। আমরাতো জরিমানা করতে পারি না তাদের বিরুদ্ধে। তবে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে। এরই মধ্যে বেশ কিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে।
এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে সে তুলনায় এলসি পেমেন্ট কঠিন। কারণ আমরা সরকারি বড় বড় ক্ষেত্রে এলসি খুলে থাকি। অন্যরা বেশি দামে ডলার কিনলেও জাতীয় স্বার্থে আমরা নির্ধারিত দামেই কিনছি। সেখানে কিছুটা কম রেমিট্যান্স এসেছে।
এ কারণে আমরা এলসি পেমেন্ট সব নিজেরাই দিতে পারিনি। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নির্ভশীল হওয়া লেগেছে, সাপোর্টও পেয়েছি।
রেমিট্যান্স বিষয়ে এমডি আফজাল করিম বলেন, আমরা দেশে বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো প্রবাসীদের কাছে তুলে ধরছি। যেখানে সাড়াও মিলছে। কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা মালদ্বীপে আমাদের সেবা নিয়ে যাব। দেশটিতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে।