দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র চার দিন। প্রচার শুরুর পর থেকেই একের পর এক সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা, জায়গায় জায়গায় ভাঙচুর চলছে নির্বাচনি কার্যালয়, অগ্নিসংযোগের ঘটনা যেন থামছেই না। এদিকে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাত দমনে সবসময় তটস্থ থাকতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে, কড়া নজর রাখতে হচ্ছে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টাকারীদের দিকে। আর তা করতে গিয়ে অনেক সময় হামলার শিকার হতে হচ্ছে তাদেরকেও। গত ২৪ ঘণ্টায় এ রকমই কিছু ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। সময়ের আলোর প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো তুলে ধরা হলো-
হবিগঞ্জে পুলিশ ভ্যানে হামলা, ৫ পুলিশ সদস্য আহত : হবিগঞ্জে পুলিশের টহল ভ্যান ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছেন আমাদের জেলা প্রতিনিধি। সোমবার বেলা ৩টায় শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে ৫ সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশের দাবি। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে তাদের মিছিলে বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় তাদের ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সদর মডেল থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব জানান, বেলা ৩টার দিকে শায়েস্তানগর এলাকায় হঠাৎ করেই পুলিশের টহল গাড়িতে হামলা চালায় বিএনপি-ছাত্রদলের একদল নেতাকর্মী। এ সময় তারা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এতে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে। পরে ওই এলাকায় ডিবি, র্যাব ও পুলিশ অবস্থান নেয়।
একই সময়ে শায়েস্তানগরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য উমেদ আলী শামীম বলেন, নেতাকর্মীরা নির্বাচনি প্রচারে থাকার সুযোগে ফাঁকা পেয়ে হামলাও ভাঙচুর চালিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, শায়েস্তানগর এলাকায় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ বিনা উসকানিতে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। সংঘর্ষে তাদের ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
সাভারে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ৪ সমর্থককে কুপিয়ে জখম, গ্রেফতার ৩ : এদিকে আগের দিন রাতে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের নির্বাচনি অফিস ভাঙচুর ও তার চারজন সমর্থককে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে খবর পাঠিয়েছেন আমাদের আশুলিয়া প্রতিনিধি। এ ঘটনায় ওই রাতেই তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পরে নির হোসেন নামে এক ভুক্তভোগীর মামলার ভিত্তিতে সোমবার সকালে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতার তিনজনের নাম জাহিদ ভূঁইয়া (২৫), রাসেল কমান্ডার (৩২) ও জনি দেওয়ান (৩০)। মামলার বাকি আসামিরা হলেন- ইউপি সদস্য জলিল উদ্দিন ওরফে রাজন ভূঁইয়া (৩৩) ও তার ছোট ভাই রাকিব ভূঁইয়া (২৮), মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫), পালছার মাসুদ (৩৪), রনি দেওয়ান (২৫), ইমন (৩৫), নিজাম (৩২), আমান (৪০) ও অজ্ঞাতপরিচয় ২৫-৩০ জন। তারা সবাই আশুলিয়া থানার পূর্ব নরসিংপুরের বাসিন্দা।
মামলার এজাহারে লেখা হয়, ওই এলাকায় ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সমর্থক আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নির্বাচনি ক্যাম্প স্থাপন করেন। রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হকিস্টিক, রাম দা, চাইনিজ কুড়াল ও দেশীয় অস্ত্রসহ ক্যাম্প ভাঙচুর করেন রাজন ভূঁইয়া ও তার সহযোগীর। খবর পেয়ে স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা সানাউল্লাহ ভূঁইয়া সানিসহ কয়েকজন সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় ইউপি সদস্য রাজন ও তার সহযোগীরা তাদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। পরে আরও দুই ক্যাম্প ভাঙচুর করে তারা। সেখানেও তিনজনকে মারধর করে আহত করেন ইউপি সদস্যের লোকেরা।
মোড়েলগঞ্জে নৌকার নির্বাচনি ক্যাম্পে আগুন : আমাদের বাগেরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মোড়েলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের জিউধরা বাজারে নৌকা প্রার্থীর অস্থায়ী ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার ভোরে এ আগুন লাগানোর খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মোড়েলগঞ্জ থানা পুলিশ। নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম জানান, জিউধরা বাজারে বাগেরহাট-৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের নৌকা প্রতীকের অস্থায়ী নির্বাচনি ক্যাম্পে সোমবার ভোরে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে বাগেরহাট পুলিশ অফিসের মিডিয়া সেলের পরিদর্শক সৈয়দ বাবুল আক্তার বলেন, আগুন লাগানোর ঘটনা তদন্তে পুলিশ কাজ করছে।
নাটোরে এমপি শিমুলের নির্বাচনি ক্যাম্পে আগুন : আমাদের নাটোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের নির্বাচনি ক্যাম্প আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার ভোরের কোনো একসময়ে নাটোর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের চৌমুহনী ঘোড়াগাছা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শফিকুল ইসলাম শিমুলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব দিলীপ কুমার দাস জানান, এ ঘটনায় প্রশাসনকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে আইনগতভাবে অভিযোগ করা হবে। আর নাটোর সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেছেন, কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিবগঞ্জে পুড়ল ট্রাক প্রতীকের কার্যালয় : আমাদের শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সোমবার রাত ২টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ট্রাক প্রতীকের একটি নির্বাচনি কার্যালয় আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ এ বিষয়ে বলছে, নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টাকারী কোনো একটি দলের কাজ হতে পারে এটি। দ্রুতই দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।
চকরিয়ায় স্বতন্ত্রের আগুনে পুড়েছে হাতঘড়ির কার্যালয় : একই রাতে কক্সবাজারের চকরিয়ায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি ও হাতঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নির্বাচনি কার্যালয় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাঠিয়েছেন আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি। আগুনে নির্বাচনি কার্যালয়ের পাশে থাকা একটি দোকানও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে।
এই অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমের অনুসারীদের অভিযুক্ত করেছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তবে এ অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক দাবি করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম গতবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে মনোনয়নবঞ্চিত হন তিনি। এরপর তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনি প্রচার চালাতে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক ও ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দেন। পরে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনায় চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয় জাফর আলমকে।
সময়ের আলো/জেডআই