খ্রিস্টীয় নববর্ষের দিনেও ইসরাইল ও হামাস পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চল ও তেল আবিব শহরকে লক্ষ্য করে গাজা উপত্যকা থেকে কয়েকটি রকেট ছোড়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে নিযুক্ত এএফপির সাংবাদিকরা এ কথা জানিয়েছেন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীও হামলার খবরটি নিশ্চিত করেছে। এদিকে বুরেজি শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়েছে। একইসঙ্গে খান ইউনিসে লড়াই জোরদার করেছে ইসরাইলি স্থল সেনারা। ইসরাইলের পক্ষ থেকে আভাস দেওয়া হয়েছে, ২০২৪ সালজুড়ে গাজায় অব্যাহত থাকবে তাদের হামলা। তবে গাজা থেকে কয়েক হাজার সেনা প্রত্যাহার করেছে তেল আবিব।
এদিকে সোমবার বাংলাশে সময় রাত ১০টার দিকে এই খবর লেখা পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ইসরাইলি হত্যার শিকার ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৯৭৮ জনে।
পাল্টাপাল্টি হামলা : এএফপির সাংবাদিকরা বলেন, সোমবার মধ্যরাতে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম হামলাটি হয়। এর ১ মিনিট পর তেল আবিবকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। তারা আরও বলেন, ঘটনার সময় তেল আবিবে বিমান হামলাজনিত সতর্কসংকেত বাজানো হয়। ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে রকেটগুলো প্রতিহত করা হয়।অনেক মানুষ রাস্তায় জড়ো হয়েছিলেন। ঘটনার সময় সতর্কসংকেত পেয়ে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। কেউ কেউ আবার উৎসব চালিয়ে যেতে থাকেন। তেল আবিবের একটি বারের সামনে বন্ধুরে সঙ্গে নববর্ষ উদযাপন করছিলেন গ্যাব্রিয়েল জেমেলম্যান। এএফপিকে তিনি বলেন, আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম, যেন আমি প্রথমবার ক্ষেপণাস্ত্র দেখছি। এটা ভয়ংকর।
হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসেম ব্রিগেড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ওই ভিডিওতে ইসরাইলে হামলার দায় স্বীকার করেছে তারা। ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেড আরও বলেছে, বেসামরিক মানুষদের বিরুদ্ধে ইসরাইল যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বদলা নিতে এম ৯০ রকেট ব্যবহার করেছে তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ইসরাইলি সেনাবাহিনী লিখেছে, ইসরাইলে রকেট হামলার মধ্য দিয়ে ২০২৪ সাল শুরু করেছে হামাস। বিপরীতে ইসরাইলের পক্ষ থেকে বুরেজি শরণার্থী শিবিরে চালানো বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৫ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে আলজাজিরা। আর দেইর আল বালাহতে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৫ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে মিডল ইস্ট আই।
বছরজুড়েই কি হামলা চলবে : নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পুরো পৃথিবী যখন উৎসবমুখর, ঠিক সেই মুহূর্তেও অবরুদ্ধ উপত্যকার বাসিন্দারের ওপর চলেছে দখলদার ইসরাইলি সেনাদের নির্বিচার হামলা, যা অব্যাহত থাকতে পারে পুরো ২০২৪ সালেই।
নতুন বছরের প্রথম দিনে (১ জানুয়ারি) এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডএম ড্যানিয়েল হাগারি। নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে রোববার (৩১ ডিসেম্বর) বিদায়ী বছরের রাতে ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘আজ রাতে ২০২৪ শুরু হচ্ছে। যুদ্ধের উদ্দেশ্যগুলোর পূরণের জন্য দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের প্রয়োজন এবং আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। যুদ্ধক্ষেত্রে কর্মরত বাহিনীগুলোকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনার পরিকল্পনা করছি। নতুন সেনাদের প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রিজার্ভ সিস্টেম ও অর্থনীতি নিয়েও বড় ধরনের পরিকল্পনা আছে আমাদের।’
কিছু সংখ্যক সেনা প্রত্যাহার: এদিকে গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন কার্যক্রমে যোগদানের জন্য ডাকা হয়েছে এমন কিছু রিজার্ভ সৈনিক এ সপ্তাহে তাদের পরিবার এবং চাকরিতে ফিরে আসবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র হাগারি বলেন, ‘এটা আমাদের বছর জুড়ে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনারই অংশ এবং এর সঙ্গে আমাদের সেনাদের অভ্যস্ত হতে হবে। ইসরাইল সেনাবাহিনীকে অবশ্যই আগামীর পরিকল্পনা করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, ২০২৪ সাল জুড়ে আমাদের যুদ্ধ করে যেতে হবে এবং অতিরিক্ত কাজ করতে হবে।’
এর আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার বলেছিলেন যে ‘হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ আরও অনেক মাস অব্যাহত থাকবে এবং মিশরের সীমান্ত সংলগ্ন গাজার অংশের দখল নেবে ইসরাইল।
সময়ের আলো/জেডআই