ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

আলোকবর্তিকার প্রতিষ্ঠাবাষির্কী
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বইপ্রেমীদের আনন্দ আয়োজন
প্রকাশ: শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৩:২৮ এএম  (ভিজিট : ৪৩০)
শুক্রবার সকাল ১০টা, সরগরম বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র অঙ্গন। প্রবেশপথের দেওয়ালে নানা রঙের আলপনা আঁকা। দলবেঁধে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে প্রবেশ করছেন বইপ্রেমী নানা বয়সি মানুষ। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে সবার চোখেমুখেই যেন উৎসবের আনন্দের আভা।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে আছেন চৈতি আক্তার (২১)। একটু আগে শাহবাগ থেকে শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালি শেষ করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে প্রবেশ করছেন তিনি। চৈতি সময়ের আলোকে বলেন, বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মানোর আঁতুড়ঘর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে। এখানে এসেই আমার বইয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মেছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এলে যে কেউ বইয়ের প্রেমে পড়ে যাবে। চৈতির মতো শাড়ি পরে মাথায় ফুলের ব্যান্ড দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঝুমা খাতুন (২৭)। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, এ দিনটার জন্য আমরা পাঁচ বছর অপেক্ষা করি। আজ সকালে র‌্যালি করেছি। সারাদিন বইপ্রেমী মানুষদের মিলনমেলায় থাকব, গুণী মানুষদের কথা শুনব। এ দিনটা এলেই ভেতর থেকে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সকাল থেকেই সাহিত্যপ্রেমীদের মিলনমেলায় রূপ নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও অনেকে এসে অংশ নেন এ আয়োজনে। পিরোজপুর থেকে আসা লাবণ্য আক্তার বলেন, আলোর স্কুল থেকে আমার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে পরিচয়। সেই থেকে ভালোলাগা। প্রতিষ্ঠাবষির্কীর এ দিনটা আমার কাছে অনেক অর্থবহ। যে প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে সেই প্রতিষ্ঠানের ৪৫ বছর পূর্তিতে সব কাজ ফেলে গ্রাম থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছি। লাবণ্যের মতো অনেকের আবেগ ও অনুভূতির নাম বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। আর সে কারণেই শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়সি মানুষদেরও আজ আনন্দের দিন।

এ দিনে সকালের র‌্যালি শেষে সবাই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। দুপুরের পরে শুরু হয় মূল পর্বের অনুষ্ঠান। সেখানে ফরিদা পারভীন, ফেরদৌস আরা, রফিকুল ইসলামসহ গুণী শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ মানুষ তৈরির অগ্রসেনানি। স্বপ্ন এবং ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতা তার আছে। এ জন্য তাকে অভিনন্দন। তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আজ দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে জাগ্রত করছে। এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন। আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। এ জন্য শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সবাইকে অভিনন্দন জানান তিনি।

বিশিষ্ট ছড়াকার আমীরুল ইসলাম বলেন, আমি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক হিসেবে কাজ করেছি। ৪৫ বছর পূর্তির পুরো অনুষ্ঠানটি আমার জন্য এক আনন্দ আয়োজন। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে এখান থেকে আরও বেশি মানুষ উপকৃত হবে।  

বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মেধা ও মননের একটি উৎকৃষ্ট স্থান। ৪৫ বছর ধরে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কেন্দ্র তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। দেশের অনেক চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি স্যারের ছাত্র ছিলেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সফলতার সঙ্গে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মানসিক উৎকর্ষতা সাধনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৪৫ বছরে বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্রোতের বিপরীতে গিয়েও যে কিছু একটা করা যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। রাস্তায় রাস্তায় বইয়ের লাইব্রেরি ছুটে বেড়ানোর বিষয়টি একসময় অকল্পনীয় ছিল। আমার ধারণা, আরও ৪০ বছর পর সমগ্র বাংলাদেশেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আলো ছড়িয়ে পড়বে।

বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সংশ্লিষ্টতা অনেক দিনের। গত ৪৫ বছরের স্মৃতি রোমন্থ করতে গিয়ে তিনি বলেন, স্যারের (আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ) সঙ্গে শুরু থেকেই আছি। একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও সাহস দিয়ে স্যার দেখিয়ে দিয়েছেন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকেও বড় কিছু করা যায়।
অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক প্রথম আলোর উপ-সম্পাদক আনিসুল হক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজসহ অনেক গুণিজন উপস্থিত ছিলেন।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close