নিমগাছ একটি ঔষধি গাছ যার ডাল, পাতা, রস সবই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। এ গাছের ফুল-ফলসহ প্রতিটি অঙ্গ সাধারণত তেতো হয়ে থাকে। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি নিম গাছ থেকে বের হচ্ছে মিষ্টি রস। এমন খবরে এলাকায় হৈচৈ পড়েছে। এটাকে অলৌকিক ভেবে গাছের রস পান শুরু করেছেন গাছ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা।
ঘটনাটি ঘটেছে জেলার সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গড়াইপাড়া গ্রামে। মৃত মো. কালুর ছেলে নাসির আলীর বাড়ির গলিতে থাকা একটি নিমগাছ থেকে পড়ছে খেজুরের রসের মতো মিষ্টি রস। আর বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তির আশায় সেই গাছ থেকে রস সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে গ্রামবাসীর।
এলাকাবাসীর জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ ধরে গাছ থেকে অল্প অল্প রস বের হলেও তিন দিন আগে থেকে এর পরিমাণ বেড়েছে। গ্রামের এক ব্যক্তি মুখে নিয়ে নিমগাছের রসের মিষ্টতা পান। এ খবর ছড়িয়ে যায় পুরো গ্রামে। এরপর থেকেই গাছ দেখতে ছুটে আসছে উৎসুক জনতা। নিমগাছের পাতা, কাঁচা ফল, বীজ, কাণ্ড ও রস স্বাভাবিকভাবে তিতা হলেও এই গাছের রস মিষ্টি হওয়ায় অবাক গ্রামবাসী।
চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ আশরাফুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহ থেকেই হঠাৎ করেই গাছটি দিয়ে ফেনাযুক্ত রস বের হতে দেখা যায়। কিন্তু গত ৪দিন ধরে এর পরিমাণ বেড়েছে। কেউ একজন মুখে মিষ্টি বলার পর থেকেই মূলত সবাই এসে মুখে নিয়ে বিশ্বাস করছেন। কেউ কেউ আবার দুর-দূরান্ত থেকে নিমগাছের এমন অদ্ভুত কার্যক্রম দেখতে ছুটে আসছেন। কেউ কেউ এসে ছবিও তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামের অনেক মানুষের মনে বিশ্বাস, এটি মহান আল্লাহর প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন গাছ। তাই নিমগাছটির রস খেলে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, এমন বিশ্বাস থেকে রস সংগ্রহ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাচ্ছেন। তবে গ্রামে এখন পর্যন্ত এই রস খেয়ে কেউ সুস্থ হয়েছেন বলে জানা যায়নি।’
স্থানীয় বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, ‘শুধু স্বাদই নয়, নিমগাছটি থেকে বের হওয়া রসের গন্ধও খেজুরের রসের মতো। খেলে রোগবালাই ভালো হবে এই বিশ্বাস করে অনেকেই গাছের বিভিন্ন স্থানে বোতল লাগিয়ে রেখেছে রস সংগ্রহের জন্য। এমনকি রস বের হওয়ার ধরনটিও খেজুর গাছের মতোই ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ছে। তবে দিনের থেকে রাতে বেশি পরিমাণে রস বের হচ্ছে। এছাড়াও এতো বেশি রস প্রবাহিত হচ্ছে যে গাছের গোঁড়া ভিজে থাকছে সবসময়ই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন আগে মৃত বাবা-মায়ের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে প্রায় ২৪ বছরের নিমগাছটি গড়াইপাড়া জামে মসজিদের নামে দান করেছেন গাছের মালিক নাসির আলী। তিনি বলেন, ‘গাছটি দান করা হয়েছে। তবে এর আগে থেকেই রস বের হচ্ছে। এমনকি মসজিদ কমিটিও গাছটি বিক্রি করেছে। কখন কাটা হবে তা জানা নেই। এরমধ্যেই গাছ থেকে রস বের হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে এবং তা সংগ্রহ করার হিড়িক পড়েছে।’
বড়াইপাড়া জামে মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. মহসীন আলী বলেন, ‘গাছটি দান পাওয়ার পর মসজিদ কমিটি ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। ক্রেতা ২ হাজার টাকাও দিয়েছে। গাছ যেদিন কাটবে, সেদিন বাকি টাকাও পরিশোধ করার কথা রয়েছে। এরমধ্যেই গাছ নিয়ে হুলস্থূল কাণ্ড পড়ে গেছে। রস সংগ্রহ করতে গাছের যেকোনো অংশে বোতল লাগাতে দেখা গেছে অনেককে।
নিমগাছটির রসের স্বাদ খেজুরের রসের মতো হলেও এর আশপাশে মেহগনি ছাড়া আর কোনো গাছ নেই। গাছের নিচে থাকা মাটির গুণাগুণ ও আশপাশের বিভিন্ন পরিবেশের কারণে নিমগাছের রসের স্বাদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করেন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকরা।
এমন ঘটনা খুব কম দেখা গেলেও একেবারেই অস্বাভাবিক নয় বলে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক আমিরুল ইসলাম জানিয়ে সময়ের আলোকে বলেন, মাটির নিচের গুণাগুণসহ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে এমনটি হতে পারে। তবে এটি হয়ত কয়েকদিনের মধ্যেই আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে।’
ফিজিও কেমিক্যাল কন্ডিশনের কারণ হতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গাছের শিকড় মাটির নিচে যেখানে গেছে, হয়ত সেখানে এমন কোনো পদার্থ রয়েছে; যার সংস্পর্শে এসেও নিমগাছটিকে আঘাত করার পর বের হওয়া রসের স্বাদে মিষ্টতা আসতে পারে। বিষয়টি আহামরি তেমন কিছুই নয় বা এর কোনো বিশেষ গুণ কিংবা বা উপকারিতা নেই।’
সময়ের আলো/জিকে