ই-পেপার সোমবার ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সোমবার ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইসরাইলে জনরোষ বাড়ছে
নেতানিয়াহুর পতনঘণ্টা বাজল কি
প্রকাশ: বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:৫৩ এএম  (ভিজিট : ৩১৮)
গাজায় হামাসের হাতে বন্দি ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছিলেন ইসরাইলিরা। গাজায় ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর এই বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়েছে। শ্রমিক ইউনিয়ন ধর্মঘট পালন করেছে। বিক্ষোভ দমনে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারও কঠোর হয়েছে। গাজায় যুদ্ধে লিপ্ত অবস্থায় দেশে এমন উত্তাল বিক্ষোভের মুখে আরও বেকায়দায় পড়েছেন নেতানিয়াহু। জিম্মি মুক্তি চুক্তির জন্য বাড়ছে চাপ, আবার কট্টরপন্থিরা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের হুমকি দিচ্ছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার গাজায় ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই ইসরাইলিরা ক্ষোভে ফুঁসছে। তাদের মৃত্যু কেন্দ্র করে পুরো ইসরাইল এক মাহেন্দ্রক্ষণে পৌঁছেছে। প্রবল বিক্ষোভ ও শ্রমিক ধর্মঘটে সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা অনেকটাই অনিশ্চিত। গণতন্ত্রে জন বিক্ষোভের মুখে সরকার পতনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে নেতানিয়াহুকে রাজনীতিতে টিকে থাকা একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

আদালতকে ব্যবহার করে বিক্ষোভ-ধর্মঘট দমনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু ও তার মন্ত্রিসভার কট্টর জাতীয়তাবাদীরা। প্রাথমিকভাবে তাদের প্রচেষ্টা সফল বলেই মনে হচ্ছে। যদিও দেশের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-বিশ্লেষকদের মতে, বিক্ষোভ ও ধর্মঘটের প্রভাব আগামী দিনগুলোতে বোঝা যাবে। ইসরাইলের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সরকারের উপদেষ্টা এলন পিনকাস আলজাজিরাকে বলেন, শিগগিরই এটা বলা যাবে না। এখানে মূল বিষয়টা হচ্ছে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা। 

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গাজায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রসিকিউটর, নেতানিয়াহু ও তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টসহ দুই হামাস নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছেন।

গত নভেম্বর মাসে জিম্মি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি হলেও এরপর একটা লম্বা সময় ধরে যুদ্ধে আর অগ্রগতি হয়নি। সে ক্ষেত্রে ইসরাইলের বহু নাগরিকই বাকি প্রায় ১০০ জনের মতো জিম্মির মুক্তির জন্য যুদ্ধবিরতির চুক্তির জন্য নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছেন। গত মে মাসেও হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর কঠিন সব শর্তের জন্য শেষ পর্যন্ত ওই চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। তখন থেকে গাজায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। একইসঙ্গে ইসরাইল পশ্চিমতীর ও লেবাননে অভিযান জোরদার করেছে।

এদিকে ইসরাইল আলোচনার পরিবর্তে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে বন্দিদের মুক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, জুনের শুরুতে জিম্মিদের উদ্ধার করতে ইসরাইল সামরিক অভিযান শুরু করেছিল। যেখানে চার বন্দিকে উদ্ধার করা হলেও ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছিল। নেতানিয়াহু সরকারের এমন কৌশল ইসরাইলের ভেতরেই বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ছয়জন জিম্মির মরদেহ উদ্ধার যেন পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করেছে।

ইসরাইলের রাজনীতির ওপর বিশেষজ্ঞ ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, সরকার ও প্রধানমন্ত্রী রক্ষণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। এখন সবকিছু মোমেন্টামের ওপর নির্ভর করছে।

তবে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে এমন প্রতিবাদ এবারই প্রথম নয়। বরং দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্কে গত বছরও ব্যাপক বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও চলতি বছরের গ্রীষ্মেও যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। 

পিনকাস বলেন, নেতানিয়াহুর যুদ্ধবিরতি কিংবা জিম্মিদের মুক্তির চুক্তি নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। এটা পরিষ্কার। কেননা দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও আমরা সবাই সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে এটি ঘটবে। একটি চুক্তিতে যুক্ত হতে তার (নেতানিয়াহুর) অনীহাই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।

জুলাইয়ে এক পোলে দেখা যায়, ৭০ শতাংশ ইসরাইলি চায় নেতানিয়াহু পদত্যাগ করুক। কেননা গত ৭ অক্টোবরের হামলা প্রতিরোধ করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন বলে তারা মনে করেন। 

গভীর রাতে তেল আবিবের ব্যস্ততম ৮ লেনের মহাসড়ক ‘আয়ালন’-এ বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সেই রাতে রাস্তার পাশের দেয়ালে এক যুবককে নীল স্প্রে ব্যবহার করে ‘জিম্মি নাকি বিপ্লব’ শব্দগুচ্ছ ফুটিয়ে তুলতে দেখা গেছে। আন্দোলনে উপস্থিত দুই কমবয়সি মেয়ে জানায়, তারা এর আগে কোনো বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেনি। তবে জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারের পর বিবেকের তাড়নায় তারা আসতে বাধ্য হয়েছে।

তবে এত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদেও নেতানিয়াহু টলবেন কি না, তা নিয়ে পুরো জাতিই দ্বিধাগ্রস্ত। প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টও সরকারের মধ্যে অন্তর্কোন্দল নিরসনের পক্ষপাতী।

ইসরাইল এখন কয়েক দিকে লড়াই করছে। দক্ষিণে হামাস, উত্তরে হিজবুল্লাহ, পশ্চিমতীরে হামলা ও তেহরানে হামাস নেতাকে হত্যা করা নিয়ে ইরানের প্রতিশোধের হুমকি। মন্ত্রিসভায় নেতানিয়াহুর একচ্ছত্র আধিপত্য নেই। হামাসের প্রতি সামান্যতম নমনীয়তা দেখানো হলে মন্ত্রিসভার কয়েকজন পদত্যাগের হুমকি দিয়ে রেখেছেন। তারা পদত্যাগ করলে মন্ত্রিসভা ভেঙে যেতে পারে। 

রাজনৈতিক দক্ষতা দিয়ে এর আগেও বড় আন্দোলনের মুখেও টিকে গেছেন নেতানিয়াহু। তিনি এবারও হাল ছাড়বেন না বলে অধিকাংশের ধারণা। তবে তিনি কতদিন এভাবে টিকে থাকতে পারেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

সময়ের আলো/আরএস/ 
 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close