সড়কে চার দিন ধরে পড়ে থাকা বিলাসবহুল ‘ল্যান্ড রোভার’ গাড়ি জব্দ করা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা কার্যালয়ের সামনের সড়ক থেকে মঙ্গলবার দুপুরে খুলশী থানার এসআই ইখলাস গাড়িটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসেন। রহস্যময় এই গাড়ির মালিকের হদিস তাৎক্ষণিকভাবে না মিললেও জব্দ করার পরপরই থানায় এক ব্যক্তির ফোন আসে। তিনি পুলিশকে জানান, গাড়িটি তার নিজের। কারিগরিভাবে বিকল হওয়ায় সেখানে তিনি গাড়িটি রেখে গিয়েছিলেন।
পুলিশ সদস্যরা গাড়িটির মালিকানার সপক্ষে কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলেছেন ফোন করা সেই ব্যক্তিকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আবদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি থানায় এসে গাড়িটি ছাড়াতে দেনদরবার শুরু করেন। ওই ব্যক্তি নিজেকে কাতার প্রবাসী দাবি করে বলেন, গাড়িটি তার। পুলিশ তার তথ্য যাচাই-বাছাই করছে।
খুলশী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ নুরুল বাশার সময়ের আলোকে বলেন, ল্যান্ড রোভার গাড়িটি চার দিন ধরে ওয়াসা ভবনের সামনের সড়কে পড়েছিল। এ খবর পেয়ে পুলিশ গাড়িটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। থানায় আনার পরেই এক ব্যক্তি ফোন করে যোগাযোগ করেন। ফোনে তিনি জানান, গাড়িটি তার নিজের। বিকল হওয়ায় ওয়াসার সামনের সড়কে রেখে গিয়েছিলেন।
ওই ব্যক্তি এস আলম গ্রুপের কেউ কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, না। আমাদের কাছে তেমন মনে হয়নি। তবে তিনি থানায় আসার পর তার বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এরপর গাড়িটি হস্তান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
গাড়িটি ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা খুলশী থানার এসআই ইখলাস সময়ের আলোকে বলেন, আবদুর রহমান নামের কাতার প্রবাসী ওই ব্যক্তি গাড়িটি তার বলে জানালেও আমরা তাকে
এখনই সেই গাড়ি প্রদান করছি না। স্থানীয়রা জানান, গত চার দিন ধরে দামপাড়া এলাকার ওয়াসার মোড়ের সড়কে পড়েছিল ওই গাড়ি। বিলাসবহুল ল্যান্ড রোভার গাড়িটি দেখে নানা প্রশ্ন দেখা দেয় অনেকের মনে। পথচারীরা মন্তব্য করেন দামি গাড়িটি কেউ হয়তো ফেলে গেছেন। অনেকে এটি এস আলম গ্রুপের কোনো গাড়ি হতে পারে বলেও সন্দেহ পোষণ করেন। মঙ্গলবার স্থানীয়রা খুলশী থানায় খবর দিলে ক্রেন নিয়ে গাড়িটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এখন থানা কম্পাউন্ডেই রাখা রয়েছে গাড়িটি।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে গাড়িটি ঢাকার গুলশান-২ এর ‘ও অ্যান্ড এম সলিউশন বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের। এটি ঢাকার উত্তরা এলাকার বিআরটিএতে রেজিস্ট্রিকৃত। গাড়িটি সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে বিআরটিএর সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। থানায় মালিক দাবি করা সেই ব্যক্তি আসার পর গাড়ির মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তার দেওয়া তথ্যও যাচাই করা হচ্ছে।
এসআই ইখলাস বলেন, কাগজপত্র ঠিকঠাক না পেলে এই গাড়ির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাড়িটির বর্তমান মূল্য কত হতে পারে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ল্যান্ড রোভার গাড়ির মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণির আছে। তবে এই ল্যান্ড রোভার এত দামি শ্রেণির মনে হয়নি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যের তৈরি বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের বিলাসবহুল গাড়ির অন্যতম ল্যান্ড রোভার। একেকটি গাড়ির দাম শুল্কসহ কোটি টাকারও বেশি। আমদানিকারক ছাড় না করায় চট্টগ্রাম বন্দরে ২০১৬ সালে এই ব্র্যান্ডের কালো রঙের রেঞ্জ রোভার স্পোর্টস ভি-৮ মডেলের একটি গাড়ি বিক্রির জন্য ২০১৬ সালে নিলামে তুলেছিল কাস্টমস। দেশের বাজারে শুল্ককরসহ দাম বেশি হওয়ায় খুব বেশি আমদানি হয় না এ গাড়ি। বিভিন্ন করপোরেট হাউসের পাশাপাশি শতকোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িতরা এসব গাড়ি ব্যবহার করেন।
গত ২৯ আগস্ট গভীর রাতে নগরীর মইজ্জারটেক এলাকার এস আলম গ্রুপের কারখানা থেকে রাতের আঁধারে বের করে নেওয়া হয় ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি। এস আলমের গাড়িকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিস প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বিএনপির হাই কমান্ড পুরো দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক কমিটিই বিলুপ্ত ঘোষণা করে। আর গাড়িকাণ্ডের এ সময়ে বিলাসবহুল একটি গাড়ির নগরীর ব্যস্ততম একটি এলাকায় পড়ে থাকা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।